ইসলামে এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ দানের দৃষ্টান্ত
কোনো মানুষ মারা গেলে শরিয়তের নির্দেশ হলো মৃত ব্যক্তির সম্পদ থেকে তাঁর কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা। জানাজা ও দাফনের পর প্রথম কাজ হলো মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে তাঁর ঋণ পরিশোধ করা। তারপর যে অসিয়ত করে গেছেন, তা পূর্ণ করা। তবে মৃত ব্যক্তি যদি এক-তৃতীয়াংশের চেয়ে বেশি সম্পদের অসিয়ত করে থাকেন, তাহলে তার পুরো সম্পদ দিয়ে নয়, বরং সম্পদের এক-তৃতীয়াংশ থেকে অসিয়ত পূরণ করবে।
মৃত ব্যক্তির পরিত্যাজ্য সম্পত্তির দ্বারা ঋণ ও অসিয়ত পূরণ করার পর অবশিষ্ট সম্পদ শরিয়ত নির্দেশিত পন্থায় বণ্টন করবে। শরিয়তে এক-তৃতীয়াংশ সম্পদ আল্লাহর ওয়াস্তে দান করা বা দানের অসিয়ত করার অনুপম নজির আছে। সাদ (রা.)-এর তিন পুত্র তাঁদের পিতার থেকে বর্ণনা করেন, মক্কায় নবী (সা.) অসুস্থ সাদ (রা.)-কে দেখার জন্য তাঁর কাছে আসেন। সাদ (রা.) কেঁদে ফেলেন।
নবী (সা.) বললেন, তুমি কেন কাঁদছ? তিনি বলেন, আমি ভয় পাচ্ছি, যে স্থান থেকে হিজরত করেছি, সেথায় না আমি মারা যাই; যেভাবে মারা গেছেন সাদ ইবনে খাওলা (রা.)। নবী (সা.) বলেন, হে আল্লাহ! সাদকে সুস্থতা দান করুন। তিনি তিনবার এ দোয়া করেন। সাদ (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার প্রচুর সম্পদ আছে।
আর একমাত্র কন্যাই আমার উত্তরাধিকার হবে। তবে কি আমার সমুদয় সম্পদ অসিয়ত করতে পারি? তিনি বলেন, না। সাদ (রা.) বলেন, তবে কি দুই-তৃতীয়াংশ? তিনি বলেন, না। সাদ (রা.) বলেন, তাহলে অর্ধেক? তিনি বলেন, না। সাদ বলেন, তাহলে এক-তৃতীয়াংশ? তিনি বলেন, হ্যাঁ, এক-তৃতীয়াংশ।
আর এক-তৃতীয়াংশও অনেক। তোমার সম্পদ থেকে তুমি যা সদকা করো, তা তো সদকাই এবং তোমার পরিবারের জন্য যা খরচ করো, তাও সদকা আর তোমার সম্পদ থেকে তোমার স্ত্রী যা খায় তাও সদকা। তোমার পরিবার-পরিজনকে যদি তুমি সম্পদশালী রেখে যাও, অথবা বলেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে রেখে যাও, তবে তা তাদের মানুষের কাছে হাতপাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে উত্তম। আর এ কথা বলতে তিনি নিজ হাত দিয়ে ইশারা করেন। (মুসলিম, হাদিস : ৪১০৭)
সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে এর পর থেকে এক-তৃতীয়াংশ পরিমাণ সম্পদ অসিয়ত করার প্রবণতা দেখা যায়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হায়! লোকজন যদি এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে এক-চতুর্থাংশ করত। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, এক-তৃতীয়াংশ এবং এক-তৃতীয়াংশই বেশি। (মুসলিম, হাদিস : ৪১১০)
কাজেই বিত্তবানরা সুখ সহজেই এক-তৃতীয়াংশ বা এক-চতুর্থাংশ সম্পদ দান করে ইসলামের এই বিধানের ওপর আমল করতে পারেন। মহান আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।