Home সারাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জবি উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম
জানুয়ারি ৩১, ২০২৪

এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন জবি উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম

তৌকির আহমেদ, জবি প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির ২০২৪-২০২৫ বর্ষের জন্য নতুন কাউন্সিল গঠিত হয়েছে৷ এতে চতুর্থ সর্বোচ্চ ৪৫৫ ভোট পেয়ে সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম।
মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এশিয়াটিক সোসাইটি প্রাঙ্গনে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোট গণনা শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক শরীফুল্লাহ ভূঁইয়া ফলাফল ঘোষণা করেন।
এতে সভাপতি পদে ৪৯০ ভোট পেয়ে ড. হারুন-অর-রশিদ, সাধারণ সম্পাদক পদে ৫৮৯ ভোট পেয়ে ড. মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান নির্বাচিত হয়েছেন।
সহ-সভাপতি পদে ড. হাফিজা খাতুন, ড. সাজাহান মিয়া, ড. ইয়ারুল কবীর, কোষাধ্যক্ষ পদে ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ ও সম্পাদক পদে ড. মো. আবদুর রহিম নির্বাচিত হয়েছেন।
সদস্য পদে ড. এ. কে. এম গোলাম রব্বানী, ড. মাহবুবা নাসরীন, অধ্যাপক লুৎফর রহমান, অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, ড. আশা ইসলাম নাঈম, ড. আবদুল বাছির, ড. নাজমা খান মজলিস, ড. মো. আবদুল করিম, ড. শুচিতা শরমিন ও ড. সাব্বীর আহমেদ নির্বাচিত হয়েছেন।
বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটির সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমাকে নির্বাচিত করায় এশিয়াটিক সোসাইটির সকল সদস্যকে ধন্যবাদ। গবেষণার গুণগত পরিবর্তন ও বৈচিত্র্য আনার দিকেই আমার মূল লক্ষ্য থাকবে। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের শিক্ষকদের গবেষণায় অনুপ্রাণিত করার উদ্যোগ নেবো। পাশাপাশি সুবক্তাদের এশিয়াটিক সোসাইটিতে নিয়ে আসার প্রচেষ্টা থাকবে। সর্বোপরি মুক্তিযুদ্ধের চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’
অধ্যাপক সাদেকা হালিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতকে প্রথম শ্রেণীতে দ্বিতীয় ও স্নাতকোত্তরে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে পড়াশোনা শেষ করেন। জবি উপাচার্য সাদেকা হালিমের বাবা ফজলুল হালিম চৌধুরী ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। তিনি ১৯৭৬-১৯৮৩ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বাবার স্বপ্ন সত্যি করে পড়াশোনা শেষে শিক্ষক হিসেবে তিনি যোগ দেন নিজ বিভাগেই।
পরবর্তীতে কমনওয়েলথ বৃত্তি নিয়ে পড়তে যান কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে। সেখান থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি ডিগ্রি নেন ড. সাদেকা হালিম। এরপর কমনওয়েলথ স্টাফ ফেলোশিপ নিয়ে পোস্ট-ডক্টরেট করেন যুক্তরাজ্যের বাথ ইউনিভার্সিটি থেকে।
শিক্ষকতার পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন ড. সাদেকা হালিম। জাতীয় শিক্ষানীতি কমিটি ২০০৯-এর ১৮ জন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদের কমিটিতে একজন সদস্য ছিলেন তিনি। বাংলাদেশ সোশিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান উইমেন ফর উইমেনের নির্বাহী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য, চার মেয়াদে শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য ও তিনবার সিনেট সদস্য ছিলেন সাদেকা হালিম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সোশ্যাল সায়েন্সের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন এই শিক্ষাবিদ।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে ড. সাদেকা হালিমের প্রায় অর্ধশত গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। লিঙ্গ-সমতা, বন ও ভূমি, উন্নয়ন, আদিবাসী ইস্যু, মানবাধিকার এবং তথ্য অধিকার প্রভৃতি তার গবেষণার বিষয়। ডিএফআইডি, ইউএনডিপি, অক্সফাম, এসডিসি, সেভ দ্য চিলড্রেন, ইউএসএইড প্রভৃতি আন্তর্জাতিক সংস্থায় গবেষক ও পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছেন এই সমাজবিজ্ঞানী ।
প্রথম হিসেবে ড. সাদেকা হালিমের রয়েছে বেশ কিছু অর্জন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সালের জুন পর্যন্ত তথ্য কমিশনে প্রথম নারী তথ্য কমিশনার পদে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০১৭ সালে সাদেকা হালিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ইতিহাসে প্রথম নারী ডিন নির্বাচিত হন। প্রথম নাজমুল করিম গোল্ড মেডেলিস্ট তিনি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য এবং উপাচার্যের মেয়ে হয়ে উপাচার্য হবার গৌরব অর্জন করেন তিনি।
২০২২ সালে সাদেকা হালিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য হিসেবে মনোনীত হন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে সেমিনার, ওয়ার্কশপ ও আলোচনা সভা আয়োজন উপ-কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন তিনি।
ড. সাদেকা হালিম অতিথি অধ্যাপক হিসেবে অস্ট্রিয়ার ভিয়েনার বকু বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করেছেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন স্টাডিজ বিভাগ ও আয়ারল্যান্ডের বেলফাস্টের কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হায়ার এডুকেশন লিংক প্রোগ্রামের অধীনে ভিজিটিং ফেলো ছিলেন কিছু দিন।
বর্তমানে ড. সাদেকা হালিম বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য-মনোনীত এবং ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইউজিসি মনোনীত সিন্ডিকেট সদস্য। তিনি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ট্রাস্টি বোর্ডেরও সদস্য।
উল্লেখ্য, ‘বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি’ মৌলিক গবেষণার অগ্রণী প্রতিষ্ঠান। ১৯৫২ সালে এশিয়ার মানুষের জীবন-কর্ম এবং প্রকৃতি বিষয়ে গবেষণায় আত্মনিয়োগে গবেষকদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ‘পাকিস্তান এশিয়াটিক সোসাইটি’ নামে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে পরের বছর প্রতিষ্ঠানটির নাম বদলে রাখা হয় ‘বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *