কাল থেকে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ
সরকারের পদত্যাগ ও তফশিল ঘোষণার প্রতিবাদসহ বিভিন্ন দাবিতে ফের ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি, সমমনা জোট ও দলগুলো। আগামীকাল বুধবার ভোর ৬টা থেকে ষষ্ঠ দফার এ অবরোধ চলবে শুক্রবার ভোর ৬টা পর্যন্ত।
দেশব্যাপী সড়ক-রেল-নৌ ও রাজপথসহ সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে তারা। সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডার গাড়ি ও জরুরি ওষুধ পরিবহণ এ অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে।
এর আগে হামলা ও সংঘর্ষের মধ্যে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ পণ্ডের প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে বিএনপিসহ সমমনা দল ও জামায়াত। এরপর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতাকেই গ্রেফতার করা হয়। পরে ৩১ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ দফায় সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচি পালন করা হয়। সর্বশেষ মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করে।
সোমবার ভার্চুয়ালি এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, লুটেরা শাসকগোষ্ঠী সুষ্ঠু নির্বাচনকে অগ্রাহ্য করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করতে চায়। তিনি বলেন, আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী আবারও একতরফা নির্বাচনের বন্দোবস্ত করছে। নির্বাচন কমিশন যে সরকারের পথরেখা অনুসারে চলবে, তার প্রমাণ নিজেরাই দিচ্ছে। তারা সরকারের সাজানো প্রশাসনের কোনো রদবদল করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। সুতরাং এটিই হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একদলীয় বাকশালি নির্বাচন।
আপিল বিভাগে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের রায় বহাল প্রসঙ্গে রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন ২০১৩ সালে হাইকোর্টে সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে বাতিল করার বিরুদ্ধে সুপ্রিমকোর্টে যে আপিল করা হয়েছিল রোববার তা ‘ডিসমিস ফর ডিফল্ট’ করা হয়েছে।
আপিলকারী দল রায়টিকে ‘ন্যায় ভ্রষ্ট’ বলে উল্লেখ করে তাদেরকে সুবিচার থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ করেছে। তিনি বলেন, যে রাজনৈতিক দলের বিস্তৃতি সারা দেশে দৃশ্যমান, জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকারের প্রায় সব স্তরে প্রতিনিধিত্বশীল থাকার প্রমাণিত দৃষ্টান্তের অধিকারী, সেই দলের নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে। অথচ নাম গোত্রহীন অপরিচিত দলকে নিবন্ধন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়ার দৃষ্টান্ত সুবিচারের প্রমাণ বহন করে না। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতাসীন সরকারের বিরোধিতা করা যেকোনো রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক অধিকার এবং সেই অধিকারের সুরক্ষা বিচার বিভাগের কাছেই প্রাপ্য। এর ব্যতিক্রম গণতন্ত্র ও ন্যায় বিচারের পরিপন্থি ও অগ্রহণযোগ্য।
এদিকে টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করে এক বিবৃতিতে জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম বলেন, বর্তমান বিনা ভোটের জালেম সরকার আবারও ভোট ডাকাতি করে ক্ষমতায় আসার জন্য সাজানো নির্বাচনের নাটক মঞ্চস্থ করার পাঁয়তারা করছে।
সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার অসৎ উদ্দেশ্যে দেশকে একটি অকার্যকর, ব্যর্থ ও তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। এতে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব হুমকির মধ্যে পড়েছে।
পৃথক বিবৃতিতে গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন সারা দেশে শান্তিপূর্ণভাবে সর্বাত্মক অবরোধ সফলে জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এক বিবৃতিতে অবরোধ সফলের জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়াও কাল থেকে ৪৮ ঘণ্ডার অবরোধ কর্মসূচি পালন করবে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ ধারায় আন্দোলনরত ১২ দলীয় জোট, এলডিপি, নুরুল হক নুর নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, ড. রেজা কিবরিয়া নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরাম (মন্টু) ও বাংলাদেশ পিপলস পার্টি, বাংলাদেশ লেবার পার্টিসহ আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।