চট্টগ্রামে থাকতেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ। তাতে মিরপুরে গড়ানো শেষ দুটি ম্যাচে টাইগারদের সামনে সুযোগ পরীক্ষানিরীক্ষার। গতকাল মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচে সেটি করতেও চেষ্টা করেছেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ব্যাটিং ইনিংসে সেই চেষ্টায় লেজে-গোবরে অবস্থা হয়েছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের। শুরুতে ব্যাটিংয়ে নেমে ১১ ওভারে দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও সৌম্য সরকারের ব্যাটে শতরানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। তাতে দলীয় সংগ্রহ দুইশ রানের কাছাকাছি কিংবা সেটিও পার করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে উলটো। নির্ধারিত ২০ ওভারই শেষ করতে পারেননি শান্তরা। বাংলাদেশের তিন ব্যাটার বাদে বাকি কেউই দুই অঙ্কের রান ছুঁতে পারেননি। এই সিরিজ নিয়ে চলছে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা। আসছে জুনে বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে খেলতে পারবে না জিম্বাবুয়ে। সেই দলের বিপক্ষে খেলা নিয়ে বিসিবির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি নয়, এফটিপির কারণেই খেলতে হচ্ছে এই সিরিজ।
গেল ২ মে বাংলাদেশের অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছিলেন, ‘টি-টোয়েন্টিতে বড় দল, ছোট দল নেই। জিম্বাবুয়ে উগান্ডার বিপক্ষে হেরেছে। আবার এই জিম্বাবুয়ে কিছু দিন আগে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে। ঐভাবে চিন্তা করলে আমার কাছে খুব বেশি পার্থক্য মনে হয় না। গুরুত্বপূর্ণ হলো ম্যাচটা আমরা কীভাবে খেলছি, কীভাবে প্রস্তুত হচ্ছি, নিজেদের আত্মবিশ্বাস কীভাবে গড়ে তুলছি। এতটুকু বলতে পারি, সিরিজটা এত সহজ হবে না। অনেক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ সিরিজই হবে। কারণ, তারাও অনেক ভালো দল।’ কিন্তু ব্যাটে-বলে কিংবা ফিল্ডিংয়ে জিম্বাবুয়েকে ভালো বলা যাবে কি না, সেটি নিয়ে তৈরি হয় বড় প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তরটাই হয়তো সহজ করার চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ। ৭ বলে কেবল ২ রান করে অধিনায়ক শান্তর বিদায়। দীর্ঘদিন পরে টি-টোয়েন্টিতে দেশের জার্সিতে মাঠে নেমে সাকিব আল হাসান করলেন ৩ বলে ১ রান। এরপরে জাকের আলী অনিক, রিশাদ হোসেনারও সেই একই পথ অনুসরণ করেছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছিল, সবাই মিলে জিম্বাবুয়েকে বড় দল বানানোর চেষ্টাই করছেন।
এ দিকে বাংলাদেশের এমন ব্যাটিং ধস আরো শঙ্কা তৈরি করেছে ভক্তদের মনে। ভারত বিশ্বকাপে টাইগার বাহিনীর ভরাডুবি সবার হূদয়ে এখনো জলজ্যান্ত। ক্রিকেটপাগল বাঙালির সেই ব্যর্থতার কথা এত সহজে ভুলে যাওয়ার কথা নয়। এবার আরো একটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট দিচ্ছে হাতছানি। তার আগে ব্যাটিং নিয়ে এখনো শক্ত অবস্থান দেখা যায়নি শান্তদের। জিম্বাবুয়ের মতো দলের বিপক্ষেও বড় রানের দেখা না পাওয়া বাংলাদেশ বিশ্বকাপ মঞ্চে কতটুকু লড়াই করতে পারবে তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। সে সব প্রশ্নের উত্তর কেমন হতে পারে, সেটি এই সিরিজ দেখে আঁচ করারও উপায় নেই।
গত পরশু অনুশীলন শেষে পেসার তাসকিন আহমেদ বলেছিলেন, ‘আসলে যত কথাই হচ্ছে জিম্বাবুয়েকে নিয়ে, আবার আমরা যদি একটা ম্যাচ হেরে যাই, তাহলে কিন্তু অন্য রকম কথা হবে যে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হেরে গেছি। ছোট দলের বিপক্ষে জিতলে কৃতিত্বটা কম পাই।’ এই দিক থেকে সিরিজটিতে মান বাঁচানোর লড়াইয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু সেখানেও ব্যাটিংয়ে কোনো ইতিবাচক বিষয় ধরা পড়েনি। গতকাল দর্শকভর্তি মাঠে তানজিদ তামিমের ৩৭ বলে ৫২ রানের ও সৌম্যর ৩৪ বলে ৪১ রানের ইনিংস বেশ বিনোদন ছড়িয়েছে। তবে বাকিরা সেখানে হতাশা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেননি। ৮ বলে ১২ রান করে আগের ম্যাচগুলোতে আলো ছড়ানো তাওহীদ হূদয় ফিরেছেন মাথা নিচু করে। তারপরে আর কেউই ৬ রানের বেশি ব্যক্তিগত সংগ্রহ করতে পারেননি। ম্যাচটিতে কেবল ব্যাট নয়, ফিল্ডিংয়েও হতাশ করেছেন লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। হূদয়-রিশাদরা যেভাবে ক্যাচ মিসের মহড়া চালিয়েছেন তাতে ভেতরের নগ্ন চিত্র যেন একবারে উন্মুক্ত হয়ে উঠেছিল।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়াকে নাস্তানাবুদ করেছিল বাংলাদেশ। ভারতে গিয়ে সেই অজিরাই জিতেছিল বিশ্বকাপ। তাতে বড় দলকে হারিয়ে বড় কৃতিত্ব নিয়েও টাইগাররা প্রমাণ করতে পারেননি নিজেদের। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হামাগুড়ি দিয়ে চলা টাইগারদের রথ কোন ব্যুহে আটাকাবে, সেটিও আন্দাজ করা যাচ্ছে না। তবে সকলের কামনা মাঠে মাথা নুয়ে নয়, বুক চিতিয়ে লড়াই করুক শান্ত-সাকিবরা। দিনশেষে বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ঝান্ডা উড়ুক সগৌরবে।