Home নির্বাচন কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে ভোটদানে আগ্রহ কম ভোটারের।
ডিসেম্বর ৩১, ২০২৩

কুড়িগ্রামের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে ভোটদানে আগ্রহ কম ভোটারের।

মোঃ মশিউর রহমান বিপুল

কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধিঃ

কুড়িগ্রামে প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে ভোটারের আগ্রহ কম ভোট দানে। এসব চরের লোকেরা প্রার্থীদের দেখা না পাওয়ায় প্রার্থীতা বাছাইয়ে সিদ্ধান্তহীনতায়।

আসছে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশের বৃহৎ সীমান্তবর্তি এবং নদ নদীময় জেলা কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলে সাধারণ ভোটারের ভোট প্রদানে আগ্রহ কম। প্রতিদ্বন্দ্ধী প্রার্থীরা এসব চরাঞ্চলে গণসংযোগ না করায় ভোটাররাও দ্বিধাদন্দে রয়েছে প্রার্থীতা বাছাইয়ে। এছাড়াও জেলার ৯টি উপজেলায় দিয়ে বয়ে যাওয়া ১৬টি নদনদীতে চরা ল রয়েছে প্রায় পাঁচশতাধিক। এরমধ্যে প্রায় ৭/৮লাখ মানুষের বসবাস। জেলার তিনদিকে ভারতের আসাম,মেঘালয় এবং পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের সীমানা রয়েছে প্রায় তিনশ কিলোমিটার। জেলার মূল খন্ডের সাথে নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন রয়েছে অস্টমিরচর, নারায়ণপুর,সাহেবের আলগাসহ বেশ কিছু ইউনিয়ন। বৃহৎ প্রত্যন্ত চরাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় নিরাপত্তাহীনতা কাজ করছে ভোটারের মনে। ফলে আসন্ন সংসদ নির্বাচন নিয়ে তেমন আনন্দ বা উৎসব বিরাজ করছে না এসব অঞ্চলে।

চর যাত্রাপুরের ভোটার শাহ আলম বলেন, শহরের মানুষের যেমন ভোটার হিসেবে মূল্যায়ন করা হয় সেভাবে আমাদের চরের ভোটারকে মূল্যায়ন করা হয় না। এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থী আসেনি আমাদের নিকট ভোট চাইতে। তাই আমরা ভোট দিতে যামে না নাযামো ঠিক নাই। কোন প্রার্থী বাছাই করতে পারিনি আমরা ভোটাররা।

একই এলাকার ভোটার শাহের আলী বলেন,গত ২০১৮সালের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়েছি। আমার সামনে একজন ভোটার কক্ষে ঢুকছে আর একজন লোক এসে আমাকে বললো আপনার ভোট হয়ে গেছে। আপনি চলে যান। মন খারাপ করে চলে আসছি।  আমরা নিরাপত্তা বেশি চাই এবং নিজের ভোট যেন নিজেই দিতে পাই।

চিড়া খাওয়া মাঝের চর গ্রামের ভোটার খলিলুর রহমান বলেন,সরকার যদি সুষ্ঠু ভোট আর নিরাপত্তা দেয় চরের মানুষকে তাহলে ভোট দিতে যাবো। না হলে যাবো না।

রলাকাটা চরের ভোটার মঈনুদ্দীন বলেন,আমার ৪৭ বছর হলো আমি মেম্বার,চেয়ারম্যানি ভোট ছাড়া সরকারি ভোট দিতে পারিনি। কেন্দ্রে গিয়ে দেখি আমার ভোট হয়ে যায়। এবার যেন আমি সরকারি ভোট দিতে পারি এমন নিরাপত্তা চাই ভোটে।

পোড়ার চরের নারী ভোটার মর্জিনা বেগম বলেন,হামরা সরকারি ভোট দিমো। প্রার্থীতো অনেক দ্বাঁড়াইছে। এরমধ্যে যারা চরের রাস্তাঘাট,নদী ভাঙ্গন রোধ এবং চরের মানুষের উন্নয়ন করবে সেমন প্রার্থীকে ভোট দিবো।

সাহেবের আলগা ইউনিয়নের ভোটার সহিদুর রহমান বলেন,আমাদের ইউনিয়ন নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন। নৌকা ছাড়া কোন যোগাযোগ করার ব্যবস্থা নেই। তবে যেকোন ভোট অনুষ্ঠিত হলেও এই এলাকায় আমরা মিলেমিশে ভোট দেই। আমাদের মধ্যে কোন মারামারি বা ঝগড়া-বিবাদ হয় না।

জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানাযায়,কুড়িগ্রাম জেলায় ৯টি উপজেলায় ১১টি থানা নিয়ে ৪টি আসন গঠিত। এরমধ্যে মোট ভোটার-১৭লাখ ৮২হাজার ৩২জন। পুরুষ-৮লাখ ৮৪হাজার ২৬৭জন,নারী-৮লাখ ৯৭হাজার ৭৫০জন এবং হিজড়া-১৫জন। মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে-৭০২টিতে ভোট কক্ষ রয়েছে-৪হাজার ৪৩টি।

এরমধ্যে কুড়িগ্রাম-১ আসন নাগেশ্বরী-১০৩টি কেন্দ্রের মধ্যে ১০টি ঝুঁকিপূর্ণ, ভূরুঙ্গামারী-৮৩টিতে ২৬টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং কচাকাটা থানায় ৩৪টি কেন্দ্রের মধ্যে সব গুলোই ঝুঁকিপূর্ণ। ভোট কেন্দ্র ২২০টিতে ভোট কক্ষ রয়েছে ১১৯২টি। এই আসনে ভোটার রয়েছে ৫লাখ ২৯হাজার ১৬৩জন। পুরুষ-২লাখ ৬৩হাজার ২৫৩জন এবং নারী-২লাখ ৬৫হাজার ৯০৭জন।

কুড়িগ্রাম-২আসনে কুড়িগ্রাম সদর-৯১টির মধ্যে ৩৫টি ঝুঁকিপূর্ণ,ফুলবাড়ি-৫০টির মধ্যে ১৪টি ঝুঁকিপূর্ণ,রাজারহাট-৬৩টির মধ্যে ১৫টি ঝুঁকিপূর্ণ। ভোট কেন্দ্র-২০৪টির মধ্যে ৬৪টি ঝুঁকিপূর্ণ। ভোট কেন্দ্র ২০৪টিতে ভো কক্ষ-১২৪৭টি রয়েছে। ভোটার-৫লাখ ৬৭হাজার ২০২জনের মধ্যে পুরুষ- ২লাখ ৮০হাজার ৭৩৬জন এবং নারী-২লাখ ৮৬হাজার ৪৬৩জন।

কুড়িগ্রাম-৩আসন উলিপুর থানায় ১৩৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৭৯টি ঝুঁকিপূর্ণ।ভোট কেন্দ্র-১৩৯টিতে ৮০৬টি ভোট কক্ষ আছে। ভোটার ৩লাখ ৪৭হাজার ২৬১জনের মধ্যে পুরুষ- ১লাখ ৭১হাজার ৫৭০জন এবং নারী-১লাখ ৭৫হাজার ৬৯১জন।

কুড়িগ্রাম-৪আসনে চিলমারী-২৯টির মধ্যে ১৫টি ঝুঁকিপূর্ণ,রৌমারী-৬১টির মধ্যে ৫১ ঝুঁকিপূর্ণ,রাজিবপুর-২৭টির মধ্যে ০৮টি ঝুঁকিপূর্ণ এবং ঢুষমারা থানায় ২২টির সবকটি ঝুঁকিপূর্ণ। এই আসনে-১৩৯টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯৬টি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। ভোট কেন্দ্র-১৩৯টিতে ভোট কক্ষ ৭৯৮টি রয়েছে। ভোটার-৩লাখ ৩৮হাজার ৪০৬জন। এরমধ্যে পুরুষ-১লাখ ৬৮হাজার ৭০৮জন এবং নারী-১লাখ ৬৯হাজার ৬৮৯জন।

জেলা রিটার্ণিং কর্মকর্তা সাইদুল আরীফ বলেন,সাধারণ ভোটারদের নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে আসতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন বলে জানান জেলা রিটার্ণিং কর্মকর্তা। ভোট সুষ্ঠু করতে পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‍্যাব এবং সেনাবাহিনীর পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *