Home সারাদেশ স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও মেধার বদলে কেন বিশেষ সুবিধা?প্রতিবন্ধী,উপজাতি ছাড়া কি কারো কোটা থাকা উচিৎ?
জুলাই ১৩, ২০২৪

স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও মেধার বদলে কেন বিশেষ সুবিধা?প্রতিবন্ধী,উপজাতি ছাড়া কি কারো কোটা থাকা উচিৎ?

বালী তাইফুর রহমান তূর্য, লেখক ও সমাজকর্মী।
দক্ষিন এশিয়ার মানচিত্রে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর একটি নতুন দেশের জন্য যায়গা করা হয়।নতুন দেশে নতুন সংবিধান এবং নতুন আইন কানুন চালু করা হয়।পাকিস্তান সরকারের বৈষম্যপূর্ণ আচরণ, নিপীড়ন, বঞ্চনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকেই এই মানচিত্রের উত্থান হয়েছিল তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই।
সেই সদ্য স্বাধীন হওয়া দেশের বেকার যুবক যুবতীদের কর্মমুখী করতে কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়।বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সর্বপ্রথম ১৯৭২ সালে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়। সে সময় মেধাতালিকা ২০ শতাংশ বরাদ্দ রেখে, ৪০ শতাংশ জেলাভিত্তিক, ৩০ শতাংশ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য এবং ১০ শতাংশ যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্থ নারীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।
কিন্তু স্বাধীনতার এই দীর্ঘ সময় পরে সেই কোটা পদ্ধতি এখন মেধাবীদেরকে পিছিয়ে দিচ্ছে প্রতিটি ক্ষেত্রে।মূল্যায়ন হচ্ছে না মেধা বা প্রতিভার।এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রাস্ট্র,এবং রাস্ট্রীয় পরিচালনা প্রতিষ্ঠানগুলো, যার প্রভাব পরেছে পুরো নাগরিক সমাজের উপর।বেশি মেধাবীদের বদলে যায়গা পেয়েছে কম মেধাবীরা,যা দেশের অগ্রগতিকে করে দিচ্ছে গতিহীন।
 দেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর পার করেছে।উন্নতি হয়েছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশই পরলোক গমন করেছেন।তাদেরকে জীবদ্দশায় সম্মানি ভাতা দেয়া হয়েছে, যা তাদের মৃত্যুর পরে তাদের স্ত্রীরাও পেয়েছেন।তাদের থাকার জন্য বীর নিবাস করে দেয়া হয়েছে।দেশের সকল সেবায় তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে, যা তাদের জীবদ্দশায় তাদের সম্মানে দেয়া যেতেই পারে।তাদের অধিকাংশ যোদ্ধার সন্তানেরাও এখন প্রাপ্ত বয়স্ক হয়েছেন,কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছেন।এখন এই কোটা সহ বাকি পুরো কোটা পদ্ধতির আকার কমিয়ে আনা প্রয়োজন।কেননা ক্রমঅগ্রসরমান পৃথিবীতে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে লড়াইটা মেধাতেই করতে হবে। মেধার প্রতিযোগিতা ফাকি দিয়ে কেউ যদি বিশেষ সুবিধা নিয়ে কাজ পেতে চায়,হয়তো চাকরি পেতে পারে।কিন্তু মেধার অবমূল্যায়ন অবশ্যই জাতীকে তীলে তীলে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।
মুক্তিযোদ্ধারা ১৯৭১ সালে জীবন বাজি রেখেছেন,প্রানের ভয় না করে সামান্য ৩০৩ রাইফেল আর কাস্তে কোদাল নিয়ে লড়াই করেছেন ট্যাংক,বিমান সমৃদ্ধ পাকিস্তানি সেনা বাহিনীর সাথে।এটি একেবারে সহজ কথা নয়,অত্যন্ত সাহসী এবং বিপ্লবী চেতনা ছাড়া কেউ যুদ্ধে প্রান দেয়ার সাহস করেননি।সেই লড়াকু চেতনার সৈনিকদের রক্তের পরবর্তী প্রজন্ম কেন মেধায় লড়াই করতে ভয় পায়,কেন তাদের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও আলাদা সুবিধার দিকে নজর রয়ে গেছে?বিশ্বের আরও অনেক দেশ যুদ্ধ করে স্বাধীনতা পেয়েছে, সেসব দেশে তো এমন দেখা যায় না।
যেই অবিসংবাদিত নেতার নেতৃত্বে সমরাস্ত্রহীন একটি জাতির যুবকরা যুদ্ধে নেমেছিলো সেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের কেউই কিন্তু কোটার সুবিধা নেয় না।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহেনার সন্তানেরা বিদেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত, তারা পুরো বিশ্বের মেধাবীদের সাথে লড়াই করে পড়ালেখা করেছেন মেধার পরীক্ষা দিয়ে।তারা কেউই বিশেষ সুবিধা নিয়ে চাকরি করছেন না।এছাড়াও সেই পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের প্রায় সকলেই বিদেশে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েছেন,সেখানেও তো তারা কোটার সুবিধা পাননি,লড়েছেন নিজ নিজ মেধায়।সাম্প্রতিক সময়ে শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকী ব্রিটেনে লেবার পার্টির সাংসদ হয়েছেন চতুর্থবার,হয়েছেন সেই দেশের সরকারের নগর বিষয়ক মন্ত্রী।তিনিও কোটায় লড়েননি,মেধায় লড়েছেন বিশ্বের বাঘা বাঘা রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে।
এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সাত জন বীর শ্রেষ্ঠ পরিবারের কাউকে তো কোটার পক্ষে বলতে দেখা যায় না,জিবীত বীর বিক্রম,বীর উত্তমদের দেখা যায় না,এম এ জি ওসমানীর স্বজনদেরকে দেখা যায় না,ড কর্নেল ওলি আহমদ,বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তম,খেতাবপ্রাপ্ত সাব সেক্টর কমান্ডার ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরের প্রজন্মকেও দেখা যায় না।
অথবা যুদ্ধকালীন সেক্টর কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমানের পরিবারও তো কোটা সুবিধা নেয় না।জিয়াউর রহমানের দুই ছেলের যে সন্তানেরা রয়েছেন তারাও বিদেশে পড়ালেখা করেছেন মেধার প্রতিযোগিতায়,কোটা সুবিধা নিয়ে নয়।
তাহলে কেন দেশের সাধারণ মানুষের সন্তানদের মেধাশূন্য করতে কোটা পদ্ধতি এখনো চালু রাখা হয়েছে?কেন এর সংস্কার করা হচ্ছে না?
অন্যতম একটি কোটা পোষ্য কোটা।অর্থাৎ পিতা চাকরি করলে সন্তান বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত হবেন।এটি স্বাধীনতার পরে হয়তো কিছুদিন পর্যন্ত প্রয়োজন ছিলো।এখন আর নেই।কেননা পোষ্য কোটা কিভাবে একটা গনতান্ত্রিক দেশে থাকতে পারে। এটা তো রাজতন্ত্রের সংস্কৃতি, বাপের পেশা ছেলে পাবে।এটা এখনো কিভাবে চলবে?এটিকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করতে হবে। বাপের মেধা ছিলো,তাই বলে সন্তানের তো সেই মেধা নাও থাকতে পারে।
নারী কোটাও এখন আর প্রয়োজন পরে না।সমান অধিকারের দেশে নারীদের জন্য এক সময় আলাদা কোটা লাগলেও এখন আর তার প্রয়োজন নেই। কেননা এখন নারীরাই কোটা চাননা।এক সময় দেশে একটা প্রচলন ছিলো, মানুষ মেয়েদেরকে স্কুলে পাঠাতে চাইতো না।তখন সরকার মেয়েদের পড়ালেখা ফ্রি করে দিয়েছিলো,উপবৃত্তি দিতো যাতে বাবা মা মেয়েকে পড়াতে বাড়তি চাপ অনুভব না করে।তখন চাকরিতেও বৈষম্য দূর করতে কোটা চালু করা হয়।কিন্তু এখন মাঠ প্রশাসন থেকে হাসপাতাল বা সরকারি সকল দপ্তরে নারীদের অবাধ কর্মসংস্থান হচ্ছে।এবং সেটি মেধার দ্বারাই হচ্ছে।তাই এখন আর নারীদের আলাদা কোটার দরকার নেই।জাতীয় সংসদে ৫০ টি সংরক্ষিত নারী আসন রাখা আছে যা নারীর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে হলেও আসলে এই সাংসদরা কি ভুমিকা পালন করেন?এখন তো সরাসরি ভোটেই নারীরা সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন,বিজয়ী হচ্ছেন।তাহলে কেন নারীদের আলাদা কোটার প্রয়োজন হবে, এখন তারা সমাজে আর পিছিয়ে নেই।তাই নারী কোটারও প্রয়োজন নেই।
উপজাতি বা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীকে মূল ধারায় ফেরাতে কোটা রাখা হয়েছে।যেহেতু পাহাড়ি অঞ্চলগুলি সমতল অঞ্চলের থেকে অধিক দুর্গম তাই তাদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়াতে চাকরি এবং শিক্ষায় কোটা রাখা হয়েছে।এটিকেও কিছুটা কমিয়ে সমন্বয় করা উচিৎ, কেননা এখন সেই অঞ্চলেরও ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
প্রতিবন্ধীদের জন্য কিছু কোটা থাকা উচিৎ, তাই এটি থাকতে পারে।কেননা তারা শারিরীকভাবেই কিছুটা পিছিয়ে থাকে,সমাজে যাতে তারা বোঝা হয়ে না থাকে তাই তাদেরকে কোটা দেয়া যেতে পারে।এ নিয়ে কারোই মোটামুটি আপত্তি নেই।
কিন্তু বাকি প্রতিটি কোটা বিলুপ্ত বা সংস্কার করা উচিৎ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *