Home অপরাধ ৫৪ লাখ টাকা ছিনতাইয়ে দুই পুলিশের সঙ্গে ছিলেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর বড় ভাই
অক্টোবর ১২, ২০২৩

৫৪ লাখ টাকা ছিনতাইয়ে দুই পুলিশের সঙ্গে ছিলেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীর বড় ভাই

ঢাকার শ্যামপুরের ধোলাইপাড়ে এক ব্যবসায়ীর ৫৪ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের একজন মোশারফ হোসেন। তিনি ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী আবুল কালামের বড় ভাই। তাঁরা থাকেন একই বাড়িতে। পারিবারিক বিরোধের জেরে দুই পুলিশ সদস্যের মাধ্যমে তিনি ছোট ভাইয়ের ৫৪ লাখ টাকা ছিনতাই করিয়েছেন।

ছোট ভাই আবুল কালামের নাতি তানভীর হোসেন টাকা নিয়ে বাসা থেকে বের হয়েছেন, এই তথ্য ছিনতাইকারী দলের নেতৃত্বে থাকা এক পুলিশ সদস্যকে মুঠোফোনে জানিয়েছিলেন মোশারফ। ছিনতাই করা টাকা থেকে ১২ লাখ টাকা ভাগও পান তিনি। গ্রেপ্তারের পর আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এই তথ্য দিয়েছেন মোশারফ হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার তিনি আদালতে এই জবানবন্দি দেন।

মোশারফ হোসেন জবানবন্দিতে বলেছেন, তিনি পেশায় একজন মানি এক্সচেঞ্জ ব্যবসায়ী। ছিনতাইকারী দলের নেতৃত্বে থাকা গুলশান থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) দেলোয়ার হোসেন তাঁর পূর্বপরিচিত। একসময় এএসআই দেলোয়ার তাঁর বাসার পাশে থাকতেন। ছোট ভাই আবুল কালামের সঙ্গে পারিবারিক বিরোধের বিষয়টি দেলোয়ার জানতেন। ক্ষোভ থেকেই ছোট ভাইয়ের টাকা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন তিনি। পরিকল্পনা অনুযায়ী এএসআই দেলোয়ার তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে আবুল কালামের নাতি তানভীরকে মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে ৫৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন।

গত রোববার সকাল সোয়া ৯টার দিকে শ্যামপুরের ধোলাইপাড়ের ইউনিকেয়ার হাসপাতালের সামনে থেকে তানভীরকে ছিনতাইকারীরা মাইক্রোবাসে তুলে নেন। তারপর হাত-মুখ চেপে ধরে তাঁর কাছ থেকে ৫৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেন তাঁরা। পরে তাঁকে মাওয়া সড়কের রসুলপুর এলাকার ফাঁকা রাস্তায় ফেলে যান। এ ঘটনায় ওই দিনই রাজধানীর শ্যামপুর মডেল থানায় অজ্ঞাতনামা চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ব্যবসায়ী আবুল কালাম।

এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে গত সোমবার ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর মধ্যে ব্যবসায়ী আবুল কালামের বড় ভাই মোশারফ হোসেন এবং তাঁর সহযোগী আবদুল বাতেন ঘটনার দায় স্বীকার করে মঙ্গলবার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। গুলশান থানার সহকারী উপপরিদর্শক দেলোয়ার হোসেন এবং অন্য ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত কনস্টেবল আবু সায়েম ডিবি হেফাজতে দুই দিনের রিমান্ডে আছেন। গ্রেপ্তার চারজনের কাছ থেকে ৪১ লাখ ৮৭ হাজার টাকাও উদ্ধার করে ডিবি।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ ও তথ্য বিভাগের উপপরিদর্শক আবদুর রব প্রথম আলোকে বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য। একজন গুলশান থানায় কর্মরত ও একজন কনস্টেবল। তিনি বরখাস্ত হয়ে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত আছেন।

আগেও অপরাধ করেছেন দুই পুলিশ সদস্য

ডিবির হাতে গ্রেপ্তার দুই পুলিশ সদস্য এর আগেও অপরাধ করেছেন। এএসআই দেলোয়ার হোসেন মাদক মামলার আসামি। ২০১৫ সালের নভেম্বরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার একটি মাদক মামলার এজাহারনামীয় আসামি তিনি। কনস্টেবল আবু সায়েমের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে পল্টন থানায় অস্ত্র আইনে মামলা আছে।

ডিবির একটি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার দুই পুলিশ সদস্য ডাকাতি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে যুক্ত। ডাকাতি ও ছিনতাই করতে তাঁরা একটি চক্র গড়ে তুলেছেন। এই চক্রটি মূলত ব্যাংকে আসা ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু বানায়। ব্যাংক থেকে টাকা তুলে বের হওয়া ব্যক্তিদের পুলিশ পরিচয়ে দামি মাইক্রোবাসে তুলে সব লুট করে নির্জন স্থানে ফেলে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *