মিথ্যা তথ্যে হয়রানি জিনিসপত্র তছনছ
ব্যক্তিগত স্বার্থের দ্বন্দ্বের কারনে প্রতিপক্ষকে হয়রানি করতে অনেক সময় পরিকল্পিতভাবে পুলিশকে মিথ্য তথ্য দেয়া হয়ে থাকে। ফলে নিরপরাধ ব্যক্তি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হয়রানির শিকার হতে হয়। পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এর মাত্রা বেড়েছে।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, প্রায়ই জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ অপহরণ, সন্ত্রাসী-জঙ্গি গোষ্ঠীর গোপন বৈঠকের খবর আসছে। পরবর্তীতে এসব জায়গায় অভিযান চালিয়ে দেখা গেছে, প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল নেই।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এমনই একটি মিথ্যা তথ্য দেয়া হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশকে। সোর্স মারফত জানানো হয়, মঙ্গলবার দিবাগত পৌঁনে ১২টার দিকে ঢাকার উত্তরা পশ্চিম থানাধীন উত্তরা ৫ নম্বর সেক্টরে ১ নম্বর সড়কের ১২ নম্বর বাড়ির প্রথম তলায় বিএনপি নেতাকর্মীরা নাশকতার উদ্দেশ্যে বড় ধরণের গোপন বৈঠক করছে। এমন তথ্য পাওয়ার পর স্বাভাবিক কারণেই ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ আর বসে থাকতে পারেনি। ডিবি পুলিশের একটি টিম যথারীতি সেই বাড়িতে হাজির হয়। রাতে দরজা খুলতে বললে ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া স্বাভাবিক কারণেই গভীর রাতে দরজা খুলতে রাজি হননি। এ নিয়ে ডিবি পুলিশের সঙ্গে বাড়ির গৃহিণী জেসমিন বেগমের বেশ বাক বিতন্ডা হয়।
এ ব্যাপারে জেসমিন বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, মঙ্গলবার রাতে তার বাসায় নক করে। পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের ডিবি পুলিশ বলে পরিচয় দেন। কি কারণে বাসায় এসেছেন জানতে চাইলে তারা বলেন, আপনাদের বাসায় বিএনপির লোকজন গোপন বৈঠক করছে। এমন তথ্য পেয়ে আমরা এসেছি। কথা কাঁটাকাটির এক পর্যায়ে তিনি উত্তরা পশ্চিম থানা পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। পোশাক পরিহিত পুলিশ বাসায় যাওয়ার পর তিনি ঘরের দরজা খুলে দেন। পুলিশ পুরো ফ্ল্যাটে তল্লাশী করে। ঘরের জিনিসপত্র তছনছ করে। সিসি ক্যামেরা খুলে ফেলে। পরিবারের সদস্য ছাড়া কাউকে না পেয়ে চলে যান। এমন ঘটনায় তিনি আতঙ্ক প্রকাশ করে বলেন, নিশ্চয়ই তাদের কোন শত্রু বা কোন গোষ্ঠী পরিকল্পিতভাবে সামাজিক ও মানসিকভাবে আমাদের হয়রানি করতে পুলিশকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছে। সেই তথ্য মোতাবেক পুলিশ অভিযান চালিয়ে পুলিশও যেমন তাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করেছে, তেমনি পুলিশও স্বাভাবিক কারণেই হয়রানির শিকার হয়েছে। এমন মিথ্যা তথ্যদাতাদের তিনি আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন। কারণ আমরা কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নই। আমরা পেশাজীবী মানুষ। আমরা পুলিশের কাছে সব সময়ই সহযোগীতা পাই। সেই পুলিশকেই ধোঁকা দিয়েছে। এটি অবশ্যই অন্যায়।
এ ব্যাপারে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের প্রধান ও ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, মিথ্যা তথ্যদাতারা এমনভাবে এমনকি এমন সময়ে খবরটি দেয়, যা আর সেই মুর্হুতে যাচাই বাছাই করার সুযোগ থাকে না। কারণ তখন মানুষের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টিকেই বড় করে দেখা হয়। যাচাই বাছাই করতে গেলে সত্যি সত্যিই যদি নাশকতামূলক ঘটনা ঘটে যায়, সে ক্ষেত্রে হয়তো আর কিছুই করার থাকবে না।
এ ব্যাপারে পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, প্রায়ই মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশকে হয়রানি করার ঘটনা ঘটে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। কারণ পুলিশ জনগনের জানমালের নিরাপত্তার জন্যই কাজ করে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে বা থানা পুলিশের কাছে বা পুলিশের অন্যান্য ইউনিটের কাছে এমন সময়ে বা এমন মুর্হুতে এতটাই স্পর্শকাতর খবর আসে যে, ওই সময় পুলিশের ঘটনাস্থলে যাওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না