ট্রেন্ডিংয়ে আবেদ আলী, ধর্মচর্চা নিয়ে ট্রল
পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলীকে নিয়ে পুরো দেশেজুড়ে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া এই গাড়িচালক রীতিমত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল।
বিশেষ করে ফেসবুকে বিভিন্ন সময় তার নামাজের ছবি, মানবিক গল্প ও সততার বাণী দেওয়ার পোস্টগুলো নিয়ে নেটিজেনরা ট্রল করছেন। একজন গাড়িচালক হয়েও আবেদ আলী ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামের বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে প্রশ্ন তুলে নেটিজেনরা পোস্ট করছেন, শেয়ার করছেন বিভিন্ন স্ট্যাটাস।
সবার কাছে এখন স্পষ্ট, অসৎ ও অসাধু পথ অবলম্বন করেই অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন এই গাড়িচালক। নূরানী লেবাসে অসৎ এই ব্যক্তিকে নিয়ে ধিক্কারে ফেটে পড়ছে নেটদুনিয়া। বিভিন্ন সময় তোলা আবেদ আলীর ছবিগুলো ঘুরে বেড়াচ্ছে নেটিজেনদের টাইমলাইনে।
আবেদ আলীকে ট্রল করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী লিখেন, আবেদ আলী শায়েখ, উঠুন…আপনাকে বিসিএসের প্রশ্ন ড্রপ করতে হবে। আরেকজন নামাজরত আবেদ আলীর ছবি পোষ্ট করে লিখেন, কাকা ওঠেন…আপনি ভাইরাল।
এদিকে সাধারণ নেটিজেনদের পাশাপাশি আবেদ আলীকে নিয়ে পোস্ট করতে দেখা গেছে তারকাদেরও। তাদেরই একজন অভিনেত্রী সোহানা সাবা। ফেসবুকে আবেদ আলীর নামাজরত একটি ছবি শেয়ার করে এই অভিনেত্রী লিখেছেন, যারা দেখিয়ে দেখিয়ে ধর্মচর্চার নামে বাড়াবাড়ি করে, পাশে মসজিদ কিংবা নামাজের স্থান রেখে রাস্তায়, খেলার মাঠে, সমুদ্র তটে নামাজ পড়ে ছবি দেয় সোশাল মিডিয়ায়, তাদের মাঝে আমি কোনো ভালো মানুষ দেখি না। সবগুলোই বাটপার।
অভিনেত্রী আরও লেখেন, যারা শুক্রবার ‘জুম্মা মুবারক’ বলে ফেসবুকে পোস্ট দেয়, আর যারা নিজের আমলনামা বাদ দিয়ে অন্যদের পোস্টে কমেন্ট করে -পরকালে দোজখে যাবে! আর দান খয়রাতের ছবি-হিসাব প্রচার করে মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেগুলোকেও আমার একই ভণ্ড মনে হয়।
শিল্পী লুৎফর হাসান এই গাড়িচালকের গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে সিজদারত একটি ছবিসহ পোস্ট শেয়ার করে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
কিছু প্রশ্ন ছুঁড়ে তিনি লিখেছেন, ‘শুনেছি তিনি অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। সরকারি অফিসারের ড্রাইভার হয়ে কেন এত টাকা, এ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। কারও টাকা থাকতেই পারে। সেসব নিয়ে কথা যারা বলার বলবেন।
আমার কথা হচ্ছে, নামাজ পড়লে সেটা তার অজান্তে তার ছেলে কীভাবে তুলল? আবার অজান্তে তুলে ফেলার পর সেই ছবি তিনি অজান্তে কীভাবে ফেসবুকে পোস্ট দিলেন? এই দেশে এত আলৌকিক ঘটনা কীভাবে ঘটে? কেন ঘটে? আমরা এইসব অলৌকিকতার ধারেকাছে যেতে পারি না কেন? কেন আমরা গড়পড়তার জীবন কাটাই? কেন? কেন? কেন?’
একটি ছবিতে দেখা যায় কুয়াকাটায় সৈয়দ আবেদ আলী। গত ১৯ মে তার ছেলে সিয়াম ছবিটি শেয়ার করে লেখেন, ‘আব্বু কুয়াকাটা গিয়েছিল একটা ব্যবসায়িক সফরে, সেখানে স্থানীয় এক ছোট ভাই ছবিটি তুলে ইনবক্সে দিলো।
সাধারণত আব্বু কোনো ওয়াক্তের নামাজ অবহেলা করে না, যখন যেখানে থাকে তখন সেখানেই পাক-পবিত্র জায়গা খুঁজে নামাজ আদায় করে নেয়। খুব সম্ভবত সৃষ্টিকর্তার প্রতি গভীর ভালোবাসা না থাকলে এটা সম্ভব নয়। আল্লাহ আমার বাবাকে কবুল করুক।’
অপরদিকে গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে সৈয়দ আবেদ আলীর ছবিটি তিনি নিজেই গত ২ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন।
আরেকটি ছবি তোলা হয় প্লেনে। ৩১ মে’র আরেকটি ছবিতে সৈয়দ আবেদ আলীকে একই পোশাকে ছেলের সঙ্গে দেখা যায়। এতে ধারণা করা হচ্ছে, ছবিটি তুলেছেন সিয়াম নিজেই।
মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার বাসিন্দা আবেদ আলী। প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য সামনে আসার পরই তার বিপুল সম্পদের তথ্য বেরিয়ে আসছে। ছেলে ছাত্রলীগ নেতা, পড়েছেন বিদেশে, এরপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকার ভেতর তার দুটি বহুতল ভবন, মাদারীপুরে আলিশান বাড়ি রয়েছে এমন তথ্যও সামনে এসেছে।
সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন আবেদ আলী। আবেদ আলী সমাজের বিত্তবান ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়মিত চলাফেরা করতেন। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গেও উঠবস করতেন।
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) পরীক্ষাসহ বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে আবেদ আলী ও দুই পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মঙ্গলবার (৯ জুলাই) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন আবেদ আলীসহ ৭ জন। এ সময় আদালত আবেদ আলীর ছেলেসহ মামলার ১০ আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।