Home রাজনীতি নাশকতায় জড়িত অনুপ্রবেশকারীরা
নভেম্বর ৯, ২০২৩

নাশকতায় জড়িত অনুপ্রবেশকারীরা

সরকারের শেষ সময়ে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে থাকা অনুপ্রবেশকারী বিরোধী মতাদর্শীদের আসল রূপ বের হয়ে আসছে। বর্তমানে কোনো কোনো নাশকতায় তারা জড়িত। বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি চলছে, একই সঙ্গে মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে গার্মেন্টস শ্রমিকরা আন্দোলন করছেন। এতে কোথায় কোথায় সহিংস ঘটনা, ভাঙচুর ও নাশকতার ঘটনা ঘটছে।

এদিকে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের মধ্যে যারা বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী মতাদর্শী রয়েছেন তারা অর্থের বিনিময়ে নাশকতায় লিপ্ত হয়েছেন। এসব বিরোধী মতাদর্শীরা একশ্রেণির এমপি ও প্রভাবশালী নেতাদের টাকা দিয়ে দলে অনুপ্রবেশ করেন। একশ্রেণির এমপিরা তাদের দিয়ে নিজস্ব কাজে লাগান। শুধু আওয়ামী লীগ নয়, কোনো সরকারই সুযোগসন্ধানী অনুপ্রবেশকারীদের সামাল দিতে পারে না। তাদের লালন-পালন করে সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুযোগ বুঝে তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলে। শুধু আওয়ামী লীগে নয়, সচিবালয়, সরকারি-আধা সরকারিসহ সব দপ্তরে অনুপ্রবেশকারী বিরোধী মতাদর্শীদের দাপট বিদ্যমান। তারাও সুযোগ পেলে সরকারকে বেকায়দায় ফেলাতে তৎপর থাকে।

02-11-23-Mirpur_Garments Worker-8

বিএনপির ডাকা অবরোধ চলাকালে ফেনীর লালপোলে ট্রাকে আগুন দেওয়ার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ফেনী সদর উপজেলার ধলিয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সহসভাপতি নুর উদ্দিন টিপুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। একই মামলায় ফেনী পৌর যুবদল নেতা মো. রুবেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নাশকতা মামলায় যুবদল নেতার সঙ্গে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার হওয়ায় ফেনীর রাজনৈতিক মহলে কৌতুহলের সৃষ্টি হয়েছে। নুর উদ্দিন টিপুর পুরো পরিবার বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ রকম টিপু আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগে অনেক আছে, যারা সরকারি দলে ঢুকে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়। তারা দলের ভেতরে সুবিধাবাদী গ্রুপ হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তারপরও তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিকার হয় না। তাদের মূল রাজনৈতিক আদর্শ থেকে লাইনচ্যুত হয় না। অর্থাৎ তার পিতা-মাতাসহ পরিবারের সদস্যরা বিএনপি-জামায়াতের আদর্শ, সেই আদর্শ লালন করে আছে। তাদের একশ্রেণি আছে যার কাছ থেকে টাকা পায়, তার হয়েই কাজ করেন। এখন সরকারদলীয় লেবাস পরে বিএনপি-জামায়াতের কাছ থেকে টাকা পেয়ে নাশকতা করছেন—এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। ফেনী সদর উপজেলা যুবলীগ সভাপতি নুরুল আবছার আপন দাবি করেন, টিপুর বিরুদ্ধে বিরোধী দলের সঙ্গে আঁতাতের তথ্য পাওয়া গেছে। যে কারণে টিপুকে গত ২৭ অক্টোবর সদর উপজেলা যুবলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তার ব্যাপারে খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো চট্টগ্রাম বিভাগে এমন সুবিধাবাদী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী প্রচুর আছে।

385529913_742753107885872_5803497123436973320_n

পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি নূরে আলম মিনা বলেন, যুবলীগ নেতা টিপুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার পূর্বের ইতিহাস যাচাই করা হয়েছে। তারা দলের নাম ভাঙায়, বিপজ্জনক। এ জাতীয় নেতা আরও যারা রয়েছেন, তাদের ব্যাপারে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। সুযোগসন্ধানী বিরোধী মতাদর্শীরা দলের মধ্যে ঢুকে সুযোগ-সুবিধা নেয়। আবার সুযোগ পেলে তারা সাপের মতো দংশন করে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, দলীয় নেতাদের দায়িত্ব ভালো ক্যারিয়ারের লোকদের রাজনীতিতে প্রবেশ করানো। বিতর্কিতদের দলের প্রবেশ করালে তারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করবে—এটাই স্বাভাবিক।

এদিকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় ছিনতাইসহ অনেক মামলার আসামি, কিশোর গ্যাংয়ের মাস্টারমাইন্ড সোহেল ওরফে ফল সোহেলকে আটক করা হয়েছে। তাকে আটককালে তার ৪০/৫০ জন পোষ্য ক্যাডার পুলিশের ওপর হামলা করে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এলাকায় মাদকের ব্যবসা ও অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা তার নিয়ন্ত্রণে। ফলে সোহেল প্রকাশ্যে বলে বেড়াতেন, তাকে কেউ গ্রেফতার করতে পারবে না। আর গ্রেফতার করলেও আটকে রাখতে পারবে না। এদিকে আসামি ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে, ১১ জন গ্রেফতার হয়েছে। এদের পরিচয় ছাত্রলীগ, যুবলীগের কর্মী। আসলে তারা দলের কোনো কাজ করে না। সব অপরাধ তারাই করে। এ ব্যাপারে পিরোজপুরের এসপি মোহাম্মদ সফিউর রহমান বলেন, আসলে এদের কোনো দল নেই। তাদের কাজ হলো অপরাধ ও নাশকতামূলক কাজ করা।

22222222222

একাধিক গোয়েন্দা সূত্রে জানা যায়, রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্যদের উত্তরসূরিরা এখন অনেক জেলা-উপজেলায় নেতৃত্বে রয়েছেন। অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলা শাখার পদ-পদবি কিনেছেন তারা। হয়ে উঠেছেন বড় নেতাদের ঘনিষ্ঠ। একই সঙ্গে এসব পদবি ব্যবহার করে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ সরকারি চাকরিতে নিয়োগসহ ব্যবসা-বাণিজ্য, ঠিকাদারিসহ সবকিছু নিজেদের আয়ত্তে নিয়েছেন। মাদক ব্যবসায় জড়িত তাদেরই সিন্ডিকেট। তারা বেশির ভাগ সময় দলীয় পরিচয় ব্যবহার করেন। এই সিন্ডিকেটই জেলা-উপজেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা জানান। এসব বিরোধী মতাদর্শীরা দলীয় পরিচয় ব্যবহার করে দুর্নীতি, চোরাচালান, জমি দখল, নিয়োগ, বদলিবাণিজ্য, টিআর-কাবিখা প্রকল্পে লুটপাটসহ নানা কর্মকাণ্ডে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। তাদের দাপটে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধা ও ত্যাগী নেতারা হয়ে পড়েছেন একলা। দলীয় ফোরামের একাধিক বৈঠকে ত্যাগী নেতারা এই অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে নানা তথ্য তুলে ধরেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি। বরং যারা তাদের এসব পদ-পদবি দিয়েছেন তারাই তাদের রক্ষা করে থাকেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *