Home সারাদেশ সিএমএইচ(সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) সকলের আস্থায়,কিন্তু জনগণের জন্য উন্মুক্ত নয়। কেমন হতো যদি সাস্থ্য খাতটাই তাদের (সামরিক বাহিনীর) হাতে থাকতো?
সিএমএইচ(সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) সকলের আস্থায়,কিন্তু জনগণের জন্য উন্মুক্ত নয়। কেমন হতো যদি সাস্থ্য খাতটাই তাদের (সামরিক বাহিনীর) হাতে থাকতো?
তাইফুর রহমান, সমাজকর্মী ও লেখক :
বিভিন্ন সময় দেখা যায় দেশের ভি আইপিরা অসুস্থ হলেই সিএমএইচে যান চিকিৎসা নিতে, এরপরে প্রয়োজন হলে বিদেশেও চলে যান চিকিৎসার জন্য।অর্থাৎ তাদেরও আস্থা রয়েছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থায়।যেহেতু এই হাসপাতালগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়,তাই জনগণের উন্মুক্ত হাসপাতালের দায়িত্ব সেই সামরিক বাহিনীর হাতে দিলে কেমন হয়?
দেশের সাস্থ্য ক্ষাতের উন্নয়ন দেশে এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রতি অর্থবছরে এই ক্ষাতে প্রায় উনচল্লিশ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়।খুব সহজে এটাকে যদি দেশের মোট জনসংখ্যা প্রায় সতেরো কোটি দিয়ে ভাগ করা হয় তাহলে গড়ে জনপ্রতি বরাদ্দ হয় প্রায় ২২৯৫ টাকা।কিন্তু দেশের সবাই তো দেশেই সরকারি চিকিৎসা সেবা নেন না।ধনীরা দেশের বাইরে কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে যান।আবার সকল নাগরিকই রোগে ভুগে হাসপাতালে ভর্তি হন না।
আবার এই বরাদ্দের মধ্যেই সাস্থ্য শিক্ষা,অবকাঠামোর উন্নয়নেও সম্ভবত খরচ করা হয়।
মূখ্য কথা সেটি নয়,মূখ্য বিষয় হলো অতি সাম্প্রতিক সময়ের সংবাদমাধ্যম ঘাটলে দেখা যায় দেশের সাস্থ্য ক্ষাতের ভয়াবহ বিপর্যয় ঘনিয়ে এসেছে।খাতনা করাতে গিয়ে শিশুদের মৃত্যু হয়েছে, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে প্রসূতির মৃত্যু হচ্ছে,টনসিল অপারেশন করাতে গিয়ে শ্বাসনালী কেটে ফেলেছে।অস্রপচারের পরে পেটেই কাচি বা গজ রেখে আসার ঘটনাও রয়েছে বহু।
এছাড়াও আরও ভয়ংকর বিষয় হলো ভুয়া ডাক্তার।প্রায়ই সংবাদপত্রে দেখা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন যায়গায় ভুয়া ডাক্তার ধরা পরছেন যারা আদৌ চিকিৎসা বিদ্যায় পড়ালেখাই করে নি।এরা বছরের পর বছর ধরে মানুষের চিকিৎসা করেছে যা প্রানঘাতিই ছিলো।
এরপরে রয়েছে ভুয়া টেস্ট রিপোর্ট, ভুয়া হাসপাতাল, অনুমতি ছাড়া চলা ডায়গনস্টিক সেন্টারে তো দেশ সয়লাব।
করোনা মহামারি,ডেংগু আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সাস্থ্য খাতের দুর্দশার চিত্র।
কিন্তু এত অনিয়মের মধ্যেও দেশের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল বা সিএমএইচের বিরুদ্ধে এখনো শোনা যায়নি যে সেখানে চিকিৎসকের গাফিলতির কারনে রোগীর মৃত্যু হয়েছে,অথবা ভুল চিকিৎসা হয়েছে,কিংবা টেস্ট সব বাইরে থেকে করাতে হয়েছে।অর্থাৎ এত অনিয়মের মধ্যেও সিএমএইচ ঠিকই নিয়মের মধ্যে রয়েছে।তাহলে সামরিক বাহিনীর হাতে কেন দেশের সরকারি হাসপাতালের পুরো দায়িত্ব দেয়া হয় না।এটি কি সামরিক আইনের বাইরে,নাকি অন্য কিছু। কিন্তু দেশের এই মৃতপ্রায় সাস্থ্য ক্ষাতের ভয়াবহ বিপর্যয় সামাল দিতে সামরিক বাহিনীকে দায়িত্ব দেয়ার কোনো বিকল্প আপাতত দেখা যায় না।
বিভিন্ন সময় দেখা যায় দেশের ভি আইপিরা অসুস্থ হলেই সিএমএইচে যান চিকিৎসা নিতে, এরপরে প্রয়োজন হলে বিদেশেও চলে যান চিকিৎসার জন্য।অর্থাৎ তাদেরও আস্থা রয়েছে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থায়।যেহেতু এই হাসপাতালগুলো জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত নয়,তাই জনগণের উন্মুক্ত হাসপাতালের দায়িত্ব সেই সামরিক বাহিনীর হাতে দিলে কেমন হয়?
যদিও ঢাকা মেডিকেল সহ বেশ কয়েকটি হাসপাতালের পরিচালক সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তা রয়েছেন,কিন্তু তার নিচের ডানা বা উইংস সবই তো বেসামরিক। তাহলে সেখানে তার মেধার যথাযথ প্রতিফলন দেখা যাওয়ার কথাও না।
সাস্থ্য ক্ষাত তথা হাসপাতালগুলোতে সর্বপ্রথম দরকার শৃঙ্খলা ফেরানো এবং দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করা,যা দমনে সামরিক বাহিনীই সিদ্ধহস্ত।
তাই আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় দেশের সাস্থ্য ক্ষাতের ভয়াবহ বিপর্যয় সামাল দিতে এবং এই ক্ষাতকে হয়রানি মুক্ত করতে পুরো ব্যবস্থাপনাই সামরিক বাহিনীর হাতে ন্যস্ত করা উচিৎ। যদি সেটি পরীক্ষামূলক বা পাইলট প্রকল্পও হয়,তাও জনবান্ধবই হবে বলে মনে হয়।