একসময় যারা ডাল-ভাত খাওয়ার চিন্তা করতে পারত না এখন তারা মাছ-মাংস ও ডিম খাওয়ার চিন্তা করে ———প্রধানমন্ত্রী
একসময় যারা ডাল-ভাত খাওয়ার কথাও চিন্তা করতে পারত না, এখন তারা মাছ-মাংস ও ডিম খাওয়া নিয়ে চিন্তা করে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত থাকিনি। আমাদের সব শক্তি ও মেধা কাজে লাগাচ্ছি দেশের মানুষের উন্নয়নে। গতকাল শুক্রবার সকালে কৃষক লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে গণভবনে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এ সময় ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে সারা দেশে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের নানামুখী প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তিনি।
আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ছিল শুক্রবার। কৃষকের অধিকার রক্ষায় ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নেতাকর্মীসহ সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজ তারা (বিএনপি) চিৎকার করে, তাদের ওপর নাকি অত্যাচার হচ্ছে। কী অত্যাচার হচ্ছে? তারা যে অত্যাচারটা করেছে, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় আসার পর থেকে আওয়ামী লীগের ওপর যে স্টিম রোলার চালিয়েছে, তা কি তারা ভুলে গেছে? আমাদের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছে। খালেদা জিয়া আসার পরে ২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীরা ঘরে থাকতে পারেনি। ইউনিভার্সিটির ছাত্ররা পড়ালেখা করতে পারেনি। যে ছাত্রলীগ করত, আগুন দিয়ে তাদের বই-খাতা পুড়িয়ে দিয়ে রুম থেকে বের করে দেয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘তাদের (বিএনপির নেতাকর্মীদের) বিরুদ্ধে ট্রেনে আগুন দেয়াসহ তিন হাজার ৮০০টা গাড়ি পোড়ানোর মামলা। তারা মানুষ হত্যা করেছে আগুন দিয়ে। গত ২৮ অক্টোবর নির্বাচন ঠেকাতে গিয়ে রেলে আগুন দিয়ে মা-শিশুকে পুড়িয়ে মারল। যারা এসব করবে তাদের বিরুদ্ধে মামলা হবে না? তাদের কি মানুষ পূজা করবে? তাও তো তাদের ভাগ্য ভালো যে আমরা ক্ষমতায় আছি। আমরা ওইভাবে তাদের মতো প্রতিশোধমূলক না দেখে এখনো কথা বলার সুযোগ পায়। সারা দিন কথা বলে মাইক লাগিয়ে তারপরও বলে কথা বলতে দেয় না।’
বিএনপির তুলনায় আওয়ামী লীগ কিছুই করেনি দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা প্রতিশোধ নিতে ব্যস্ত থাকিনি। আমাদের সব শক্তি ও মেধা কাজে লাগাচ্ছি দেশের মানুষের উন্নয়নে। আজ তাদের সব জায়গায় গিয়ে কান্নাকাটি, ‘আমাদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে?’ তাদের জিজ্ঞাসা করুক, মামলাগুলো কীসের মামলা? তাদের বিরুদ্ধে অগ্নিসন্ত্রাস, দুর্নীতি, গ্রেনড হামলা, অস্ত্র পাচারের মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। তবে মামলাগুলো আরও দ্রুত শেষ করে শাস্তি দেয়া উচিত। তাহলে এই কান্নাকাটি কমতে পারে। তিনি বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কোন রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির ৬০ লাখ লোক নাকি গ্রেফতার। ৬০ লাখ তো ধারণক্ষমতাও নাই জেলে। যত ধারণক্ষমতা আছে তত লোকই জেলে আছে। তার মানে সবাই বিএনপির ক্রিমিনাল, এটাই বলতে চাচ্ছে? তার মানে বাংলাদেশের সব অপরাধই বিএনপি করে?’
খাদ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় সরকার কৃষকদের জন্য নতুন নতুন উদ্যোগ নেয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি কৃষকদের প্রতি গুরুত্ব দেয়ায় দেশের কৃষি সমৃদ্ধ হয়েছে। একসময় যারা নুন-ভাত বা ডাল-ভাত খাওয়ার কথাও চিন্তা করতে পারত না, এখন তারা মাছ-মাংস-ডিম খাওয়ার কথাও চিন্তা করে। ফলে যারা সরকারের সমালোচনা করেন, তাদের সেগুলো মাথায় রেখে বিবেচনা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, একসময় বীজ উৎপাদন বিএডিসিসহ নানা গবেষণা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই কৃষি গবেষণায় জোর দেয়। বীজ, মাছ, ধান ও সবজিসহ বিভিন্ন ফসল উৎপাদন বাড়িয়ে বিদেশি নির্ভরতা কমিয়ে এনেছে আওয়ামী লীগ সরকার। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণ করছে।