আ’লীগ সরকারকে হটানোর আন্দোলনে সাহস নিয়ে রাস্তায় নামুন—-মির্জা ফখরুল
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে হটানোর আন্দোলনে ‘আর মাস নয়, মাত্র কয়েকটা দিন’ বুকে সাহস নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসার ডাক দিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমি যে কথাটা বলতে চাই সেটা হচ্ছে, আজকে সকলকে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে…এই কথায় যদি আমরা সবাই বিশ্বাস করি তাহলে আসুন আগামী দিনগুলোতে যে কয়েকটা দিন আছে, এখন কিন্তু মাসও নাই, কয়েকটা দিন আছে সেই দিনগুলোতে বুকের মধ্যে সাহস নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে। তিনি বলেন, আরে মারবে তো মারবে…মারছেই তো। এই ১৫ বছরে আমাদের হাজার হাজার লোককে মেরে ফেলেছে, আমাদের অসংখ্য লোককে গুম করেছে, ৫০ লক্ষ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে, বৃহস্পতিবারও ঢাকা মহানগরীতে ৭৭ জনকে অ্যারেস্ট করেছে…কোন কথাই নাই নামটা ঢুকিয়ে দিলে হয়ে গেলো।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। তিনি বলেন, এই সরকারকে সরাতে না পারলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকবে না, জাতির অস্তিত্ব থাকবে না, স্বাধীনতার অস্তিত্ব থাকবে না। গতকাল শুক্রবার দুপুরে কৃষি বিষয়ক এক সেমিনারে দেশের সাধারণ মানুষের অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন।
সেগুন বাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালযে নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী দল সমর্থিত শিক্ষকদের সংগঠন ‘সোনালী দল’ এর উদ্যোগে ‘কৃষি উপকরণ ও খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি-কৃষক এবং নাভিশ্বাস’ শীর্ষক এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডী।
আন্দোলনের সফলতার বিষয়ে আশার কথা শুনিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, কথা একটাই আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামি। আজকে একটা বিষয় আপনাদের আশা যোগাবে, সাহস যোগাবে যে দেশের সকল মানুষ এক হয়েছে, সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলো এক হয়েছে। বাম-ডান সকলেই কিন্তু একটা কথা বলছে যে, এই সরকারের অধীনে কখনো সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। শেষ বারের মতো বলতে চাই দয়া করে পদত্যাগ করুন, মানে মানে শান্তিতে আপনারা একটা নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে চলে যান…দেশের মানুষকে বাঁচতে দেন। তা নাহলে আপনাদের জন্য করুণ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন কমিশন একটা বানিয়েছে …এটা কোনো কিছু ঠিক নেই একেবারে। তারাও বলেছে, যদি পরিবেশ অনকূল হয়, তার মানে পরিবেশ অনকূল নয়। এখনও পরিবেশ অনকূল হয়নি। তাহলে দরকারটা কি পদত্যাগ করেন, আসো আমাদের সঙ্গে, আমাদের সঙ্গে আসো।
নির্বাচনে কর্মকর্তাদের ঘুস দেয়া হচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশের অবস্থাটা এমন হয়েছে, সাধারণ মানুষ ডিম কিনতে পারছে না, লাউ কিনতে পারছে না, শাকসবজী কিনতে পারছে না। কিন্তু নির্বাচনে ঘুস দেয়ার জন্য ডিসি-ইউএনওদের জন্য নতুন ৩৬৫ কোটি টাকার গাড়ি কেনা হচ্ছে। তাদেরকে টাকা দেয়া হচ্ছে আলাদা করে। শোনা যাচ্ছে ইতিমধ্যে যারা ডিসি-এসপি যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন তাদের কাছে টাকা পৌঁছে গেছে। বিষয়টা ওই জায়গায়। গত ১৫ বছরে কি হারে ওরা লুট করেছে, দুর্নীতি করেছে তা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। প্রতিটি পয়সা আমাদের এই সমস্ত জিনিসপত্রের দাম সব মিলে আমাদের পকেট থেকে নিয়েছে…ভ্যাট, ইনকাম ট্যাক্স মিলে নিয়েছে, যে ঋণ করেছে সেই ঋণের ভার আমাদের ঘাড়ে এসে পড়বে। এর বিকল্প কিছু নেই। একটাই বিকল্প এই সরকারকে সরাতে হবে। এটা আমার জন্য নয়, আপনার জন্য নয়, এদেশকে বাঁচানোর জন্য করতে হবে।
সরকার দেশকে মগের মল্লুক তৈরি করেছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ভোট দেয়ার অধিকার চলে গেছে, বিচার পাওয়ার অধিকারও আমার নাই। সবাই জড়িত হয়ে গেছে.. এই যে প্রক্রিয়া, লুটপাট দুর্নীতি …সরকার দেশে মগের মল্লুক তৈরি করেছে। সেই মগের মুল্লুক থেকেও এরা বের হতে চায় না। এখন নতুন সুর শুরু করেছেন। গত বৃহস্পতিবার উনি (শেখ হাসিনা) বলেছেন, বিএনপি সন্ত্রাসী দল। বিএনপি সন্ত্রাসী দল হলে আপনারা কি? আপনারা সন্ত্রাসের বাবা। আপনারা এই রাষ্ট্রটাকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলেছেন। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে পুরোপুরি সন্ত্রাসের একটা রাজত্ব বানিয়ে দিয়ে আপনারা ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছেন।
তিনি বলেন, আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে, নিয়মতান্ত্রিকভাবে, গণতান্ত্রিক উপায়ে আন্দোলন করছি। কারণ আমাদের তো উপায় নেই…আমরা খালি হাতে আছি। আমাদের হাতে তো বন্দুক-পিস্তল নেই যে, আমি আপনাকে ভয় দেখাব, গ্রেফতার করে নিয়ে আসবো, আপনাকে আমি ডিবিতে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার-নির্যাতন করব সেই তো ক্ষমতায় নেই।
আমাদের একটাই ক্ষমতা আছে মানুষকে সংগঠিত করা, মানুষকে বলা যে, তোমরা এই অবস্থা থেকে বেরুতে চাও, মুক্তি পেতে চাও তোমার অন্য কোনো উপায় নেই রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে। আপনি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবেন, বিএনপির নেতা-কর্মীরা কি করছে? তারপরে যাবো…সেটা হবে না। আপনাকেও রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হবে, সকলকে বেরিয়ে আসতে হবে।
খাদ্যদ্রব্যের মূল্য পরিস্থিতি প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে যে খাদ্য পণ্যের মূল্য বেড়েছে এটা নজিরবিহীন। পৃথিবীর সব দেশে কিছু কিছু বেড়েছে কিন্তু বাংলাদেশে যে বেড়েছে একটা অবিশ্বাস্য নজিরবিহীন মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এটার মূল কারণ হচ্ছে জবাবদিহিহীন সরকার। যাকে কোথাও কোনো জবাবদিহি করতে হয় না। যে তার ইচ্ছা মতো যা খুশি তাই করতে পারছে। তাদের এই ব্যর্থ পরিচালনা, তাদের দুঃশাসন, দুর্নীতি এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যে, যেখানে মানুষের নাভিশ্বাস বলছেন তো, নাভিশ্বাসও নেই এখন। এখন মৃত্যুবরণ করার অবস্থায় দাঁড়িয়েছে। আমরা যখন বাজারে যাই তখন টের পাই কি ভয়াবহ অবস্থার সম্মুখীন হই।
খালেদা জিয়াকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব। বলেন, তাকে চিকিৎসার সুবিধা দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন, এই সরকার ভয় পায় বেগম জিয়াকে। তাই তারা তাকে মেরে ফেলতে চায়।
সংগঠনের সভাপতি গোলাম হাফিজ কেনেডীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, অধ্যাপক তাজমেরী এস এ ইসলাম, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিনসহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কৃষিবিদরা বক্তব্য রাখেন।
আবদুল মঈন খান বলেন, শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুঃশাসন করছে। লুটপাট আর অর্থপাচার করছে। একজন এমপি ৬৮২ কোটি টাকা ডিল করেছেন। এ নিয়ে দুদক বা কেউ কিছু ব্যবস্থা নেয়নি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের অপমৃত্যু ঘটিয়েছে। এর পরিবর্তন চাই। জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরে যাক। সরকার পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করুক।