লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় তেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা
লোহিত সাগরে অব্যাহতভাবে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালিয়ে আসছে ইয়েমেনের বিদ্রোহী গোষ্ঠী হুতিরা। তাদের হামলার মুখে এ নৌপথ থেকে পিছিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন জাহাজ কোম্পানি। হুতিদের এমন হামলা অব্যাহত থাকায় বিশ্ববাজারে তেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইয়েমেনের হামলার কারণে বিভিন্ন কোম্পানি লোহিত সাগর দিয়ে জাহাজ চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শিপিং জায়ান্ট মার্স্ক জানিয়েছে, তারা তাদের জাহাজগুলোকে লোহিত সাগর থেকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে তারা আফ্রিকার কেপ অব গুড হোপ দিয়ে ঘুরিয়ে জাহাজ পরিচালনা করবে।
বহুল ব্যবহৃত এ নৌপথে আন্তর্জাতিক জাহাজ চলাচলে নিরাপত্তা প্রদোনের কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, বাহরাইন, নরওয়ে এবং স্পেনের সমন্বয়ে যৌথভাবে নিরাপত্তা দল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে।
মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন মঙ্গলবার অন্তত ৪০ দেশের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তিনি এসব দেশকে হুতিদের হামলা থেকে নৌপথকে নিরাপদ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান।
লোহিত সাগরে জাহাজে হামলায় তেলের দাম বৃদ্ধির আশঙ্কা
ইসরায়েলের পক্ষে যুদ্ধে যাওয়া নাগরিকদের বিচার করবে দক্ষিণ আফ্রিকা
লোহিত সাগরের এ নৌপথটি বিশ্বে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ। এ পথ দিয়ে ভোগ্যপণ্যও পরিবহন হয়ে থাকে। নৌপথটির উত্তরে রয়েছে বাবে এল মান্দেব আর দক্ষিণে রয়েছে সুয়েজ খালের অবস্থান।
হুতিরা জানিয়েছে, এ নৌপথে তারা নজর রাখছে। তারা ইসরায়েলের সাথে সংশ্লিষ্ট যে কোনো ধরনের জাহাজে হামলা চালাবে। ফিলিস্তিন ইসরায়েলে যুদ্ধ চলমান থাকায় তারা এমন আচরণের কথা জানিয়েছে।
সোমবার অয়েল জায়ান্ট বিপি জানিয়েছে, তারা লোহিত সাগরের এ পথ দিয়ে ক্রুড অয়েলের সব জাহাজ চলাচল সাময়িক স্থগিত করেছে। তবে এনার্জি জায়ান্ট শেল পরিস্থিতির আলোকে কোনো মন্তব্য করেনি।
জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববাজারে তেলের দাম সর্বনিম্ন থেকে সোমবার ১ শতাংশ বেড়েছে। মঙ্গলবার দামের পরিবর্তন হয়ে বেঞ্চমার্ক ব্রেন্ট ক্রুড অয়েল প্রতি ব্যারেল ৭৮ ডলারের কাছাকাছি বিক্রি হচ্ছে।
বিবিসি জানিয়েছে, জাহাজগুলোকে লোহিত সাগরের বদলে কেপ অব গুড হোপ দিয়ে চলাচলে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এ পথ দিয়ে চলতে জাহাজগুলোকে সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার পথ অতিরিক্ত পাড়ি দিতে হবে। এজন্য তাদের আরও ১০ দিন বেশি সময়ের প্রয়োজন হবে।
জাহাজ চলাচলবিষয়ক সংবাদমাধ্যম লয়েডস লিস্টের প্রধান সম্পাদক রিচার্ড মিড বিবিসি রেডও ফোরকে বলেন, যদি এসব তেলবাহী জাহাজগুলোকে নতুন পথে পরিচালনা করা হয় তাহলে তার প্রভাব বাজারে পড়বে। তেলের বাজার বিশ্বের সাথে অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ভারসাম্যপূর্ণ। এর ফলে এটি সরবরাহে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি জানান, নতুন রুটে জাহাজ পরিচালনা করা হলে তা তেল ছাড়াও অন্যান্য পণ্যসামগ্রীতেও প্রভাব ফেলবে। লোহিত সাগর দিয়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যেরে প্রায় ১২ শতাংশ তেল ও পণ্যসামগ্রী পরিবহন করা হয়ে থাকে। যার বাণিজ্যিক পরিমাণ প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের সমান বলেও জানান তিনি।