বাবা হারানোর দুই যুগ পেরিয়েও, “বাবা” কখনো বলা হলো না কতটা ভালোবাসি তোমায়।
“তাইফুর রহমান, লেখক ও সমাজকর্মী :
বাবা” দুটো বর্নের একটি শব্দ হলেও এর ছায়া বিস্তৃত হয় পুরো দুনিয়া জুড়ে। “বাবা” একটি বটবৃক্ষ, যা ক্লান্ত শ্রান্ত বিপর্যস্ত পুরুষের জীবনেও এক প্রশান্তির ছায়া।যার বাবা আছে তার হয়তো অনেক অভিযোগ বাবার উপর।আর যার বাবা নেই তার কাছে বাবা মানে এক সাগর প্রশান্তি আর ভরসার যায়গা।
অনেক কাব্য লেখা আছে মায়েদের নামে,খুব কম লেখাই পাওয়া যায় একজন ঘাম ঝরানো বাবাদের নামে।জেমসের বাবা কতদিন কতদিন দেখি না তোমায় গানটি এই দেশে শোনেনি এমন লোক খুজে পাওয়া যায় না।ছোট্ট এক গানেই যেন কত হাজারো না বলা গল্প রয়ে গেছে সুরে সুরে।
সকাল থেকে রাত অব্দি অক্লান্ত খেটে যাওয়া এক শ্রমিকের নাম বাবা,প্রতি ঈদেই পুরনো একটি জামায় কাটিয়ে দেয়া সুপারম্যানের নাম বাবা।শৈশবের সব আবদার মেটানোর এক আলাদিনের যাদুর চেরাগ বাবা,প্রচন্ড রোদ বৃষ্টি বা ঝড়েও নিরাপদ এক আশ্রয়ের নাম বাবা।শত সহস্র অপ্রাপ্তির অভিযোগ শুনেও হজম করে ফেলা ব্যক্তিটিই বাবা।শৈশবে বাবা হারানো এক শিশু দুই যুগ পরে যখন তার বাবার স্মৃতিচারন করতে গিয়ে বাবার চেহারাটাও ঠিকঠাক মনে করতে পারছিলেন না,তখন নিজের শিশু সন্তানের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে নিশ্চুপ হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। হয়তো ভিতরটা চুরমার হয়ে বুক ফেটে চোখে অশ্রু টলটল করছিলো।
প্রতিষ্ঠিত হবার যুদ্ধে প্রতি ধাপে ক্ষত বিক্ষত রক্তাক্ত হয়ে মনে হয় যদি আজ বাবা থাকতো তবে বুঝি এতটা কস্ট আর হতো না। বাবা মানেই নিশ্চিন্ত থাকার একটা আশ্রয় যা থাকা অবস্থায় বোঝা যায় না।
শোনাচ্ছিলেন বাবা না থাকায় কতটা রোদ,ঝড়েও কোনোমতে টিকে আছেন এই যুদ্ধে।মাত্র চার বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে আজ পার করছেন দুই যুগ। বাবা নেই বুঝতেও তার মাধ্যমিক পেরিয়ে গেছে।কলেজের বন্ধুদের বাবাদের শাসন দেখে মনে হয়েছে বাবারা বুঝি এমন হয়।কখনো কাছে ডেকে নিয়ে জরিয়ে ধরে চুমু খাওয়া দেখে মনে হয়েছে হয়তো বাবারা এমন হয়।কখনো সন্ধ্যার পরের আড্ডা থেকে বাবার ভয়ে বন্ধুদের চলে যাওয়া দেখে মনে হয় বাবারা বুঝি এমন হয়।
বাবাকে নিয়ে লিখতে গেলে গলা ভাড় হয়ে যায়, কলমও চলে না,এক শব্দের পরে দ্বিতীয় শব্দ লেখার শক্তি থাকে না।এটাই বুঝি বাবাকে কখনো না বলা সেই বাক্যের বহিঃপ্রকাশ,বলা হলো না কোনোদিন বাবা কতটা ভালোবাসি তোমায়।কোনোদিন জিজ্ঞেস করা হলো না বাবা নতুন একটা জামা লাগবে কিনা,বলা হলো না বাবা নতুন একটা জুতা কিনে দেব কিনা।কত কথাই তো বাবাকে আর বলা হলো না।
ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবারা।আল্লাহ সকল পিতাদের ক্ষমা করে দিক সেই দোয়া।