Home সারাদেশ নলছিটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্তরে ইজিবাইক স্ট্যান্ড,দখলমুক্ত করে মুক্তমঞ্চ নির্মানের দাবি।
ফেব্রুয়ারি ৬, ২০২৪

নলছিটি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্তরে ইজিবাইক স্ট্যান্ড,দখলমুক্ত করে মুক্তমঞ্চ নির্মানের দাবি।

তাইফুর রহমান, ঝালকাঠি(নলছিটি) প্রতিনিধি:
ঝালকাঠির নলছিটিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বর দখল করে অবৈধভাবে অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়ির স্ট্যান্ড করা হয়েছে। দীর্ঘ আট বছর ধরে এই স্ট্যান্ড দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করছে শতাধিক ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক। এতে শহীদ মিনারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নসহ প্রতিনিয়ত শব্দ দূষণে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের । শহীদদের মর্যাদা রক্ষার জন্য এই চত্তরটিকে দখলমুক্ত করে সীমানাপ্রচীর দিয়ে শহীদ মিনারের পাশে একটি মুক্তমঞ্চও নির্মানের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনসাধারণ ও সুধী সমাজ। এছাড়াও  এ স্ট্যান্ডটি দ্রুত  অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ।
জানা যায়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নলছিটিতে প্রথমে উপজেলা পরিষদ চত্বরে ছোট আকারে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৯৯৮ সালে শহরের কলেজ রোডে বড় আকারে আরেকটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। এটিই এখন নলছিটির কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ২১ ফেব্রুয়ারী মহান ভাষা ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এই শহীদ মিনারে প্রশাসনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। অথচ সেই শহীদ মিনারটি এখন অরক্ষিত। নেই সীমানাপ্রাচীর। যথাযোগ্য মর্যাদা ও অযত্ন অবহেলায় পড়ে আছে শহীদ মিনার। ২০১৬ সালের দিকে শহীদ মিনার চত্বরে অবৈধভাবে অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়ির স্ট্যান্ড করা হয়। সেই থেকে শহীদ মিনার চত্বর এখন অটোস্ট্যান্ড নামে পরিচিতি পায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শহীদ মিনারটি সুরক্ষিত না থাকায় দিনের বেলায় অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়ির শব্দ দূষণ, চালকদের একে অপরের সঙ্গে বাকবিতন্ডা লেগেই থাকে। আর রাতের বেলায় নির্জন হওয়ায় বসে মাদকের আড্ডা। অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়ির চালক ও মাদকসেবীদের মল-মুত্রের গন্ধে শহীদ মিনারের চারপাশে মানুষের যাওয়া সম্ভব নয় বলেও জানান স্থানীয়রা। সোমবার(৫ফেব্রæয়ারী) সকালে গিয়ে দেখা যায়, অরক্ষিত শহীদ মিনার চত্বরে সারি সারি অটোবাইক রাখা। শহীদ মিনারটি ময়লা,আবর্জনা, দখল ও দূষণে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে। দেখে বুঝার উপায় নেই এটা উপজেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার।
অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়ির চালকরা জানান, এ এলাকাটি অত্যান্ত ব্যস্ততম। এখানে অটো রাখার মতো কোনো স্ট্যান্ড নেই। সড়কের ওপারে সিএনজি, ডাইসু, ম্যাজিক গাড়ি পার্ক করলে সড়কে যানজট লেগে যায়। তাই তাঁরা শহীদ মিনার চত্বরে খালি জায়গায় অটোস্ট্যান্ড করেছে। শহীদ মিনারে কোন জাতীয় অনুষ্ঠান হলে তাঁরা নিজেদের উদ্যোগে চত্বর পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে দেন। তখন অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়িগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।
নলছিটি পাবলিক লাইব্রেরীর সাধারণ সম্পাদক শামছুল আলম বাহার বলেন, শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্য নলছিটি শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পরার্শে মনোরম পরিবেশে ১৯৯৮ সালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়। কিন্তু নির্মাণের পর সেই শহীদ মিনারটির সুরক্ষা করা হয়নি। অরক্ষিত অবস্থায় রয়ে গেছে। এ সুযোগে অটোবাইক ও ম্যাজিক গাড়ির স্ট্যান্ড করা হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন। অটোস্ট্যান্ডটি সুবিধাজনক একটি স্থানে সরিয়ে নিলে সবার জন্য ভালো হয়।
স্থানীয় সমাজ উন্নয়ন কর্মী বালী তূর্য বলেন, আমাদের উপজেলার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য কিংবা সভা করার জন্যও আমরা এখানে শহীদ মিনারের পাশেই একটা মুক্ত মঞ্চ চাই।তাতে এই শহীদ মিনারের ঐতিহ্য রক্ষাও সহজ হবে।তাই অতি দ্রুত একটি মুক্ত মঞ্চ নির্মান করে এবং সীমানপ্রাচীর নির্মান করে দিলে এটিকে পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ রাখা সহজ হবে।।
নলছিটি পৌরসভার মেয়র আব্দুল ওয়াহেদ খান বলেন, স্থানীয় এমপি মহোদয় ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করে শহীদ মিনার চত্বর থেকে অটোস্ট্যান্ড সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব।
নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, এবিষয়ে ইতোমধ্যে পৌরসভার মেয়র ও সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে দ্রæততম সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বাউন্ডারি ওয়াল (সীমানা প্রাচীর) নির্মাণ ও সৌন্দর্য বর্ধন করতে বলা হয়েছে। তাঁরা ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *