Home বিনোদন ভাইটা আমার বড় ভালো মানুষ ছিলেন
মার্চ ১৬, ২০২৪

ভাইটা আমার বড় ভালো মানুষ ছিলেন

বরেণ্য রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাদি মহম্মদ স্বেচ্ছামৃত্যুর পথ বেছে নিয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় অনন্তলোকে পাড়ি জমান গুণী এই শিল্পী। সংগীতজগৎ থেকে শুরু করে সব জায়গায় নেমে আসে শোকের ছায়া। বৃহস্পতিবার জানাজা শেষে মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত হন শিল্পী। ভাইকে নিয়ে কথা বলেছেন নৃত্যশিল্পী শিবলী মহম্মদ।

যদি বলি, সাদি ছিলেন আমার বন্ধুর মতো, পরামর্শক। আমরা সংগীতের দুই দিকে গিয়েছিলাম। সংগীত ও নাচ। ভাই যেহেতু রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী, সেহেতু আমার নাচের কস্টিউম কেমন হবে? এক্সপ্রেশন কেমন হবে? রবীন্দ্রনাথের গানের কথার মূলভাব যত্ন করে বুঝিয়ে দিতেন। আমরা একসঙ্গে ছবি দেখতাম, গান শুনতাম। আমি কী খাব, তিনি কী খাবেন—সবকিছুই একই ছন্দে চলত আমাদের। মায়ের চলে যাওয়াটা আমাদের থামিয়ে দিয়ে গেছে। আমি তো কাজে ব্যস্ত থেকে কিছুটা উতরে গিয়েছিলাম।

বুকভরা অভিমান ছিল সাদি মহম্মদের

বুকভরা অভিমান ছিল সাদি মহম্মদের

একটি বন্ধুমহল ছিল। শাকিলা শর্মা, তপন, সুকল্যাণ, হিরু, কাজল আপাসহ বেশ কয়েকজনের একটি সার্কেল। মা হারাবার পর আমারও ডিপ্রেশন—একাকিত্ব। আমি চেষ্টা করেছি ক্লাসে গিয়ে ছেলেমেয়েদের নিয়ে সবকিছু ভুলে থাকতে। সাদি শুধু ক্লাসের পরের সময়টুকু একা থাকতেই পছন্দ করতেন।

একটি কথা বলি, এই বেদনার দিনে যেটা আমাকে বেশি পীড়া দিচ্ছে। সেটি হলো বিভিন্ন গণমাধ্যমে রাষ্ট্রীয় পদক পাওয়ার ইস্যুতে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর তথ্য রটানো হচ্ছে। এটা একদমই সত্যি নয়, আমরা কোনো পদকের জন্য কাজ করিনি। আমার ভাইয়ের এসব যন্ত্রণা একদম ছিল না।

সাদি মহম্মদ ও শিবলী মহম্মদ। ছবি: সংগৃহীত
সাদি মহম্মদ ও শিবলী মহম্মদ। ছবি

একটি মেডেল নিয়ে কেউ কেউ ইস্যু তৈরি করছেন। সাদির রবীন্দ্রসংগীত শোনেন কোটি কোটি বাঙালি। এ রকম শিল্পীর পদকের জন্য আহাজারি থাকার কথা নয়। তিনি পদকের জন্য কোনোভাবেই কষ্ট পাননি। স্বীকৃতি পেলে ভালো লাগে। আমি একুশে পদক পেয়েছি, সে জন্য সম্মানিত বোধ করছি। তিনি উদার মনের মানুষ। তিনি আমাকে বলেছেন, ‘তুমি তো নাচের জন্য অনেক করেছ।’ সাদি মহম্মদের জনপ্রিয়তা পৃথিবীর কেউ অস্বীকার করতে পারবেন না। পদক নিয়ে কথা হলে সরকারও বিব্রত হবে, সাদিকেও ছোট করা হবে। সাদি মহম্মদ সবকিছুর ঊর্ধ্বে একজন শিল্পী। সাদি মহম্মদ পদকের অনেক ঊর্ধ্বে—তাই পদকের বিষয়ে বিভ্রান্তিকর রটনা আর কেউ করবেন না, এটি সাদি মহম্মদের ভক্তদেরও অনুরোধ

আসলে আমাদের সমাজে বিয়ে না করলে মানুষ চরিত্র নিয়ে নানা কথা রটায়। মানুষ সংসার করবেন কি করবেন না, সেটি তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই প্রশ্ন তোলাটাই অন্যায়। যদি বলি—মাকে ঘিরেই ছিল আমাদের সংসার। মা ছিলেন আমাদের পুরো পৃথিবী। আমাদের মা ৯৬ বছর বেঁচে ছিলেন। তাঁকে আমরা মাথায় করে রেখেছি। মাকে বলতাম, মা আর কী করব? মা বলতেন, আর কী করবি, তোরা আমাকে তো মাথায় করে রেখেছিস। আমাদের মাকে কেন্দ্র করে সংসার।

যখন শিল্পকলা পদক পেয়েছি, মাকে এনে দিয়েছি, মা যে কী খুশি হয়েছেন! মাকেন্দ্রিক সংসার অনেক মূল্যবান।

সাদি মহম্মদ। ছবি: প্রথম আলো
সাদি মহম্মদ। ছবি

শেষে বলতে চাই। ভাই তো ভাই–ই। ভাইকে তো কোনো বিশেষণে বিশেষিত করা সম্ভব নয়। তবে ভাইটা আমার বড় ভালো মানুষ ছিলেন। তাঁর ঈশ্বর প্রদত্ত গলা ছিল। আমাদের একদম একা করে চলে গেলেন। এটা কি ঠিক করলেন? ভাই আমাদের কথা একটুও ভাবলেন না। ভাইয়ের প্রতি আমার বড্ড অভিমান রয়ে গেল। আমি শুধু বলব, ‘ভাই তুমি যেখানে থাকো, ভালো থেকো। আমার বন্ধু হয়ে থেকো।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *