নলছিটিতে এক দিকে নদীর তীব্র ভাঙন,অন্যদিকে রাতের আধারে বালু উত্তোলনের মহোৎসব।
বালী তাইফুর রহমান তূর্য, নলছিটি(ঝালকাঠি)প্রতিনিধি:
একদিকে নদীর তীরে তীব্র ভাঙনে নি:স্ব নদী তীরের হাজার হাজার মানুষ অন্যদিকে রাতের আধারে চলছে অবৈধ বালু উত্তোলনের মহোৎসব। রাতের আধারে চলছে বালু উত্তোলন ফলে ভাঙছে নদী, আতংকে দিন কাটাচ্ছেন নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী বাসিন্দারা।
ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা ও বিষখালি নদী থেকে অবৈধভাবে ড্রেজার দিয়ে রাতের আধারে অব্যাহতভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব চলছে। দুই নদীর বিভিন্ন তীরে রাত হলেই ডজন ডজন ড্রেজার দিয়ে চলছে অবাধে বালু উত্তোলন। যার ফলে নদী ভাঙ্গন তীব্র হচ্ছে। গিলে খাচ্ছে ফসলী জমি আর মানুষের বসতবাড়ি। নদীর তীরবর্তী মানুষরা ভাঙ্গন আতংকে দিন পার করছেন।
জানা গেছে, নলছিটি পৌর এলাকার অনুরাগ সংলগ্ন সুগন্ধা নদী থেকে দীর্ঘদিন ধরে রাতের আধারে বালু উত্তোলন চলছে।
রাত দশটা থেকে ভোর রাত চারটা পর্যন্ত চলে এই বালু উত্তোলন ফলে এই এলাকায় নদী ভাঙ্গন তীব্র হচ্ছে। অপরদিকে উপজেলার রানাপাশা ইউনিয়নের চরইসলামাবাদ সংলগ্ন বিষখালি নদী থেকে সন্ধ্যা হলেই ড্রেজার দিয়ে বালু উত্তোলন চলে। আবার রাত পোহাবার আগেই তারা চলে যায়। এ যেন ‘মরার উপর ফোড়ার ঘা, এমনিতেই এইসব এলাকায় বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙন প্রবল আকার ধারন করে তার উপর অবাধে বালু কাটার ফলে ভাঙ্গন আরও তীব্র হয়। রানাপাশার চরইসলামাবাদ এলাকায়ই তৈরি করা হয়েছে মুজিব কেল্লা, বালু উত্তোলনের ফলে হুমকির মুখে পরতে পারে সরকারী এই স্থাপনা।
স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইদুল ইসলাম মন্টু জানান, দীর্ঘদিন ধরেই পাশের উপজেলার একটি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় একটি চক্র নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। সন্ধা হলেই সাত থেকে আটটি ড্রেজার দিয়ে দেদারসে বালু উত্তোলন চলে। তাই এখন বিষখালি নদী সংলগ্ন চর এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের ঘরবাড়ী ফসলি জমি নদীতে বিলিন হয়ে যাওয়ার শংকা করছেন। বালু উত্তোলনের ফলে নদীর দুই তীরে ভাঙ্গনের তীব্রতা আংশকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও জানান, এর প্রতিকার চেয়ে গত এপ্রিল মাসের ২৪তারিখ স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে নিয়ে একটি অভিযোগ লিখিতভাবে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী বরাবরে দাখিল করেছিলাম। তবে লিখিত অভিযোগ করার পরেও বালু উত্তোলন থামে নি।
পৌর এলাকার বাসিন্দা ইশরাক মাহমুদ জানান, আমাদের অনুরাগ গ্রামের শতশত পরিবার তাদের ঘরবাড়ি নদীতে হারিয়ে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আমরাও একাধিক বার বাড়ি হারিয়ে নতুন বাড়ি তৈরি করেছি। এখন নদী থেকে আমাদের ঘরের দুরত্ব সামান্য কয়েক মিটার। বিগত সময়ে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা কম হলেও নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে ভাঙ্গন আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। রাত হলেই এক ডজন ড্রেজার নদীর দুই পাশ থেকে বালু উত্তোলন করে। আবার রাত পোহাবার আগেই সটকে পরে। এনিয়ে স্থানীয়রা প্রতিবাদ করলেও তাতে তারা কর্নপাত করে না। আমাদের গ্রামে এরকম শতশত ভুক্তভোগী আছে যারা একাধিক বার নদীতে তাদের বাড়িঘর বিলীন হতে দেখেছেন আবার অনেকে ভীটে মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে সরকারি আশ্রয় প্রকল্পের ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন। তাই আমরা প্রশাসনের কাছে নদী থেকে ড্রেজারে দিয়ে বালু উত্তোলন বন্ধ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, নদী থেকে অবৈধ ভাবে ড্রেজার দিয়ে বালু তোলার কোন সুযোগ নাই। এরকম যদি হয়ে থাকে তাহলে আমরা খুব শীঘ্রই বালু উত্তোলন কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।