‘গুম’ হওয়াদের ফিরিয়ে দিতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চায় বিএনপি
‘গুম’ হওয়া নেতাকর্মীদের ফিরিয়ে দিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হস্তক্ষেপ দাবি করেছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে আহ্বান জানাচ্ছি- যেন অবিলম্বে বাংলাদেশ সরকারকে গুমের ঘটনা বন্ধ করতে নির্দেশনা দেয়। একই সঙ্গে গুমের শিকার সবার ভাগ্য ও অবস্থান সম্পর্কে তাদের পরিবারকে তথ্য দেয় ও ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করে।’ ভুক্তভোগী বা তাদের পরিবারকে আইনি ও নৈতিক সহায়তার উদ্যোগ নেওয়া এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের উত্থাপিত অভিযোগ নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটি শুনানির আয়োজন করা প্রয়োজন বলেও মনে করেন বিএনপি মহাসচিব। রোববার গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ উপলক্ষ্যে এক বাণীতে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ভিন্ন মতাবলম্বী ব্যক্তিদের গুম ও বিচার বহির্ভূত হত্যার অমানবিক কর্মসূচি চালিয়ে ডামি আওয়ামী সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় টিকে আছে। গণবিচ্ছিন্ন সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষের জীবনের নিরাপত্তা চরম সংকটাপন্ন। দেশের মানুষকে বাকরুদ্ধ করার জন্য একের পর এক কালো আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। সেজন্য জোরপূর্বক গুমকে অস্ত্র হিসাবে বেছে নিয়ে সরকার দেশকে এক ভীতিকর জনপদে পরিণত করেছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরের ন্যায় এবছরও মে মাসের শেষ সপ্তাহে পালিত হচ্ছে গুম হয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের স্মরণে আন্তর্জাতিক সপ্তাহ। একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার হিসাব অনুযায়ী ২০০৯ থেকে ২০২৪ এর মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে প্রায় ৬৬৬ জন গুম হয়েছেন। তাদের মধ্যে কাউকে মৃত, কাউকে অনেকদিন পর গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আবার অনেকের কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি’। অবিলম্বে এম ইলিয়াস আলী, সাইফুল ইসলাম হিরু, চৌধুরী আলম, হুমায়ুন পারভেজ, সাজেদুল ইসলাম সুমন, জাকিরসহ গুম হওয়া নেতাকর্মীকে ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একচ্ছত্র ক্ষমতা ধরে রাখতে ডামি সরকার গুমের মতো মনুষ্যত্বহীন পন্থায় বিরোধী শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার সর্বাধিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গভীর শঙ্কা, ভয় ও শিহরণের মধ্যে বাস করছে জনগণ। গুম মানবসভ্যতার পরিপন্থি। বিশ্বব্যাপী একদলীয় কর্তৃত্ববাদী সরকার নিজেদের পথের কাঁটা সরানোর জন্য গুমকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। কাউকে গুম করে দেওয়া মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসাবে আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃতি পায়’।
তিনি বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলের যেসব নেতাকর্মী গুম হয়েছেন তাদের বাপ-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদের কান্নায় আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে গুমের বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রবল প্রতিবাদী হলেও আওয়ামী সরকার কোনো কিছুকেই তোয়াক্কা করছে না। একদিকে সমাজ ও রাজনীতিতে মাফিয়াদের উত্থান, অন্যদিকে গণতন্ত্রকামী মানুষ জোরপূর্বক গুমের আতঙ্কে দিনরাত উদ্বিগ্ন থাকছে। সবার চোখের সামনে থেকে ব্যক্তিকে তুলে নিয়ে গুম করা হলেও আওয়ামী লীগ সরকার বরাবরই গুমের বিষয়টি আন্তর্জাতিক ফোরামে নির্লজ্জের মতো অস্বীকার করে আসছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বর্তমান শাসনব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। একমাত্র সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক সরকারের পক্ষেই সম্ভব সব মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কারণ নির্বাচিত সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়।