Home জাতীয় সুন্দরবনে পরিকল্পিতভাবে বারবার আগুন লাগানো হচ্ছে: বাপা
মে ২২, ২০২৪

সুন্দরবনে পরিকল্পিতভাবে বারবার আগুন লাগানো হচ্ছে: বাপা

‘বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্ৰোভ বনাঞ্চল সুন্দরবনে পরিকল্পিতভাবে বারবার আগুন লাগানো হচ্ছে। ক্ষমতাসীনদের কাছে সুন্দরবন গুরুত্বহীন। এ ছাড়া গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারেও নির্বিচারে বন উজাড় করা হচ্ছে। তাই বন রক্ষায় জনগণকে সম্পৃক্ত করে জাতীয় কমিটি গঠন করা প্রয়োজন।’

বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর রুনি মিলনায়তনে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত ‘বারংবার আগুন সন্ত্রাসের কবলে সুন্দরবন : কারণ ও প্রতিকার’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বক্তারা।

বাপার যুগ্ম সম্পাদক নূর আলম শেখ বলেন, ‘ক্ষমতাসীনদের কাছে সুন্দরবন গুরুত্বহীন। বারবার যে আগুন লাগছে তা পরিকল্পিত। আগুন লাগার সঙ্গে বনবিভাগের কর্মকর্তারা জড়িত এ দায়ভার বনবিভাগকে নিতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা মানবসৃষ্ট এবং পরিকল্পিত। বারবার সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ফলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। বড়গাছসহ লতাগুলো মারা যাচ্ছে। প্রাণীকূলের আবাসস্থল ও প্রজননস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এতে বনের শৃঙ্খলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অগ্নিকাণ্ডে বন্যপ্রাণীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনায় বনবিভাগ কোনোভাবেই দায় এড়াতে পারে না। সুন্দরবন সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলেও আমুরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি অঞ্চলে শিকারিসহ মানুষের অবাধ যাতায়াত রয়েছে। গণমাধ্যমে এসেছে, গত ২৪ বছরে সুন্দরবনে ২৫-২৬ বার আগুন লেগেছে; সরকারি হিসাবে প্রায় শতাধিক একর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ী ও অসৎ বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বারবার সুন্দরবনে আগুন লাগানো হচ্ছে। সুতরাং এর দায়ভার বনবিভাগকেই নিতে হবে।’

অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘সুন্দরবন রক্ষায় আমরা ব্যর্থ। পানি, বায়ু, শব্দ দূষণ দিয়ে সুন্দরবনের পরিবেশ নষ্ট করার সব ধরনের প্রচেষ্টা চলছে। সুন্দরবনে ভালো কিছু বা গবেষণার অনুমোদন পেতে প্রতি পদে বাধাগ্রস্ত হতে হয়। কিন্তু সেখানে দুষ্কৃতকারীদের পথ সুগম। সুন্দরবন মূলত সংরক্ষিত বনাঞ্চল হলেও সুন্দরবন রক্ষায় কোনো উদ্যোগ নেই।’

সম্মেলনে সুন্দরবন রক্ষায় ও সুন্দরবনের অগ্নিকাণ্ড বন্ধে ১৫টি সুপারিশমালা তুলে ধরা হয়। সুপারিশগুলো হলো- অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে ও অগ্নিকাণ্ড বন্ধে বনবিভাগ, কোস্ট গার্ড, নৌবাহিনী, নৌপুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ, সুন্দরবন বিশেষজ্ঞ ও গবেষক, সংবাদকর্মী, জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় সংগঠনের নেতাদের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। অগ্নিকাণ্ডে বিগত দিনের গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে হবে।

সুন্দরবনের লোকালয় সংলগ্ন এলাকায় ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা। বনের মধ্যে অবাধ যাতায়াত বন্ধ করতে হবে। সুন্দরবন রক্ষায় স্থানীয় জনগোষ্ঠিকে সচেতন করতে হবে।  এ ছাড়া সুন্দরবনের মধ্যে অপরিকল্পিত খাল খনন বন্ধ করতে হবে। বনবিভাগ কর্তৃক মৌয়ালদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করতে হবে। সুন্দরবন রক্ষায় অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করতে হবে। আইনের আওতায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধীদের গ্রেফতার করতে হবে। সুন্দরবন রক্ষায় নীতিনির্ধারকদের গুরুত্ব দিতে হবে।

ড্রোন ক্যামেরা, সিসি ক্যামেরাসহ সুন্দরবন রক্ষায় বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। সুন্দরবনের পরিধিতে দ্রুত শিল্পায়ন বাড়ানো উচিত নয়।
সুন্দরবনের উদ্ভিদ ও প্রাণীর টেকসই সংরক্ষণ এবং ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি খুঁজে বের করার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

বাপার সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মাদ তালুকদারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন- জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আব্দুল কাদের, বাপার কোষাধ্যক্ষ ও নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, বাপার সহ-সভাপতি মহিদুল হক খান প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *