Home তথ্য প্রযুক্তি নিজের কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট: গবেষণা
ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪

নিজের কেন্দ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট: গবেষণা

নিজের কেন্দ্র বা মূল অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট– এমনই শঙ্কা ভূতত্ত্ববিদদের।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় বা প্যাসিফিক প্লেট একটি মহাসাগরীয় টেকটোনিক প্লেট, যা প্রশান্ত মহাসাগরের নীচে রয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম টেকটোনিক প্লেটও এটি।

নতুন এক গবেষণায় ভুতত্ত্ববিদরা প্রমাণ খুঁজে পেয়েছেন, প্লেটটিতে বড় আকারের ফাটল দেখা গেছে। এর ফলে ধীরে ধীরে প্লেটটি পশ্চিম দিকে সরে যাবে ও একসময় ভূপৃষ্ঠের অভ্যন্তরে থাকা কঠিন অংশে ঢুকে যাবে।

গবেষকদের দাবি, তাদের ধারণা ঠিক হলে পৃথিবী কীভাবে কাজ করে, তা নিয়ে প্রচলিত ধারণা নতুন করে সংজ্ঞায়িত করার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

ভূপৃষ্ঠের নিচে পৃথিবীর শিলামণ্ডল বিভিন্ন অংশে বা খণ্ডে বিভক্ত, যাকে প্লেট বলে। এই প্লেটগুলো পৃথিবীর অভ্যন্তরে আংশিক তরল অংশের ওপর ভাসমান অবস্থায় আছে।

এটা বোঝার জন্য গোটা পৃথিবীর ভূত্বকটিকে একটি ধাঁধা হিসাবে কল্পনা করতে হবে, যেখানে এর টুকরোগুলো অসম্ভব গরম ও চটচটে স্তরে ভাসছে। আর ধাঁধার এ টুকরোগুলোই একেকটি টেকটনিক প্লেট। আর এগুলো আসলে শক্ত পাথরের বিস্তীর্ণ স্ল্যাব, যেগুলো ভূপৃষ্ঠের ভেতরের অংশে থাকা গলিত আবরণের ওপরের কঠিন আবরণ হিসেবে ভেসে বেড়ায়।

মহাসাগরীয় প্লেট প্রাথমিকভাবে সমুদ্রের নীচে অবস্থান করে থাকে। অন্যদিকে, মহাদেশীয় প্লেট থেকে গঠিত হয় মহাদেশীয় ভূমি।

প্রচলিত ধারণা হল, বিভিন্ন মহাসাগরীয় প্লেট মূলত শক্ত থাকে ও সেগুলো কেবল প্লেটের সীমানার কাছাকাছি থাকা ‘সাবডাকশন জোনে’ এসে আকৃতি পরিবর্তন করে থাকে। তবে নতুন গবেষণা থেকে ইঙ্গিত মিলেছে, এক্ষেত্রে এমনটি ঘটেনি। গবেষকদের অনুসন্ধানে যে ফাটল ধরা পড়েছে, তা প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেটের মাঝামাঝিতে, যেখানে কয়েক কিলোমিটার গভীর ও কয়েকশ কিলোমিটার দীর্ঘ ফাটলও দেখা গেছে। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, একসময় যতটা ভাবা হতো মহাসাগরীয় প্লেট ততটাও শক্ত নয়।

<div class="paragraphs"><p>জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার</p></div>

জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার

“মহাদেশীয় প্লেটের ভেতরের অংশে এমনটি ঘটতে পারে, তা আমরা আগেই জানতাম। তবে, সেটা প্লেটের সীমানা থেকে অনেক দূরে ঘটে। তবে সামুদ্রিক প্লেটের ক্ষেত্রেও যে এমনটি ঘটছে, তা আমরা জানতাম না,” বলেছেন গবেষণার মূল লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো’র অধ্যাপক অ্যারকান গুন।

“আমরা টেকটোনিক প্লেটের সে তত্ত্বটি পরিমার্জন করছি, যেখানে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, পৃথিবী কীভাবে কাজ করে। আর সেইসব প্লেট দেখানোও ততটা জটিল নয় যেমনটা আমরা আগে ভেবেছিলাম,” বলেছেন ইউনিভার্সিটি অফ টরন্টো’র আরেক অধ্যাপক রাসেল পিস্কলাইওয়েক।

এ অনুসন্ধান চালাতে বিভিন্ন সুপার কম্পিউটার মডেল ও প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমাংশের চারটি মালভূমির বিদ্যমান ডেটা ব্যবহার করেছেন গবেষকরা, যেগুলো জাপান, হাওয়াই, নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে।

গবেষকরা বলছেন, এক্ষেত্রে প্রশান্ত মহাসাগরের প্লেটটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে, অনেকটা টেবিল থেকে টেবিলক্লথ টেনে নেওয়ার মতো।

কোনো টেবিলক্লথ টানলে অনেক সময় এর কাপড়ের দুর্বল অংশ ছিঁড়ে যেতে দেখা যায়। মহাসাগরীয় প্লেটের ক্ষেত্রে দুর্বল জায়গাটি হল এইসব মালভূমি, যেখানে বড় আকারের ফাটল ধরা পড়েছে।

এই তত্ত্ব নিশ্চিত হওয়ার আগে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবে গবেষকরা আশাবাদী, তাদের এই গবেষণা অন্যদের আরও তথ্য সংগ্রহের অনুপ্রেরণা যোগাবে। পাশাপাশি, মালভূমির প্রতি মনোযোগও বাড়বে এতে করে।

“তত্ত্বটি পাথরে খোদাই করা নয়। তাই আমরা এখনও নতুন তথ্য খুঁজে পাচ্ছি। সামুদ্রিক প্লেটের কেন্দ্রে থাকা যে ফাটল যে প্লেটকে বিচ্ছিন্ন করতে পারে, তা এখন আমাদের জানা। পাশাপাশি ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরির মতো ঘটনাও এর উদ্দীপক হিসেবে কাজ করতে পারে,” ব্যাখ্যা করেছেন পিস্কলাইওয়েক।

“এ নতুন তথ্য চলমান পৃথিবী সম্পর্কে আমাদের প্রচলিত ধারণাকে একেবারে বদলে দিয়েছে। পাশাপাশি গবেষণাটি দেখায়, আমাদের গ্রহের মূল বিষয়গুলো এখনও আমূল রহস্য।”

নতুন এ যুগান্তকারী গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা জার্নাল ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’-এ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *