Home দেশ-বিদেশের যু্দ্ধ বাঁচার আকুতি জানানো শিশুটির মরদেহ পাওয়া গেল ১২ দিন পর
ফেব্রুয়ারি ১১, ২০২৪

বাঁচার আকুতি জানানো শিশুটির মরদেহ পাওয়া গেল ১২ দিন পর

গত মাসের শেষের দিকে চাচা-চাচি আর তিন চাচাতো ভাইবোনের সঙ্গে গাজা সিটি থেকে পালিয়ে পার্শ্ববর্তী তাল-আল-হাওয়া যাচ্ছিল ছয় বছরের হিন্দ রাজাব। পথে তাদের বহনকারী গাড়ি ইসরায়েলের ট্যাংকের মুখে পড়ে। এরপরই গাড়িটিতে আগুন ধরে যায়। এর মধ্যে বেঁচে যায় হিন্দ। এরপর ছোট্ট শিশুটি গাড়িতে বসেই ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির (পিআরসিএস) জরুরি নম্বরে ফোন দিয়ে তাকে বাঁচাতে বলে। বলে, ‘আমি খুব ভয় পাচ্ছি। দয়া করে তোমরা আসো।’ ফোন লাইনটি যখন কেটে যায়, তখন সেখানে গুলির অনেক শব্দ হচ্ছিল।

সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তাকে উদ্ধার করতে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে গিয়েছিল পিআরসিএসের দুই প্যারামেডিক। কিন্তু এর পর থেকে তাদেরও হদিস পাওয়া যাচ্ছিল না। সেই ঘটনার ১২ দিন পর আজ শনিবার ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, ঘটনাস্থল থেকে হিন্দ ও তার পাঁচ স্বজন এবং রেড ক্রিসেন্টের দুই ক্রু-র মরদেহ পাওয়া গেছে।

হিন্দ ও জরুরি কল অপারেটরের মধ্যকার অডিও কথোপকথনের তথ্য অনুযায়ী, হিন্দ ওই সময় ইসরায়েলি বাহিনীর হাত থেকে বাঁচতে গাড়িতে থাকা স্বজনদের লাশের মধ্যে লুকিয়ে ছিল।

আজ শনিবার ফিলিস্তিনি রেডক্রিসেন্ট সোসাইটির প্যারামেডিকস সে এলাকায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়। এত দিন না পারার কারণ সেই এলাকায় ব্যাপক যুদ্ধ চলার কারণে সেখানে ঢোকা যাচ্ছিল না। তারা সেখানে যাওয়ার পর হিন্দ যে কালো রঙের কিয়া গাড়িতে ছিল, সেটি দেখতে পান। এটির উইন্ডস্ক্রিন ও ড্যাসবোর্ড টুকরা টুকরা হয়ে পড়ে ছিল। গাড়ির চারপাশে ছিল গুলির চিহ্ন।

একজন প্যারামেডিক সাংবাদিকদের বলেন, গাড়ির ভেতর থাকা ছয়টি লাশের একটি হিন্দ। এই গাড়িটির কয়েক মিটার দূরে ছিল আরেকটি পুড়ে যাওয়া গাড়ি। এটি উল্টে পড়ে ছিল। রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, হিন্দকে আনতে যে অ্যাম্বুলেন্সটি পাঠানো হয়েছিল, এটি সেটি।

পিআরসিএস এক বিবৃতিতে জানায়, ইসরায়েলের বোমা হামলায় অ্যাম্বুলেন্সের দুই ক্রু ইউসুফ আল-জেইনো এবং আহমেদ আল-মাধউন নিহত হন। পিআরসিএসের দাবি, ২৯ জানুয়ারি অ্যাম্বুলেন্সটি সেখানে পৌঁছানোর পর ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে এতে হামলা চালায়।

পিআরসিএস বিবিসিকে বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটিকে সেখানে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। তারপরও তারা শিশুটিকে উদ্ধার করতে যাওয়া রেডক্রস ক্রুদের ইচ্ছা করে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সঙ্গে সমন্বয়ের এই কাজটি করতে গিয়ে বেশ কয়েক ঘণ্টা সময় লেগে গিয়েছিল।

পিআরসিএসের মুখপাত্র নিবাল ফারসাখ বিবিসিকে চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে বলেছিলেন, ‘আমরা সমন্বয় করতে পেরেছি, সবুজ সংকেত পেয়েছি। ক্রুরা সেখানে পৌঁছানোর পর জানিয়েছিল, তারা হিন্দ যে গাড়িতে ছিল, সেটি দেখতে পেয়েছে এমনকি, তাকেও দেখতে পেয়েছে। সর্বশেষ যা শুনছিলাম তা ছিল গুলির শব্দ।’

পিআরসিএস কল অপারেটরদের সঙ্গে হিন্দের কথোপকথনের রেকর্ড প্রকাশ করেছে। এখন হিন্দের সঙ্গে আসলে কী ঘটেছে, তা তদন্ত করার জোর দাবি উঠেছে।

মেয়ের লাশ পাওয়ার আগে হিন্দের মা বিবিসিকে বলেছিলেন, তিনি মেয়ের জন্য ‘প্রতিটি সেকেন্ড, প্রতিটি মুহূর্ত’ অপেক্ষা করছি। তিনি রেড ক্রিসেন্টকে ইসরায়েল সেনাবাহিনীর সঙ্গে তাদের সমন্বয়ের ঘটনার বিস্তারিত প্রকাশ করার আহ্বান জানান।

এদিকে বিবিসি সেদিন সেই এলাকায় যেসব অভিযান চালিয়েছে সেগুলোর এবং হিন্দকে উদ্ধারে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সটির বিষয়ে ইসরায়েল সেনাবাহিনীর কাছে দুবার বিস্তারিত জানতে চেয়েছে। জবাবে তারা বলেছে, বিষয়টি দেখছে।

এরপর শনিবার তাদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির তোলা অভিযোগ সম্পর্কেও জানতে চাওয়া হয়।

যুদ্ধের নিয়ম অনুযায়ী, চিকিত্সাকর্মীদের অবশ্যই সুরক্ষিত রাখতে হবে এবং কোনোভাবে সংঘাতের লক্ষ্যবস্তু বানানো যবে না। পাশাপাশি আহত ব্যক্তিদের যতটা সম্ভব কম সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।

ইসরায়েলের অভিযোগ, ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস তাদের অস্ত্র ও যোদ্ধাদের বহনে অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *