ফিলিস্তিনিদের সহায়তায় ‘টেক ফর প্যালেস্টাইন’ জোট ঘোষণা
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সহায়তার লক্ষ্যে ‘টেক ফর প্যালেস্টাইন’ নামে নতুন জোট ঘোষণা করা হয়েছে, যেখানে যুক্ত আছেন প্রযুক্তি বিশ্বের ৪০ জনের বেশি প্রযুক্তি উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী ও প্রকৌশলী।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ যখন চরম উত্তেজনাপূর্ণ মুহুর্তে আছে, ঠিক তখনই নতুন এ জোট গঠনের ঘোষণা এল।
গেল ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ১ হাজার ১’শ জনেরও বেশি ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হন। এর পাল্টা আক্রমণে, গাজা উপত্যকায় কয়েক লাখ ফিলিস্তিনি নাগরিক বাস্তুচ্যুত হওয়ার পাশাপাশি হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
এই যুদ্ধ প্রযুক্তি শিল্পেও বিভেদ সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন স্টার্টআপ কোম্পানি থেকে শুরু করে এ খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে শক্তিশালী সমর্থন পেয়ে আসছে ইসরায়েল। অন্যদিকে, যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো ও ফিলিস্তিনের সমর্থনে কথা বলায় অনেক কর্মীরই চাকরি হারিয়ে গেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে প্রযুক্তিবিষয়ক সাইট টেকক্রাঞ্চ।
‘টেক ফর প্যালেস্টাইন’ জোটের প্রতিষ্ঠাতা পল বিগার। মার্কিন সফটওয়্যার কোম্পানি ‘সার্কেলসিআই’ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
এই জোটের মাধ্যমে গাজার যুদ্ধ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো, স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো ও যারা ফিলিস্তিনের সমর্থনে প্রকাশ্যে কথা বলতে ভয় পান, তাদের সমর্থন দেওয়া সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বিগার।
ফিলিস্তিনি জনসাধারণের পক্ষে অবস্থান নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রযুক্তি খাতে প্রথম জোট গঠনের ঘটনা এটি। টেকক্রাঞ্চ বলছে, এই উদ্যোগ প্রযুক্তি শিল্পের জন্য ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হতে পারে। এর কারণ হিসেবে সাইটটি বলছে, মানুষ আরও বেশি যুদ্ধবিরতির পক্ষে কথা বলতে চায়।
এ জোট গঠনের সূত্রপাত ঘটে বিগারের লেখা এক ব্লগ পোস্ট ভাইরাল হওয়ার পর, যেখানে প্রযুক্তি খাতে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থন না থাকার বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেন তিনি।
বিগারের দাবি, ব্লগ পোস্টটি লেখার পর হাজার হাজার মানুষ তার কাছে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে সমর্থনের কথা জানিয়েছেন, যাদের অনেকেই তাদের চাকরি হারানোর ঝুঁকির কারণে ফিলিস্তিনিদের পক্ষে কথা বলতে ভয় পান।
“তাদের মধ্যে অনেকেই এখন কেবল ফিলিস্তিনের পক্ষে কথাই বলছেন না, বরং তাদের কণ্ঠস্বর যেন সকলের কাছে পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নতুন প্রকল্প নিয়ে কাজও শুরু করেছেন। এ ছাড়া, তাদের অনেকেই ফিলিস্তিনি নাগরিকদের সাহায্য করার আগ্রহ দেখিয়েছেন।” — বলেন বিগার।
“আমি এমন মানুষদের একসঙ্গে জড়ো করতে শুরু করেছি। আর এতে ‘টেক ফর প্যালেস্টাইন’ জোটটিও খুব দ্রুত বড় হচ্ছে।”
এ জোটের কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, যেখানে ছোট ছোট দলকে দিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা রয়েছে। আর এটি সেইসব ফিলিস্তিনপন্থী প্রযুক্তিকর্মীদের জন্য কাজ করার ও পরামর্শ নেওয়ার জায়গা হিসেবে কাজ করতে পারে, যারা এরইমধ্যে ব্যক্তিগত পর্যায়ে বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন।
প্ল্যাটফর্মটি গঠনে সহায়তার জন্য এরইমধ্যে ‘টেক ফর প্যালেস্টাইন’ জোটে নিশ্চিত করা হয়েছে ডিজিটাল আর্থিক লেনদেন সেবা ‘ট্রুবিল’-এর প্রতিষ্ঠাতা ইদ্রিস মোখতারজাদার মতো বড় নাম।
এখন পর্যন্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে ইচ্ছুক প্রকৌশলীদের জন্য নতুন ব্যাজ তৈরি করেছে জোটটি, যা ব্যবহার করা যাবে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সফটওয়্যার কোম্পানি গিটহাব-এ।
এ ছাড়া, যুদ্ধ বিরতির সমর্থন জানানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন ‘এইচটিএমএল স্নিপেট’ও বানিয়েছে নতুন এ জোট। জোটটির শেষ পর্যন্ত ফিলিস্তিনি সংস্থাগুলোর সঙ্গে আরও কাজ করার, পরামর্শ দিয়ে তাদের পাশে থাকার এবং ক্লাউড ক্রেডিট দিয়ে ফিলিস্তিনি স্টার্টআপগুলোকে সহায়তা করার পরিকল্পনা আছে। — বলেছেন বিগার।
বিগার বলছেন, সামনের দিকে আরও বেশি ফিলিস্তিনপন্থী সংস্থার সঙ্গে কাজ করার ও বিভিন্ন ফিলিস্তিনি স্টার্টআপ কোম্পানিকে পরামর্শ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে নতুন এ জোটের।
এর আগে টেকক্রাঞ্চের প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল, যুদ্ধের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে ফিলিস্তিনের উদীয়মান প্রযুক্তি খাত।
এদিকে, মুসলিম প্রযুক্তি উদ্যোক্তাদের জোট ‘মুসলামিক মেকার্স’-এর প্রতিষ্ঠাতা আরফাহ ফারুক বলেন, গত তিন মাস সবাইকে নানাভাবে বদলে দিয়েছে। একই সময়ে এমন সম্প্রীতি ও প্রতিবাদ দেখা গেছে, যা তিনি আগে কখনও দেখেননি।
“আমি দেখেছি, বিশ্ববাসী আর কিছু না করলেও তাদের ল্যাপটপে ফিলিস্তিনের পক্ষে কাজ করার লক্ষ্যে এক হয়েছেন।” ব্লগ পোস্ট পড়ার পর ‘টেক ফর প্যালেস্টাইন’ এর সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফারুক। আর কীভাবে ফিলিস্তিনের পক্ষে কাজ করা যায়, তার বিভিন্ন উপায় খুঁজতেও দেখা গেছে তাকে।
“অবরুদ্ধ গাজার মাটিতে গিয়ে আমাদের পক্ষে সাহায্য করা সম্ভব নয়। তবে, আমরা বিশ্বের যে প্রান্তেই থাকি না কেন, আমরা যেভাবে পারছি সাহায্য করছি।” —- বলেন ফারুক।
ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকাকে নতুন এ জোট গঠনের কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে টেকক্রাঞ্চ।
সাম্প্রতিক সময়ে, ইসরায়েলকে গাজার অসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। তবে, তারা এটাও বলছেন যে, ইসরায়েলিদের নিরাপত্তার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন এখনও অটুট আছে।
পল বিগার আশা করেন, অন্ততপক্ষে নতুন এ জোট গঠন মানুষের কথা বলার ক্ষেত্রে বড় এক পরিবর্তনের সূচনা।
তিনি আরও বলেন, “আমরা অন্যদেরকেও এ বিষয়ে কথা বলতে উৎসাহ দিচ্ছি, যারা এখনও কথা বলতে ভয় পান। আর এটা কেবল শুরু।”