ফিলিস্তিনের সমর্থনে ইউরোপ-মধ্যপ্রাচ্য-এশিয়াজুড়ে বিক্ষোভ
গাজায় ইসরায়েল হামলা বিমান ও স্থল হামলা জোরদার করায় শনিবার ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং এশিয়ার দেশগুলোতে লাখো মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলে দলে মানুষ। বিমান থেকে তোলা ছবিতে সে দৃশ্য ধরা পড়েছে। তারা একটি যুদ্ধবিরতি আহ্বানের জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে আহ্বান জানানোর দাবি তোলেন।
এক বিক্ষোভকারী বলেন, “বিশ্বে ভুমিকা রাখা সুপারপাওয়ারগুলো এ মুহূর্তে যথেষ্ট কিছু করছে না। সেকারণেই আমরা এখানে। আমরা যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি। ফিলিস্তিনের অধিকার, তাদের অস্তিত্বের অধিকার, বাঁচার অধিকার, মানবাধিকারসহ সব অধিকারের জন্য ডাক দিচ্ছি। এটি হামাসের বিষয় না। এটি ফিলিস্তিনিদের জীবনের সুরক্ষার ব্যাপার।”
ওয়াশিংটনের অবস্থানেরই পক্ষ নিয়ে যুক্তরাজ্যের সুনাক সরকার গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানায়নি। বরং গাজায় ত্রাণ ঢুকতে দেওয়ার জন্য যুদ্ধে মানবিক বিরতি দেওয়ার কথা বলেছে।
গত ৭ অক্টোবরে ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ঢুকে ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা হামলা চালিয়ে ১৪০০ ইসরায়েলিকে হত্যা এব! ২২৪ জনকে ধরে গাজায় নিয়ে জিম্মি করে।
এরপরই পাল্টা জবাবে গাজায় হামাসের ওপর অবিরাম বিমান হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। গত শুক্রবার গাজায় বিস্তৃত পরিসরে স্থল সেনা পাঠিয়েও হামলা জোরদার করেছে তারা। ব্রিটেন হামাসের হামলার জবাবে ইসরায়েলের নিজেদের সুরক্ষার অধিকারকে সমর্থন দিচ্ছে।
তিন সপ্তাহ ধরে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় শনিবার পর্যন্ত ৭ হাজার ৬৫০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হওয়ার খবর জানিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
পশ্চিমা দেশগুলোর সরকার এবং বহু নাগরিকও ইসরায়েলের জন্য জোরাল সমর্থন এবং সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। কিন্তু হামাসের ওপর ইসরায়েলের পাল্টা আক্রমণ নিয়েও বিশ্বে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে বিশেষ করে, আরব এবং মুসলিম দেশগুলোতে।
মালয়েশিয়ায় দলে দলে মানুষ স্লোগান দিয়ে কুয়ালালামপুরে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করেছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলে লাখো মানুষের এক সমাবেশে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ান বলেছেন, ইসরায়েল দখলদার। ‘হামাস সন্ত্রাসী সংগঠন নয়’ বলেও আগের মত আবার প্রকাশ করেন তিনি।
ইরাকের রাজধানী বাগদাদে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভে অংশ নিয়েছে ইরাকিরা। ওদিকে, ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের হেবরনে ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা শনিবার বিশ্বজুড়ে ইসরায়েলের পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে।
ওদিকে, ইউরোপে ডেনমার্কের কোপেনহেগেন, ইতালির রোম এবং সুইডেনের স্টকহোমে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ মিছিল করেছে মানুষ। নরওয়েতে বিক্ষোভ হয়েছে।
নিউজিল্যান্ডের রাজধানী ওয়েলিংটনেও হাজার হাজার মানুষ ফিলিস্তিনের পতাকা নিয়ে এবং ফিলিস্তিন মুক্ত কর লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে পার্লামেন্ট ভবন অভিমুখে পদযাত্রা করেছে।
গাজায় মানবিক ত্রাণ সহায়তার জন্য অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এরই মধ্যে একটি প্রস্তাব পাস হয়েছে। শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে এ প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়।
আরব দেশগুলোর পক্ষে প্রস্তাবটি উত্থাপন করে জর্ডান। সদস্য দেশগুলোর মধ্যে প্রস্তাবের পক্ষে ১২০ দেশ এবং বিপক্ষে ১৪ দেশ ভোট দেয়। ভোটদানে বিরত ছিলো ৪৫টি দেশ।
প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দেওয়া দেশগুলো হচ্ছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। আর যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জার্মানি, জাপানের সঙ্গে ভারতও প্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থাকে।