Home সারাদেশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামানত দশগুণ বৃদ্ধি, গনতন্ত্রের জন্য সুবাতাস নাকি কাল বৈশাখী? কেন বাতিল হবে না এই প্রথা?
মার্চ ২০, ২০২৪

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জামানত দশগুণ বৃদ্ধি, গনতন্ত্রের জন্য সুবাতাস নাকি কাল বৈশাখী? কেন বাতিল হবে না এই প্রথা?

তাইফুর রহমান, সমাজকর্মী ও লেখক (ঝালকাঠি):
 অতি সম্প্রতি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের কয়েকটি নিয়ম পরিবর্তন করা হয়েছে। এর মধ্যে চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীর দলীয় মনোনয়ন না থাকলে ২৫০ জন সমর্থকের সাক্ষর দেয়ার নিয়মটি বাতিল করা হয়েছে এবং জামানত দশ গুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে।আমরা অনেকেই এর প্রথমটিকে সাধুবাদ জানাই,কিন্তু দ্বিতীয় সিদ্ধান্তের সাথে দ্বিমত পোষণ করতে চাই।জামানত বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত এদেশের গনতন্ত্রকে পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে দেবে,তাই এই জামানত প্রথাই বাতিল করার দাবি জানাই।
এই দেশটির ভৌগোলিক অবস্থান বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গনতান্ত্রিক দেশ ভারতের ঠিক নাভীর কাছে।এখানে গনতন্ত্রের বয়স কেবল অর্ধশতক পেরিয়েছে।কিন্তু সুদুর আমেরিকা থেকে আসা গনতন্ত্র যদিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো গণমানুষের মতামতের ভিত্তিতে তাদের প্রতিনিধি নিযুক্ত করা।কিন্তু সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে স্বাধীন হবার পরেও বারবারই হোচট খেয়েছে।কয়েক দফা সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপ তথা শাসন জারির ঘটনাও ঘটেছিলো।
দেশের সংবিধান অনুযায়ী সেই গনতান্ত্রিক ধারা বজায় রাখার জন্য নাগরিকদের পয়সায় একটি স্বতন্ত্র নির্বাচন কমিশনও করা আছে।যারা জনগণের মনের মতো প্রতিনিধি বাছাইয়ে জনগণকে সাহায্য করবে।কিন্তু আদতে সাম্প্রতিক সময়ের জামানত বৃদ্ধি কি আসলেই জনগণের মনের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন দেখাতে সক্ষম হবে?
অনেক দিক থেকে চিন্তা করেও অধিকাংশ দিক থেকেই নেতিবাচক ফলাফলই পাওয়া যায়। রাস্ট্রের একজন সাধারণ নাগরিক যিনি জনপ্রিয় কিন্তু দরিদ্র,তার জনগোষ্ঠী যদি তাকে প্রতিনিধি হিসেবে চায়ও এখন সে স্বপ্ন বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে গেছে এই জামানত দশ গুণ বাড়ানোর ফলে।অর্থাৎ খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে এটির দ্বারা সাধারণ মানুষের মনে লুকায়িত স্বপ্ন অংকুরিত হবার সুযোগ আর নেই।তাদের অন্তরের অব্যক্ত বাক্য এখন “প্রধান নির্বাচন কমিশনার মহোদয় জামানত প্রথা বিলুপ্ত করুন”
স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পেরিয়ে গেছি আমরা।অনেক ঘাত প্রতিঘাতের পরেও দেশে এখন গনতন্ত্র টিকে আছে।সাংবিধানিকভাবে বা গনতন্ত্রের ধারা অনুযায়ী সাধারণত নির্বাচন উপলক্ষে সাধারণ মানুষ তাদের সমাজ থেকে আলাদা আলাদা গোষ্ঠী একেকজনকে তাদের নেতা নির্বাচন করার জন্য তার পক্ষে নির্বাচন কমিশন থেকে ফরম তোলেন।সেই ফর্মে প্রস্তাবকারী এবং সমর্থনকারীর ঘর দুটি এটিই প্রমান করে।এরপর তারাই নিজেরা কর্মী হয়ে সকলে মিলে পোস্টার ছাপিয়ে তাদের প্রার্থীর পক্ষে সাধারণ মানুষের কাছে ভোট চান,ভোট দিয়ে একজনকে নির্বাচিত করেন।
এটা তখনই কেবল উৎসব হতে পারে যখন সাধারণ মানুষ তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে প্রার্থী বানাতে পারেন।সাধারণ মানুষের মনোনীত প্রার্থীর অর্থনৈতিক অবস্থাও তাদের মতোই অতি সাধারণ হওয়ার কথা, কিন্তু প্রচলিত ধারার বাইরের সংস্কৃতি হলো বিত্তবানরা বৈধ বা অবৈধ উপায়ে অঢেল সম্পদ অর্জন করে এলাকায় এসে নিজেই প্রার্থী হন,পয়সা বিলিয়ে নির্বাচন করেন,জিতে গেলে তা সাধারণ মানুষের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ থেকেই কামিয়ে নেন।এটি এদেশের জন্য চড়ম অকল্যানকর।সাধারণ মানুষের ভোটের উৎসব, স্পৃহা সব কমিয়ে দিচ্ছে এই অপসংস্কৃতি। যা আরও উস্কে দেবে নতুন এই সিদ্ধান্ত।
একজন সাধারণ মানুষের মনোনীত প্রার্থী এত বেশি টাকা যদি জামানত রাখতে হয়,তাহলে জনপ্রিয় এবং যোগ্য হলেও তারা নির্বাচনেই অংশ নিতে পারবে না।যা গনতন্ত্রকে মূলত পক্ষাঘাতগ্রস্ত করে দেবে।এরফলে জনবিচ্ছিন্ন বিত্তশালীরা তাদের অর্থ এবং পেশী শক্তির দ্বারা সাধারণ মানুষের পছন্দের বাইরে গিয়ে নির্বাচিত হয়ে আর এলাকায় আসবেন না।যারফলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তির সীমা ছাড়িয়ে যাবে।
অন্যদিকে যদি এই জামানত প্রথাই বিলুপ্ত করা হয়,তাহলে সাধারণ মানুষ শতস্ফুর্তভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে।গরীব কিন্তু জনপ্রিয় লোকদের যায়গা হবে, তারা সাধারণ মানুষের পাশে থাকবে, এলাকার উন্নয়ন হবে।এদেশের নাগরিকদের যে কারও নির্বাচনে অংশ নেয়ার অধিকার থাকা উচিৎ, তাতে জামানত লাগবে কেন?নির্বাচনের জন্য রাস্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ বরাদ্দ করা হয়,ফরম কেনায় টাকা দিতে হয়।তাহলে প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত করার প্রথা থাকবে কেন?
তাই আমরা চাই,অনতিবিলম্বে জামানত বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাতিল এবং জামানত প্রথাই বাতিল করতে হবে বলেই দাবি জানাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *