হুহু করে বাড়ছে মসলার দাম
গত কয়েক বছরের তুলনায় চলতি বছরে বহুগুণ বেড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে বিভিন্ন প্রকারের মসলার আমদানি। এসব মসলার বেশিরভাগই সরাসরি ঢুকছে দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে। সেখান থেকেই বাজারজাত হচ্ছে সারা দেশে; কিন্তু ঊর্ধ্বমুখী আমদানির পরেও সুফল নেই খুচরা বাজারে। হুহু করে বাড়ছে এসব পণ্যের দাম। খোদ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জেই গত দুই মাসে দফায় দফায় চারশ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আমদানির ক্ষেত্রে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপকে দাম বৃদ্ধির কারণ বলছেন আমদানিকারকরা। তাদের অভিযোগ, ডলার সংকটও সমানভাবে ভোগাচ্ছে ব্যবসায়ীদের।
গত বছরের নভেম্বর খাতুনগঞ্জে প্রতি কেজি এলাচে ৫০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ১০০ টাকা, লবঙ্গে ২০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা, দারুচিনিতে ৪০ টাকা বেড়ে ৪১০ টাকা, জায়ফলে ৩০ টাকা বেড়ে ৬৭০ টাকা, ভারতীয় শুকনা মরিচে ২০ টাকা বেড়ে ২৮০ টাকা, ভারতীয় হলুদে ২০ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা, দেশি হলুদে ২৫ টাকা বেড়ে ২০০ টাকা, কালিজিরায় ১০ টাকা বেড়ে ২৪০ টাকা, মেথি ১৫ টাকা বেড়ে ১২৫ টাকা ও ধনিয়ায় ২৫ টাকা বেড়ে ১৮৫ টাকায় বিক্রি হয়। সে সময় প্রতি কেজি মিষ্টি জিরা ২৮০ টাকা, জয়ত্রী ২ হাজার ৪৫০ টাকা ও তেজপাতা ৬০ টাকায় বিক্রি হয়।
ডিসেম্বরে এসে প্রতি কেজি জয়ত্রী ৪০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৮৫০ টাকা, এলাচ ৩০০ টাকা বেড়ে ২ হাজার ৪০০ টাকা, লবঙ্গ ৩০০ টাকা বেড়ে ১ হাজার ৮০০ টাকা, ভারতীয় শুকনা মরিচ ১৫০ টাকা বেড়ে ৪৩০ টাকা, দারুচিনি ৫০ টাকা বেড়ে ৪৬০ টাকা, মিষ্টি জিরা ৪০ টাকা বেড়ে ৩২০ টাকা, জায়ফল ৩০ টাকা বেড়ে ৭০০ টাকা, তেজপাতা ৩০ টাকা বেড়ে ৯০ টাকা, কালিজিরায় ২০ টাকা বেড়ে ২৬০ টাকা, মেথি কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকা, ভারতীয় হলুদ ১০ টাকা বেড়ে ২১০ টাকা, দেশি হলুদ ৫ টাকা বেড়ে ২০৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তা ছাড়া প্রতি কেজি ধনিয়া (দেশি) ১৯০ টাকা, ধনিয়া (ভারত) ২০৫ টাকা, শুকনা লাল মরিচ (দেশি) ৩৩০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, চীনা আদা ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকা ও চায়না রসুন ২০০ থেকে ২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমানেও একই দরে বিক্রি হচ্ছে পণ্যগুলো।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয় পেঁয়াজ, রসুন, দারুচিনি, লবঙ্গ, জায়ফল, জয়ত্রী, এলাচ, ধনিয়া, জিরা, আদা ও হলুদসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা। ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৩ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ৩০ হাজার ৭১৭ টনের বেশি মসলা। ২০২২ সালে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয় ১ লাখ ৫১ হাজার ৯৩৩ টন মসলা। অপর দিকে গত বছর আমদানি হয় ১ লাখ ৮২ হাজার ৬৫০ টন। মসলা আমদানির মাধ্যমে ২০২২ সালে ৪৫৩ কোটি ৪৮ লাখ ১৬ হাজার ৮০৯ টাকা রাজস্ব আয় করে কাস্টমস। অপর দিকে গত বছর আয় হয় ৬৬৩ কোটি ৭৯ লাখ ৪৫ হাজার ৮০৬ টাকা।
চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের উপ-পরিচালকর ড. মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের প্রথম ছয়মাসেই আমদানি হয়েছে ২ হাজার ৪১৯ টন এলাচ। শুধু ডিসেম্বর মাসেই এসেছে ৮২ টন এলাচ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে এলাচ এসেছে ৪ হাজার ৮৪৪ টন। ২০২০-২১ অর্থবছরে এসেছে ৩ হাজার ৯০৬ টন।
অন্যদিকে চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই আমদানি হয়েছে ৪ হাজার ৪৭০ টন দারুচিনি। শুধু ডিসেম্বর মাসেই এসেছে ৬৯৮ টন। অন্যদিকে ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি করা হয়েছে ১৫ হাজার ৭৫২ টন দারুচিনি। গত ডিসেম্বর মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়েছে ৩৩ টন লবঙ্গ। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই আমদানি হয়েছে ৪২২ টন। এর আগের অর্থবছরে এসেছে ১ হাজার ২৭৫ টন লবঙ্গ।
চাহিদার পাশাপাশি আমদানি বেড়েছে জিরারও। শুধু ডিসেম্বর মাসেই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয়েছে ৪ হাজার ৭৪১ টন জিরা। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসেই আমদানি হয়েছে ৬ হাজার ৩০ টন। গত অর্থবছরে এসেছিল ৩ হাজার ৬৬৯ টন।
খাতুনগঞ্জের মসলা আমদানিকারক ফারুক আহমদ বলেন, ‘মসলাকে বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তাই এ পণ্য আমদানিতে শুল্ক বেশি পরিশোধ করতে হয়। প্রায় ৫১ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়। পাশাপাশি ডলার রেট বেশি থাকার কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এ কারণে মসলার বাজার চড়া।’
চট্টগ্রাম মসলা আমদানিকারক সমিতির সভাপতি অমর কান্তি দাস বলেন, ‘মসলার ব্যবসাটা নির্ভর করে ভারতের ওপর। সেখানে দাম বাড়লে এখানেও বেড়ে যায়। আর এখন ডলারসংকট তো আছেই। শতভাগ মার্জিন দিয়ে মসলা আমদানি করাটা এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গসহ বিভিন্ন মসলার দাম বেড়ে গেছে।’