৫৪ জেলায় বইছে দাবদাহ হাঁসফাঁস জনজীবন
পয়লা বৈশাখ থেকে প্রচণ্ড দাবদাহে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সারা দেশের জনজীবন। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। রাজধানীসহ দেশের ৫৪ জেলায় বইছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। নিদাঘের সূর্য যেন আগুনের হলকা ছড়াচ্ছে। তেতে উঠছে ভূপৃষ্ঠ। ‘দারুণ অগ্নিবাণে, হৃদয় তৃষায় হানে রে, রজনী নিদ্রাহীন, দীর্ঘ দগ্ধ দিন আরাম নাহি জানে’—রবীন্দ্রগীতির মতো দৃশ্যপট। গরমের দাপটে নাভিশ্বাস অবস্থা। বয়ে যাওয়া তীব্র তাপদগ্ধের কারণে চরম বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। প্রচণ্ড দাবদাহের কারণে তাদের রাস্তায় বের হয়ে কাজ করতে চরম কষ্ট হচ্ছে। এই বৈশাখ জুড়ে টানা গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, চড়তে থাকবে তাপমাত্রা, বাড়বে আরও গরম। ২০২৩ সাল ছিল পৃথিবীর ইতিহাসের উষ্ণতম বছর। গত বছরের সেই উষ্ণতা এবার ছাড়িয়ে যাবে। এবার পুরো মৌসুমে তাপমাত্রা বেশি থাকবে। এর মধ্যে এই এপ্রিলে গরমের তীব্রতা পৌঁছাতে পারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, দেশের অধিকাংশ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহের তীব্রতা গতকাল সোমবার আরো বেড়েছে। থার্মোমিটারের পারদ বলছে, তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ৪০.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন রোববার (১৪ এপ্রিল) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল রাঙামাটিতে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা আগের দিন ছিল ৩৭.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে জলীয় বাস্পের পরিমাণ বেশি হওয়ায় গরমে অস্বস্তি আরও বাড়ছে। ২০২৩ সালের তুলনায় এ বছর তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। বাংলাদেশে সাধারণত মার্চ থেকে মে মাসকে বছরের উষ্ণতম সময় ধরা হয়। এর মধ্যে এপ্রিল মাসেই সাধারণত তাপমাত্রা সবচেয়ে বেশি থাকে। নির্বিচারে গাছ কাটা, জলাশয় ভরাট করা, এসির অত্যধিক ব্যবহারের কারণে রাজধানীর তাপমাত্রা বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের গত কয়েক দিনের পূর্বাভাসের দিকে লক্ষ করলে দেখা যায়, বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে এখন বেশি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এর কারণ বাংলাদেশের ওই অঞ্চলের দিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তর প্রদেশ ইত্যাদি রাজ্যের অবস্থান। কিন্তু এসব প্রদেশের তাপমাত্রা অনেক বেশি। এসব জায়গায় বছরের এই সময়ে তাপমাত্রা ৪২ থেকে ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, গত বছর ভারতের ঐ সব অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যেহেতু ওগুলো উত্তপ্ত অঞ্চল, তাই ওখানকার গরম বাতাস চুয়াডাঙ্গা, যশোর, কুষ্টিয়া, রাজশাহী হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে এবং তা আমাদের তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। বিগত বছরের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এটা প্রতীয়মান হচ্ছে, ২০২৪ সাল উত্তপ্ত বছর হিসেবে যাবে। আমরা এ বছর তাপপ্রবাহের দিন ও হার বেশি পেতে যাচ্ছি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, তাপমাত্রা যদি ৩৬ থেকে ৩৭.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়, তাকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে। ৩৮ থেকে ৩৯.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বলা হয়। আর অতি প্রচণ্ড হয় ৪২ ডিগ্রি বা এর বেশি হলে। বর্তমানে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রির মধ্যে ওঠানামা করছে।
আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, তাপপ্রবাহের এই প্রবণতা দেখা দিয়েছে এপ্রিলের শুরু থেকেই। এখন যে তাপপ্রবাহ চলছে, তা বইতে থাকবে। তাপপ্রবাহের মূল কারণ সূর্যের অবস্থান জানিয়ে এ কে এম নাজমুল হক বলেন, উত্তর গোলার্ধ বা পৃথিবীর কাছাকাছি অবস্থান করে সূর্য তাপ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গ, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, গুজরাটসহ ভারতের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল জুড়ে এই তাপপ্রবাহ রয়েছে।