Home দর্শনীয় স্থান দিনাজপুরের রামসাগর
ডিসেম্বর ২৩, ২০২৩

দিনাজপুরের রামসাগর

প্রজাপ্রিয় রাজা রামনাথের রাজত্বকালের (১৭২২-১৭৬০) অমর কীর্তিই শুধু নয়, আমাদের দিনাজপুরের এক দর্শনীয় স্থান। তখন ছিল না বিদ্যুত্, গভীর, অগভীর নলকূপ বা আধুনিক সেচব্যবস্থা। পানীয়জলের জন্য কূপ খনন করা হতো। প্রায় প্রতিটি জনপদে অসংখ্য দিঘি সেকালের সাক্ষ্য বহন করছে। বিভিন্ন স্থানে দিঘিগুলোর খনন ইতিহাস নিয়ে ছড়িয়ে আছে অনেক কিংবদন্তি ও উপাখ্যান।

রামসাগর সম্পর্কে জনশ্রুতি আছে—১৭৫০ খ্রিষ্টাব্দে একটানা অনাবৃষ্টি, খরা তথা পানির অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে পড়ে হাজার হাজার প্রজা। অনাবাদি থাকে মাঠ বা জমি। দিঘি-নালা শুকিয়ে চৌচির। এই অবস্থা বৃদ্ধ রাজার আহার-নিদ্রা কেড়ে নেয়। একদিন রাজা স্বপ্নাদেশ পেয়ে মাত্র ১৫ দিনে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক দিয়ে একটি পুকুর খনন করান। কিন্তু পুকুরে একফোঁটা পানি মিলল না। তখন রাজা স্বপ্নে দৈববাণী পেলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্র রামনাথকে দিঘিতে বলি দিলে পানি উঠবে। স্বপ্নাদিষ্ট রাজা দিঘির মাঝখানে একটি ছোট মন্দির নির্মাণ করলেন। গ্রামে, গঞ্জে ঢাকঢোল পিটিয়ে মহরত বাজিয়ে প্রজাদের জানানো হলো, কাল ভোরে দিঘির বুকে পানি উঠবে। সেই ভোরে যুবরাজ রামনাথ সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে হাতির পিঠে চড়ে এলেন দিঘির পাড়ে। সিঁড়ি  বেয়ে নেমে গেলেন মন্দিরে। সঙ্গে সঙ্গে দিঘির নিচ থেকে অঝোর ধারায় পানি উঠে চোখের পলকে ভরে গেল বিশাল দিঘি। যুবরাজের মাথার সোনার মুকুট পানিতে ভেসে গেল। যুবরাজ রামের স্মরণে দিঘির নাম রাখা হলো ‘রামসাগর’।

দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণে তাজপুর গ্রামে অবস্থিত রামসাগরের আয়তন ৪৩৭৪৯২ বর্গকিলোমিটার, গভীরতা গড়ে ১০ মিটার ও পাড়ের উচ্চতা ১৩.৫ মিটার। দিঘির চারদিকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার সড়কের দুধারে রয়েছে  দেবদারু, ঝাউ ও মুছকন্দ ফুলের গাছ, উন্নতমানের ২০০ প্রজাতির গোলাপ, লালমাটির ছোটখাটো টিলা। দিঘির পানি কিছুটা নীলাভ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *