পরিবার বাঁচাতে খাবারের সন্ধানে গাজার শিশুরা
মৃত্যুপুরী গাজায় ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার। প্রতিদিন এক টুকরো খাবারের আশায় এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়ায় অসংখ্য শিশু। কখনো উদ্বাস্তুদের অস্থায়ী শিবিরে। কখনো আবার রাস্তার ধারে। কেউ কেউ আবার ঘুরে বেড়ায় হাসপাতালের দুয়ারে দুয়ারে। এক টুকরো খাবার পেলেই পরিতৃপ্তিতে ছুটে যায় নিজ পরিবারের কাছে। এরপর ভাগাভাগি করে খায় ওই খাবার। পরিবার বাঁচাতে খাবার সন্ধানে এভাবেই প্রতিনিয়ত ছুটছে গাজার শিশুরা।
১১ বছর বয়সি মোহাম্মদ জোরাবও তাদের মধ্যে একজন। প্রতিদিন সকাল হলেই প্লাস্টিকের বাটি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে খাদ্যের সন্ধানে। দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরের অলিগলি খুঁজে বেড়ায় এক টুকরো খাবার। কখনো প্রতিযোগিতার লাইন ধরে। কখনো আবার খাবার না পাওয়ার ভয়ে লাইন ভেঙে অন্যদের টপকিয়ে খাবার সংগ্রহের আশায় থাকে। বিবিসি।
বাবা-মায়ের চার সন্তানের মধ্যে বড় জোরাব। বাবা, ভাই-বোন আর অসুস্থ মাকে নিয়ে তার পরিবার। প্লাস্টিক এবং টারপলিন দিয়ে ঘেরা একটি অস্থায়ী ঘরে তাদের বসবাস। ইসরাইলের নৃশংস হামলার ভয়ে গাজার উত্তর থেকে পালিয়ে দক্ষিণের রাফাহ শহরে আশ্রয় নিয়েছে। জোরাব ফিলিস্তিনের হাজারো শিশুর মধ্যে একজন, যারা তাদের পরিবারের জন্য প্রাথমিক খাদ্য সংগ্রহকারী হয়ে উঠেছে। জোরাব যখন খাবার নিয়ে পরিবারের কাছে ফিরে আসে তখন পরিবারের বাকি সদস্যরা খুশি হয়। তারপর সবাই মিলে একসঙ্গে খায় ওই খাবার।
তবে কখনো কখনো খালি হাতে ফিরতে হয় বলে অনেক দুঃখ প্রকাশ করে জোরাব। গাজার ছোট ছোট অনেক বাচ্চারা খাবার সংগ্রহ করে সে খাবার তুলে দিচ্ছে পরিবারের স্বজনদের মুখে। অনেকে খাবারের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়ায়। একটু খাবারের আশায় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। সোমবার বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গাজার জনসংখ্যার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ উদ্বাস্তু জীবনযাপন করছে।
জাতিসংঘের (ইউএন) বক্তব্য, ‘গাজাবাসীর জন্য প্রতিদিন ৫শ ট্রাক সাহায্য প্রয়োজন। কিন্তু উপত্যকার কোথাও তা নেই। গড়ে প্রতিদিন আসছে মাত্র ৯০ ট্রাক।’ উত্তর গাজার পরিস্থিতি বেশি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় গাজা উপত্যকায় এখন দুর্ভিক্ষ বিরাজ করছে। উদ্বাস্তু পরিবারগুলো বাধ্য হয়ে তাদের সন্তানদের মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গা থেকে খাবার সংগ্রহ করাচ্ছে। কোনো কোনো দিন মিলছে না একটু খাবারও। ফলে কাটাতে হচ্ছে ক্ষুধায় নিমজ্জিত ভয়ংকর এক জীবন।