Home সারাদেশ ভাতে ভারতীয় পিয়াজ,গায়ে ভারতীয় জামা,ঘরে ভারতীয় টিভি চ্যানেল রেখে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক কতটা সফল হবে।
ভাতে ভারতীয় পিয়াজ,গায়ে ভারতীয় জামা,ঘরে ভারতীয় টিভি চ্যানেল রেখে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক কতটা সফল হবে।
তাইফুর রহমান (বালী তূর্য),সমাজকর্মী ও লেখক।
আমাদের পূর্ব পুরুষদের মেরুদণ্ড ছিলো বলে তারা ভারত জয়ের কথা বলতো।আমাদের মেরুদণ্ড নেই বলেই কি আমরা ভারতীয় পন্য বয়কটের কথা বলি?ভাতে ভারতীয় পিয়াজ,গায়ে ভারতীয় জামা,ঘরে ভারতীয় টিভি চ্যানেল রেখে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক কতটা সফল হবে।
বয়কট ট্রেন্ড বর্তমানে খুব কার্যকর ভূমিকা রাখছে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে।ইসরায়েল ফিলিস্তিন ইস্যুতে সারা বিশ্বের মুসলিমরা ইসরায়েলের পণ্য বয়কটের ডাক দিয়ে বেশ সারা ফেলেছেন।স্টার বাকস,কেএফসির,কোকাকোলার মতো কোম্পানি নাকাল হয়ে গেছে বলে দেখা গিয়েছে।তরমুজ বয়কটের ডাকেও বেশ ভালো ফলাফল দেখা গেছে।তরমুজ এখন ক্রেতার জন্য কাদছে।সেই বয়কটের ডাকে যুক্ত হয়েছে ভারতীয় পণ্য।যদিও ভারত আমাদের দেশের উপর অদৃশ্য যে প্রভাব বিস্তার করে তা অনেকেরই অপছন্দ হলেও আসলে এখানে এটি কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে?বর্তমানে ঘরের টিভিতে ভারতীয় টিভি চ্যানেল বন্ধ করাতে পারবেন কিনা আগে ভাবুন।ঘরের বিলাই বাইরে সিংহ হয় না।ভারতীয় আগ্রাসনের আমিও বিরোধী।কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আসলে মুখের বুলিতে বয়কট করলে হবে কি?যখন এদের বিভিন্ন ক্ষাতে প্রচুর ভারতীয় কাজ করছে,সেই পদগুলো কেন আমরা যোগ্যতা দিয়ে নিতে পারছি না।আমাদের দেশীয় বিভিন্ন পন্যের বাজার ভারতীয় পন্যের দখলে, কেনো আমাদের ভোক্তারা দেশীয় পন্য খোজেন না?আর সেই পন্যের বিকল্প সরবরাহ আদৌ আমাদের আছে কি না।দেশীয় রপ্তানির স্বর্নখাত ছিলো চিংড়ি রপ্তানি, যা এখন পুরোটা ভারতের দখলে।দেশীয় রপ্তানির আরেক বড় ক্ষাত পোশাক শিল্প,কিন্তু নানামুখী সমস্যায় সেটিও ভারতের দিকে ঝুকেছে।শ্রমিক অসন্তোষ, আন্দোলন,রাজনৈতিক অস্থিরতার পেছনে কি আমাদের কোনো দ্বায় নেই?ভারত যেমনটি আমাদের দেশের বাজার দখল করে আছে,তেমনি বাংলাদেশের পন্য প্রানের নানান পন্য ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও পাওয়া যায়।উইনার ব্রান্ডের বাংলাদেশের কলম দিয়ে এখন ভারতীয় অনেক শিশুরা লেখাপড়া করে।প্রানের জুসে অনেক ভারতীয় এখন গলা ভিজায়।তাহলে কেন অন্যান্য প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানিও ভারতের বাজারে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে পারছে না?
আমাদের ঈদের পোশাকের নাম হয় ভারতীয় বিভিন্ন টেলিভিশন সিরিয়ালের নামে।সিনেমাহলে ভারতীয় চলচ্চিত্র চলে।বাজারে ভারতীয় পিয়াজ না এলে পিয়াজের কেজি ৩০০ টাকা হয়ে যায়।ভারতীয় কাচা মরিচ না এলে কাচামরিচের কেজি ১২০০ টাকায় উঠে যায়।ভারতীয় গরু আসে না বলে আমাদের দেশে গরুর মাংস ৩০০ টাকা থেকে ৭৫০ টাকায় উঠে যায়। শীতকালে গায়ের চাদরখানা ভারতীয় কাশ্মিরের না হলে রাজনীতির ছবির পোজটা হয় না।জ্বর সর্দি হলে মধ্যবিত্তরা ভারতে চলে যায় চিকিৎসা করাতে।সেখানে ভারতীয় পন্য বয়কটের ডাক দিয়ে নিজেরাই মানতে পারবো তো?নাকি ঘরে ভারতীয় টিভি চ্যানেল বন্ধ করতে গেলে অনেক নেতাকে না খেয়েও থাকতে হতে পারে।ঘরের মেয়ে ঈদে ভারতীয় নামের পোশাক কিনতে না পারলে বাপের সাথে কথাই বলবে না।
এই অবস্থা আমাদের একদিনে হয়নি,ভারত ধীরে ধীরে আমাদের দেশের এই সেক্টরগুলো দখলে নিয়েছে।ভারতীয় পন্য বয়কটের আগে এগুলোর বিকল্প তৈরি করতে হবে।তৈরি পোশাক শিল্পে ভারতীয়রা যেই চেয়ারগুলো দখল করে রেখেছে সেগুলো নেয়ার জন্য নিজেদের যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
সীমান্তে বাংলাদেশের নাগরিকদের ভারতীয় বিএসএফ পাখির মতো গুলি করে মারে,এজন্য এদেশের অধিকাংশ মানুষ ভারতকে অন্তরে ঘৃণা করে।কিন্তু সেই সমস্যার সমাধানের জন্য এই দেশের কূটনীতিকদের উপর চাপ প্রয়োগ এদেশের নাগরিকদেরই করতে হবে।
বানিজ্যিক ক্ষাতে ভারতীয় পন্যের বিকল্প সরবরাহ বা নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। ঘরে ঘরে মা বোনদেরকে দেশীয় সংস্কৃতির ধারায় সংযুক্ত করতে হবে।
বয়কটের আগে তাদের বাজারে আমাদের পন্যের রাজত্ব বাড়াতে হবে। তবেই সেই বয়কটের ডাক কাজে আসবে।