Home সারাদেশ লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, মুক্তিপণ চেয়ে পাঠাচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও
মার্চ ২৮, ২০২৪

লিবিয়ায় জিম্মি চট্টগ্রামের ৪ যুবক, মুক্তিপণ চেয়ে পাঠাচ্ছে নির্যাতনের ভিডিও

ভাগ্য বদলাতে বিদেশে পাড়ি দিয়ে দালালদের ফাঁদে আটকে আছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার চার যুবক। নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নিয়ে যুবকদের লিবিয়ায় পৌঁছে তুলে দেয় হয়েছে সংঘবদ্ধ চক্রের হাতে। এরপর তাদের নির্যাতনের ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠিয়ে চাওয়া হচ্ছে মুক্তিপণের টাকা।

ভুক্তভোগীরা হলেন রায়পুর ইউনিয়নের মধ্যম গহিরা বাচা মিয়া মাঝির ঘাট এলাকার নুরুল আলমের ছেলে মো. ওয়াসিম (২২), একই এলাকার মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে বোরহান উদ্দিন (১৯), আবদুর রহিমের ছেলে জাবেদুর রহিম (১৯) ও জেবল হোসেনের ছেলে নাঈম উদ্দিন (২০)।

এদিকে মুক্তিপণ দাবি করে নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ পাঠানোর ঘটনায় বুধবার (২৭ মার্চ) বিকালে অভিভাবকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং থানার ওসিকে লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

অপহৃতদের স্বজনরা জানান, রায়পুর ইউনিয়নের গহিরা এলাকার মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে জহিরুল ইসলাম ফেব্রুয়ারিতে জনপ্রতি ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে নেয়। কথা ছিল লিবিয়ার হাসপাতালে তাদের চাকরি দিবেন। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি তারা লিবিয়া পৌঁছেন। তারা লিবিয়া পৌঁছার ৩/৪ দিন আগ থেকেই বিভিন্ন নাম্বার থেকে হোয়াটঅ্যাপ, ইমোতে ফোন করে আরও টাকা চাওয়া হয়। ভুক্তভোগী চারজন লিবিয়া পৌঁছার পর জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা দাবি করে তাদের নির্যাতন করা শুরু হয়। নির্যাতনের ভিডিও এবার পাঠানো শুরু করেন পরিবারের সদস্যদের কাছে।

তারা আরও জানান, চট্টগ্রামের জহিরুল ভুক্তভোগীদের টুরিস্ট ভিসায় প্রথমে দুবাই নিয়ে যায়। সেখানে জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর থানার বাসিন্দা মো. মিজান নামে এক লোকের হাতে তুলে দেন। মিজান তিনদিন পর তাদের সবার পাসপোর্ট নিজের কাছে নিয়ে নেন। সাতদিন পর দুবাই থেকে মিশর হয়ে লিবিয়া নিয়ে গিয়ে মিজান অন্য দালালের হাতে বিক্রি করে দেন চট্টগ্রামের চার যুবককে।

লিবিয়ায় তাদের মাসখানেক কিছু কাজ দেওয়ার পর সর্বশেষ গত সোমবার (২৫ মার্চ) তাদের বন্দি করে রাখে। মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) পরিবার ও স্বজনদের কাছে কয়েকটি নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজ ও অডিও বার্তা পাঠায় দালাল চক্ররা। ভিডিও বার্তায় জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে মুক্তিপণ দাবি করেন এবং এসব টাকা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংকের চকরিয়া শাখার একটি হিসাব নম্বরও দেন তারা। মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে জীবন দিতে হবে চার জিম্মিকে। এ জন্য বেঁধে দেওয়া হয় সময়ও। বুধবার বিকাল তিনটার মধ্যে যত পারে তত টাকা দিতেও বলা হয়। টাকা না দিলে একজন-একজন করে লাশ পাঠাবে বলে জানান স্বজনদের জানিয়েছে দালালরা।

অপহৃত ওয়াসিমের মামা মো. নাছির উদ্দিন বলেন, বুধবার তিনটার মধ্যে চারজনের জন্য চার লাখ টাকা পাঠাতে বলেছে। বিকাল থেকে মুঠোফোন ইমু ও হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার ফোন করছে টাকার জন্য। তাদের নির্যাতনের ভিডিও ফুটেজও পাঠাচ্ছে। আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা কামনা করছি।

জাবেদুর রহিমের বাবা আবদুর রহিম বলেন, টাকা পয়সা স্বর্ণালংকার যা ছিল সব বিক্রি করে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়েছি। সেখানে ছেলে প্রতারণার শিকার হয়েছে। এখন ১০ লাখ টাকা দিলে ছেলেকে ফেরত দেবে বলে বলছে অপরণকারীরা। এ মুহূর্তে এত টাকা কই পাব আমি।

আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. ইশতিয়াক ইমন বলেছেন, স্বজনদের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *