Home বিশ্ব বাইডেনের পর এবার চীনা প্রেসিডেন্টের ভিয়েতনাম সফর, ৩৬টি চুক্তি সই
ডিসেম্বর ১৪, ২০২৩

বাইডেনের পর এবার চীনা প্রেসিডেন্টের ভিয়েতনাম সফর, ৩৬টি চুক্তি সই

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের ভিয়েতনাম সফরে দেশ দুটির মধ্যে সহযোগিতার লক্ষ্যে ৩৬টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে দেশ দুটির মধ্যে আন্তর্জাতিক রেল যোগাযোগ নিয়ে সমঝোতা।

দেশ দুটির মন্ত্রণালয়, খাত, সংস্থা ও স্থানীয় পর্যায়ে এসব সহযোগিতার চুক্তি হয়েছে।
তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সফরের পর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের এই ভিয়েতনাম সফর কৌতূহলের উদ্রেক করেছে।

মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত অনেক পশ্চিমা কোম্পানি চীন ছেড়ে ভিয়েতনাম, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে চলে গেছে। তবে এসব বিনিয়োগ টানায় এর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে ভিয়েতনাম। এরপর সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভিয়েতনাম সফরে গিয়ে সেমিকন্ডাক্টর খাতে বিনিয়োগের ঘোষণা দেন।

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিচ্ছেদের পর ভিয়েতনাম হতে পারে পারে নতুন বাঘ। তাই চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের এই সফর জো বাইডেনের সফরের পাল্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এন ডট ভিয়েতনাম প্লাসের সূত্রে জানা যায়, চুক্তি ও সমঝোতাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে চীন-ভিয়েতনাম রেল যোগাযোগ ও সহযোগিতা বৃদ্ধি। অর্থাৎ দুই দেশের মধ্যে রেল যোগাযোগ চালুর বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য বাড়বে।

রেড রিভারের ওপর সেতু নির্মাণ করে চীনের ইউনান প্রদেশের সঙ্গে ভিয়েতনামের লাও কাই প্রদেশের সংযোগ স্থাপনের লক্ষ্যেও চুক্তি হয়েছে দেশ দুটির মধ্যে।

২০২৪-২৮ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কমিউনিস্ট পার্টি অব ভিয়েতনামের কেন্দ্রীয় কমিটির শিক্ষা জনপ্রিয়করণ কমিশন ও চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রচারণা বিভাগের চুক্তি হয়েছে। ধ্রুপদি সাহিত্যের অনুবাদ এবং প্রকাশের জন্যও তাদের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। দুই দেশের কমিউনিস্ট পার্টির মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। এ ছাড়া টনকিন উপসাগরে যৌথ পাহারা, অপরাধ প্রতিরোধ, ডিজিটাল সংযোগসহ আরও বিভিন্ন বিষয়ে দেশ দুটির মধ্যে চুক্তি হয়েছে।

ভিয়েতনামের সক্ষমতা

২০২২ সালে ভিয়েতনামের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৮ শতাংশ, যা ছিল এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ। বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে যা যা থাকা দরকার, ভিয়েতনামের প্রায় সবই আছে। কৌশলগতভাবেও দেশটি সুবিধাজনক অবস্থায় আছে। অবকাঠামোতে অনেক এগিয়ে তারা। দেশটিতে তিন শতাধিক সমুদ্রবন্দর ও ২০টির বেশি বিমানবন্দর আছে।

ভিয়েতনামের শ্রম সস্তা। চীনে যেখানে শ্রমিকের ঘণ্টাপ্রতি মজুরি ছয় ডলার, ভিয়েতনামে তা তিন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগের ভাষ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিকভাবে সবচেয়ে স্থিতিশীল দেশ হচ্ছে ভিয়েতনাম।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ১২ ডিসেম্বর ভিয়েতনামে পৌঁছানোর পর তাঁকে বিপুল সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। সি চিন পিং বলেন, ‘দুই দেশ ও পার্টির মধ্যকার সম্পর্ক আমরা নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই।’ এক অভিন্ন ভবিষ্যৎ নির্মাণের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি।
ভিয়েতনামের আয়তন ছোট হলেও অর্থনৈতিকভাবে দেশটি অনেক অগ্রসর। এটি এশিয়ার অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতি। বিশ্বের অনেক বড় কোম্পানি যেমন স্যামসাং ও ফক্সকন সেখানে কারখানা করেছে। বড় বড় বিনিয়োগকারী দেশটির ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের কারণে আকৃষ্ট হন।

তিন মাসের ব্যবধানে মার্কিন ও চীনা প্রেসিডেন্টের সফরের মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, দেশটি ভূরাজনৈতিক ও ভূ–অর্থনৈতিক দিক থেকে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *