নাশকতা মামলার আসামি হয়েও করেন দুই কলেজে চাকরি
সরকারি বিধিমালা উপেক্ষা করে একই ব্যক্তি শিক্ষকতা করছেন দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বগুড়ার নন্দীগ্রাম মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদে সদ্য যোগদান করা মাহবুবুর রশিদ ওরফে তোতা মিয়া আরেকটি কলেজে উপাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়মিত বেতন-ভাতা উত্তোলন করছেন।
বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ পদে নিয়মবহির্ভূতভাবে যোগদান করেন মাহবুবুর রশিদ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত মাহবুবুর রশিদ নাশকতা মামলারও আসামি। আদালতে মামলার পরেও গোপনে সম্পন্ন হয়েছে কলেজের নিয়োগ কার্যক্রম।
একই ব্যক্তি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত দুই কলেজে চাকরি করছেন। বিষয়টি জেনে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়রা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। এ নিয়ে এলাকায় বিরাজ করছে ক্ষোভ, চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।
থানা সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রচারকালে পৌরসভার নামুইট এলাকায় গাড়িবহরে হামলা চালিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মারধর, ককটেল বিস্ফোরণসহ একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মাহবুবুর রশিদ জড়িত ছিলেন। তিনি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে নন্দীগ্রাম থানায় দায়ের করা মামলার আসামি। মামলাটি আদালতে বিচারাধীন।
এছাড়া প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, মাহবুবুর রশিদ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সিহালীর পীরব ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ থাকা অবস্থায় কয়েক লাখ টাকা আত্মসাৎ, চাকরিবিধি লঙ্ঘন করাসহ ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।
পীরব ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাসিমা আকতার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, মাহবুবুর রশিদকে অর্থ আত্মসাৎ ও নানা অনিয়মের কারণে সাময়িক বরখাস্ত করেছি। সেই ব্যক্তি কীভাবে আরেকটি কলেজে নিয়োগ পান?
গত সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর লিখিত চিঠিতে বলা হয়, উপাধ্যক্ষ মাহবুবুর রশিদকে বিধি মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। পদ থেকে সরানোর পরও মাহবুবুর রশিদ কলেজের যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে চেকের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করাসহ নানা অনিয়মে জড়ান।
তবে এ বিষয়ে মাহবুবুর রশিদ তোতার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এদিকে মনসুর হোসেন ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষসহ তিন পদে নিয়োগে অর্ধকোটি টাকা বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে গভর্নিং বডির সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কামরুল হাসান সবুজসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে।
অভিযোগ রয়েছে, কলেজে এক বছরের জায়গায় আড়াই বছর ধরে অবৈধভাবে থাকা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মঞ্জুয়ারা খাতুনের সঙ্গে গোপনে আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কৌশলে গর্ভনিং বডির সভাপতি পদ বাগিয়ে নেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের এই নেতা।
অবৈধ অধ্যক্ষের মাধ্যমে নির্বাচিত অবৈধ সভাপতির দায়িত্বে কলেজের অধ্যক্ষ, নৈশপ্রহরী ও পিয়ন পদে নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়। এ কার্যক্রম বন্ধ করতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে গত ৫ অক্টোবর বগুড়ার আদালতে মামলা দায়ের করেন প্রতিষ্ঠানের বিদ্যোৎসাহী সদস্য ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মোহসীন আলী।
মামলা ও বিধি তোয়াক্কা না করে কলেজের অধ্যক্ষসহ তিন পদে গোপনে অর্ধকোটি টাকার বিনিময়ে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেন গভর্নিং বডির সভাপতি কামরুল হাসান সবুজ।
কামরুল হাসান সবুজ বলেন, নাশকতা মামলার ব্যাপারে তার জানা নেই। বিধি মেনেই নিয়োগ কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. শাহাদত হোসেন মন্তব্য করতে রাজি হননি।