যেসব আমলে অন্তরের সংকীর্ণতা দূর হয়
অন্তরের সংকীর্ণতা নিন্দনীয়
অন্তরের সংকীর্ণতা মুমিনের জন্য নিন্দনীয়। ইসলামী শরিয়ত তা থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দিয়েছে। পবিত্র কোরআনে অন্তরের সংকীর্ণতাকে আল্লাহর শাস্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ কাউকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাইলে তিনি তার বক্ষ ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন এবং কাউকে বিপথগামী করতে চাইলে তিনি তার বক্ষ অতিশয় সংকীর্ণ করে দেন।
অন্তরের প্রশস্ততা আল্লাহর অনুগ্রহ
অন্তরের সংকীর্ণতা থেকে বেঁচে থাকা এবং প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী হওয়া মহান আল্লাহর অনুগ্রহ। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ কাউকে সৎপথে পরিচালিত করতে চাইলে তিনি তার বক্ষ ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেন।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২৫)
যেসব কারণে অন্তরে সংকীর্ণতা তৈরি হয়
কোরআন-হাদিসের আলোকে যেসব কারণে অন্তরে সংকীর্ণতা তৈরি হয় তার কয়েকটি নিম্নে তুলে ধরা হলো :
১. অবিশ্বাস : আল্লাহ, রাসুল, পরকালসহ ইসলামের অপরিহার্য বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস না রাখা তথা ঈমান না রাখার কারণে অন্তরে সংকীর্ণতা তৈরি।
২. পাপ কাজ ও মন্দ স্বভাব : পাপ কাজের ফলে মানুষের অন্তরের সংকীর্ণতা তৈরি হয়।
৩. আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ হওয়া : যারা আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ আল্লাহ তাদের মনে সংকীর্ণতা তৈরি করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ইসলামের জন্য যার বক্ষ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং যে তার প্রতিপালক প্রদত্ত আলোতে আছে সে কি তার সমান যে এরূপ নয়? দুর্ভোগ সেই কঠোর হৃদয় ব্যক্তিদের জন্য, যারা আল্লাহর স্মরণে পরাঙ্মুখ! তারা স্পষ্ট বিভ্রান্তিতে আছে।’ (সুরা : ঝুমার, আয়াত : ২২)
৪. গাইরুল্লাহর প্রতি ভালোবাসা : গাইরুল্লাহর প্রতি ভালোবাসাও মানুষের অন্তরে সংকীর্ণতা তৈরি করে। আল্লামা ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, অন্তরে সংকীর্ণতা তৈরি হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ আল্লাহ থেকে বিমুখ হওয়া, অন্তরে গাইরুল্লাহকে স্থান দেওয়া এবং তাকে ভালোবাসা। যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসবে তার অন্তর তাতেই বন্দি হবে এবং আল্লাহর শাস্তির উপযুক্ত হবে। সে-ই হবে পৃথিবীর সবচেয়ে হতভাগ্য ব্যক্তি। (তাফসিরে ইবনে কাইয়িম, সুরা : ঝুমারের ২২ নম্বর আয়াতের ব্যাখ্যা)
অন্তরের সংকীর্ণতা থেকে বাঁচার উপায়
১. বিশ্বাস স্থাপন : ঈমান তথা আল্লাহ, তার রাসুল ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস মানুষকে মনের সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা করে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ ইসলামের জন্য যার বক্ষ উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং যে তার প্রতিপালক প্রদত্ত সুপথে রয়েছে…।’ (সুরা : ঝুমার, আয়াত : ২২)
তাফসিরবিদরা বলেন, এখানে সুপথ দ্বারা ঈমান উদ্দেশ্য।
২. আল্লাহর স্মরণ করা : আল্লাহর স্মরণ মানুষের অন্তরের সংকট ও সংকীর্ণতা দূর করে। ফলে তা প্রশান্ত হয় এবং তাতে প্রশস্ততা তৈরি হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রেখো, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়।’ (সুরা : রাদ, আয়াত : ২৮)
৩. আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া : ক্ষমা প্রার্থনা মুমিনের মনে ও জীবনে প্রশস্ততা আনে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তি নিয়মিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তাকে প্রত্যেক বিপদ থেকে মুক্তি দেন, সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রাখেন এবং তাকে এমন উৎস থেকে জীবিকা দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১৫১৮)
৪. আল্লাহর কাছে দোয়া করা : দোয়ার মাধ্যমে মানুষ অন্তরের সংকীর্ণতা থেকে রক্ষা পেতে পারে। এ জন্য আল্লাহ কোরআনে দোয়া শিখিয়েছেন, ‘মুসা বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দাও এবং আমার কাজ সহজ করে দাও।’ (সুরা : তাহা, আয়াত : ২৫-২৬)
যেভাবে বুঝব অন্তরের সংকীর্ণতা নেই
মহানবী (সা.) অন্তরের সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত হওয়ার কিছু নিদর্শন বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, যখন অন্তরে আলো প্রবেশ করে তখন তা প্রশস্ত হয় এবং উন্মুক্ত হয়। আর এর নিদর্শন হলো পরকালের প্রতি দৃষ্টি আবদ্ধ রাখা, প্রতারণার জীবন থেকে বিমুখ হওয়া এবং মৃত্যুর আগে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হওয়া। (বায়হাকি : ১/২৫৮)