শেরপুরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষে পুলিশসহ আহত ৪০
বগুড়ার শেরপুরে অবরোধ চলাকালীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষে ৩৫ জন আহত হয়েছেন। দুই পক্ষের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ (ওসি) পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। আজ বুধবার বেলা পৌনে ১১টায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ডের সিঅ্যান্ডবি কার্যালয়ের সামনে এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১০টি কাঁদানে গ্যাসের শেল ও ৩০ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়েছে। সংঘর্ষের কারণে ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কে অন্তত আধা ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল। সংঘর্ষের পর মহাসড়কে আবার পণ্যবাহী ট্রাকসহ অন্য যানবাহন চলাচল শুরু হয়।
সংঘর্ষে আহত আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সদস্যরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এ ঘটনায় আহত বিএনপির সদস্যরা চিকিৎসা নিয়েছেন শহরের বিভিন্ন ক্লিনিকে।
প্রত্যক্ষদর্শী দুই রিকশাচালক বলেন, বেলা পৌনে ১১টার সময় করতোয়া বাসস্ট্যান্ডের দক্ষিণ পাশে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মিছিল হচ্ছিল। এ সময় মহাসড়কের ওপর দুটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষ লাঠিসোঁটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এরপরও আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে অন্তত ২০ মিনিট সংঘর্ষ চলে। এ সময় পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। এরপর পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে আসে।
শেরপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) সিরাজের উপস্থিতিতে আজ মহাসড়কের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ মিছিল করে বিএনপি। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি মিছিল থেকে তাদের মিছিলের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। মিছিলে আওয়ামী লীগের লোকজন লাঠিসোঁটা ও ককটেল ছুড়ে মারেন। এতে তাদের মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। তাদের সংগঠনের অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, আজ বেলা পৌনে ১১টায় তাঁরা ওই এলাকায় শান্তিপূর্ণভাবে শান্তি মিছিল করছিলেন। বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল থেকে তাঁদের মিছিলের ওপর অতর্কিত হামলা করা হয়। এতে আহত হয়েছেন তাঁদের সংগঠনের অন্তত ২০ জন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে আওয়ামী লীগসহ ছাত্রলীগ ও শ্রমিক লীগের নেতা–কর্মীরা রয়েছেন।
সংঘর্ষে শেরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহ জামাল সিরাজী, খামারকান্দি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবুল হোসেন, সুঘাট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজার রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা রফিকুল ইসলাম, কামরুল ইসলাম, সীমাবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ রানা, শেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হক, সীমাবাড়ী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ২ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি কামাল হোসেন তালুকদার, বিশালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ফিরোজ আহম্মেদ, শেরপুর উপজেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সাইদুল ইসলাম সরকার, শেরপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সমাজকল্যাণ–বিষয়ক সম্পাদক মো. রবিন, শেরপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদায়েত জামান, আবিব খান, তানিউল ইসলাম, পলাশ আহম্মেদ, নাজমুল হক, রাসেল আহম্মেদ, মির্জাপুর ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি হোসেনসহ আওয়ামী লীগের পক্ষের ২০ জন আহত হন।
শেরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, এ হামলায় স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের ১৫ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিরা রক্তাক্ত অবস্থায় ঘটনাস্থল থেকে চিকিৎসার জন্য চলে যাওয়ায় তাঁদের নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
এই সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যে পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন, তাঁরা হলেন শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবু কুমার সাহা, উপপরিদর্শক হোসেন আলী, কনস্টেবল শামিম রেজা, মো. আলফাজ ও মো. রেজাউল।
ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের করতোয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার ১০ জন দোকানমালিক বলেন, মহাসড়কে পরিবহন চলাচলে অবরোধ থাকলেও তাঁরা নিয়মিতভাবে দোকান খুলে বেচাকেনা করতেন। সংঘর্ষের কারণে অনেকেই দোকানগুলো বন্ধ করে দেন।
শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সাজিক হাসান সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, এ সংঘর্ষের ঘটনার পর থেকে আওয়ামী লীগের ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে এসে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসহ ওষুধ দেওয়া হয়েছে।
শেরপুর থানার ওসি বাবু কুমার সাহা প্রথম আলোকে বলেন, উভয় দলের সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়তে হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে তিনি, তাঁর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হোসেন আলীসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। তাঁরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন।