Home সারাদেশ কলাম-এক অর্থ বছরে ত্রিশ  হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া সাস্থ্য ক্ষাত থেকে উপজেলা পর্যায়ে নাগরিকদের প্রাপ্তি ও কিছু প্রশ্ন।।
জানুয়ারি ১১, ২০২৪

কলাম-এক অর্থ বছরে ত্রিশ  হাজার কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া সাস্থ্য ক্ষাত থেকে উপজেলা পর্যায়ে নাগরিকদের প্রাপ্তি ও কিছু প্রশ্ন।।

তাইফুর রহমান,সংবাদকর্মী ও লেখক (ঝালকাঠি)।
দেশের মানুষের চিকিৎসার জন্য উপজেলা পর্যায়ের সাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলিতে অবকাঠামো এবং প্রযুক্তির অনেক সুবিধা থাকলেও সিনিয়র চিকিৎসকরা সেখানে থাকতে চান না।তারা শহরমুখী, কারন কি সেখানে পয়সা বেশি?
যদিও চিকিৎসাকে একটি সেবা হিসেবেই তারা কাজ শুরুর কথা দেন,কিন্তু বাস্তবতায় তারা রাস্ট্রের নাগরিকদের প্রতি কোনো দ্বায়বদ্ধতা অনুভব করেন কি?
অথচ তারা প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে,কলেজে এবং মেডিকেল কলেজে রাস্ট্রের সাধারণ মানুষের দেয়া বিভিন্ন প্রকার করের টাকায় তথা রাস্ট্রীয় রাজস্বের বিনিয়োগেই শিক্ষা লাভ করেছেন। তারা চিকিৎসক হয়ে যাওয়ার আগে চিকিৎসাকে একটি মহৎকর্ম বা সেবা হিসেবে আক্ষায়িত করলেও বাস্তবে পেশাগত জীবনে আসলে তারা কি মানতে পারেন?
বিভিন্ন সময়ে সংবাদমাধ্যম কিংবা বাস্তবেও অভিযোগ পাওয়া যায় চিকিৎসকদের বানিজ্যিক চিন্তা,বানিজ্যিক আচরণ এবং রোগীদের সাথে দুর্ব্যবহার করার। কিন্তু সেই একই চিকিৎসক যিনি সরকারি হাসপাতালে রোগীকে অবহেলা করেছেন তিনিই আবার বেসরকারি হাসপাতালে কিংবা ব্যক্তিগত চেম্বারে খুব সুন্দর ব্যবহার করেন।সরকারি হাসপাতালে ধরা যাক রোগীর চাপ বেশি থাকায় তারা একই কাজ প্রতিদিন করতে করতে বিরক্ত হয়ে যান,তাহলে বেসরকারি হাসপাতাল বা চেম্বারে কেন এমন অভিযোগ শোনা যায় না?
এরপরে এদেশের চিকিৎসা ক্ষাতে আরেক সমস্যা অতিরিক্ত পরীক্ষা নীরিক্ষা বা টেস্ট।রোগ নির্নয়ে রোগীর বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষা আবশ্যক, কিন্তু অনেক সময়ই দেখা যায় একজন চিকিৎসক ততোধিক টেস্ট দিয়েছেন,সেই একই ব্যবস্থাপত্র দেখে অন্য চিকিৎসক তারই অনেক টেস্টকে অপ্রয়োজনীয় মনে করছেন।এখানে একটি প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, আসলে এই পরীক্ষা নীরিক্ষা কার লাভের জন্য দেয়া হয়?এখানে একটি বিষয় চিন্তা করে দেখা যায়,সাধারণত চিকিৎসকরা বিভিন্ন বেসরকারি ক্লিনিক কিংবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে যেই চেম্বারে প্রাক্টিস করেন,অধিকাংশ ক্ষেত্রে তারা তার ভাড়া বাবদ কোনো অর্থ না দিলেও নিজেদের ব্যবস্থাপত্রের ফি নিতে পারেন।তাহলে এই বড় বড় ভবনের ভাড়ার যোগান হিসেবেও কি টেস্টগুলো প্রভাব রাখে?
বিভাগীয় সরকারি হাসপাতালে সবসময়ই দেখা যায় অতিরিক্ত রোগীর চাপ,চিকিৎসা সরঞ্জামের সংকট, অনেক প্রযুক্তি থাকলেও তা অচল থাকায় রোগীদের বাধ্য হয়েই বাইরে টেস্ট করাতে হয়।প্রশ্ন হলো বিভাগীয় হাসপাতালে এত চাপ কেন? এ দেশের প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি করে সাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকার কথা, তাহলে সেখানে কি শুধু প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে?বাস্তবে প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে ৩১-৫০ শয্যার হাসপাতালগুলোর অধিকাংশ শয্যাই খালি থাকে, কারন হয় সেখানে হয় চিকিৎসক সংকট থাকে অথবা সেবার সরঞ্জাম সংকট থাকে।যারফলে ছোট কিংবা মাঝারি সংকটেও বিভাগীয় হাসপাতালেই শেষ ভরসায় রোগীর চাপ বেড়ে যায়।অনেক উপজেলাতে সরকারি হাসপাতালে অপারেশন থিয়েটার এবং যন্ত্রাংশ থাকলেও তা অচল পরে থাকায় সাধারণ সিজারিয়ান অপারেশনের জন্যও রোগীদের বেসরকারি ক্লিনিকেই যেতে হয়।কারন অনুসন্ধান করা হলে দেখা যায় অধিকাংশ সময় সরকারি হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকট থাকে বিধায় অনেক অবকাঠামো এবং প্রযুক্তির সরঞ্জাম অকেজো হয়ে যায়, যা রাস্ট্রীয় রাজস্বেরই অপচয়।এখানে একটি প্রচলিত সমস্যা শোনা যায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা উপজেলা পর্যায়ে থাকতে চান না,তারা শহরমুখী।এখানে প্রশ্ন হলো তাহলে উপজেলায় এই অর্থ খরচ কেন করা হয়,আর সবাইই কি শহরে চিকিৎসার ব্যায়ভার চালাতে সক্ষম?
উপজেলা পর্যায়ের ক্লিনিকে যদি সিজারিয়ান বা অপারেশন হতে পারে তাহলে সরকারি হাসপাতালে কেন হয় না,এটি কি কেবল জনবল সংকট নাকি অর্থের সংকট?
এরপরে আরেক চক্র ঔষধ কোম্পানিগুলোর বানিজ্যিক কুচিন্তা।ঔষধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদেরকে নানান উপঢৌকন দিয়ে ঔষধ লিখতে চাপ প্রয়োগ করেন বলেও শোনা যায়।কোনো সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকদের চেম্বারের বাইরে বের হলেই রোগীর ব্যবস্থাপত্রের ছবি তুলতে এক ঝাক ভদ্র পোশাকের লোকেরা ঝাপিয়ে পরেন।তাতে নিজেদের কোম্পানির ঔষধের নাম খোজেন,রোগী এবং চিকিৎসক উভয়ই বিরক্ত এবং বিব্রত হলেও এটিই তাদের বানিজ্যিক কৌশল।তার ব্যবসার জন্য হয়তো আপনাকেও কিছু বাড়তি অপ্রয়োজনীয় ঔষধ দেয়া হতেই পারে।ঔষধ কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে আরও বড় অভিযোগ হলো চিকিৎসকদের উপঢৌকন হিসেবে সরাসরি অর্থ প্রদান।এখানে একটা প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, এই যে ঔষধ কোম্পানিগুলো চিকিৎসকদের পেছনে এত এত উপঢৌকন বা উপহারে বিনিয়োগ করেন,সেই বিনিয়োগকৃত অর্থ কিভাবে তুলে নেন?তাহলে কি সেই অর্থ তারা রোগীর শরীরে অপ্রয়োজনীয় ঔষধ ঢুকিয়েই কামিয়ে নেন?
তাহলে সর্বশেষ প্রশ্ন থেকে যায়,প্রতি অর্থবছরে প্রায় ৩৮-৪০ হাজার কোটি টাকা এদেশে শুধু সাস্থ্য ক্ষাতের জন্য বরাদ্দ করা হয়,সেই রাস্ট্রীয় কোষাগারের টাকায় রাস্ট্রের নাগরিকদের কতটা সেবা সাস্থ্য ক্ষাত দিতে পারছে?এই উত্তরই বা নাগরিকরা কার কাছে চাইবেন?উপজেলা পর্যায়ের হাসপাতালের উন্নয়নই কি পারে বিভাগীয় হাসপাতালের রোগীর বাড়তি চাপ সামাল দিতে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *