সাইবার অপরাধসহ ১০ চ্যালেঞ্জ শনাক্ত
স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার শুরুতেই সাইবার অপরাধসহ ১০টি চ্যালেঞ্জ শনাক্ত করা হয়েছে। অন্য চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে জ্বালানির বিকল্প সংস্থান, অর্থনীতির চাহিদা মোকাবিলা, বৈশ্বিক বিগ-টেক প্রতিষ্ঠানগুলোর আধিপত্য এবং জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত। এছাড়া প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনশীলতা ও ডিজিটাল ডিভাইস মোকাবিলা, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলানো, দক্ষ তরুণ সমাজ গড়ে তোলা ইত্যাদি।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘স্মার্ট বাংলাদেশ টাস্কফোর্স’র প্রথম বৈঠকে এসব চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করা হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে পাওয়া গেছে এসব তথ্য।
চারটি ভিত্তি ঠিক করে ২০২২ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে তোলা হবে। সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ।
টাস্কফোর্সের এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো অগ্রসরমান ডিজিটাল প্রযুক্তি কাজে লাগাতে হবে। প্রযুক্তির উৎকর্ষে বিভিন্ন কাজে মানুষের প্রয়োজনীয়তা থাকবে না তা নয়, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য দক্ষ মানুষের প্রয়োজন হবে। তাই স্মার্ট বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। মানুষের ভেতরে যে সৃজনশীলতা আছে সেটি বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজে লাগাতে হবে। তিনি আরও বলেন, আর্থিক সংগতি ও প্রশিক্ষণের সুযোগ বাড়ানো, প্রযুক্তি পরিবর্তনশীল হওয়া এর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মতো দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে। শিক্ষার মান বাড়াতে হবে এবং একই সঙ্গে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।
বৈঠকে পর্যালোচনায় উঠে আসে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পেছনের চ্যালেঞ্জ। সেখানে বলা হয়, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে ৭৪ শতাংশ জনগোষ্ঠী। ফলে সাইবার নিরাপত্তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনে এগিয়ে যাওয়া যাবে না। বৈঠকে আরও বলা হয়, প্রতি বছর শতকরা ৭ ভাগ হারে ভোক্তা বাজারের প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। অর্থনীতির চাহিদা আগামীতে আরও বাড়বে। ফলে সেটি মোকাবিলা করতে এখন থেকে একটি কৌশল নির্ধারণ করতে হবে।
চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে টাস্কফোর্স বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বলেন, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে হবে। এ যাত্রার অগ্রাধিকার হিসাবে তিনি স্মার্ট-শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, ইয়ুথ অ্যান্ড উইমেন, ডিজিটাল ও ক্যাশলেস ইকোনমি এবং স্মার্ট গভন্যান্সকে চিহ্নিত করেন। তিনি আরও বলেন, এক্ষেত্রে সরকার নীতিগত সহায়তা দিবে এবং প্ল্যাটফর্ম প্রস্তুত করবে। অংশীদারত্বের ভিত্তিতে মূল দায়িত্ব পালন করতে হবে।
বৈঠকে বলা হয়, চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আন্তঃমন্ত্রণালয় এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। এ জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গঠনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীদের নেতৃত্বে ১৫টি উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। উপকমিটির আহ্বায়করা হচ্ছেন-সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপু মনি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং এছাড়া ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গঠিত টাস্কফোর্স বৈঠকে উপকমিটি গঠনের সিদ্ধান্তের পাশাপাশি তাদের কার্যপরিধি দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে উপকমিটির আহ্বায়করা দ্রুত সময়ের মধ্যে উপযুক্ত প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি উপকমিটি গঠন করবে। স্মার্ট বাংলাদেশ যাত্রা ওই কমিটি সমস্যা, সম্ভাবনা ও করণীয় নির্ধারণ করবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আহ্বায়ক স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেবে। তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের অগ্রগতি প্রতি ৬ মাস অন্তর টাস্কফোর্সকে অবহিত করবে।
বৈঠকে বলা হয়, কোভিড মহামারির সময় প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ মোবাইল টেলিফোনে সরাসরি নগদ সহায়তা সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে। এছাড়া ১৩০০ শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, ৩০০ স্কুল অব ফিউচার, ১০৯টি হাইটেক পার্ক ও ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। যা স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তি হিসাবে কাজ করবে।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক ওই বৈঠকে অংশ নিয়ে বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তাত্ত্বিক গবেষণার পাশাপাশি প্রায়োগিক গবেষণা করতে হবে। আর দেশি ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে সহায়তা প্রস্তাব দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, আমাদের চাহিদার ৯০ শতাংশ স্মার্টফোন এখন দেশে তৈরি হচ্ছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। উদ্যোক্তা সৃষ্টির কার্যক্রম গ্রাম পর্যায়ে বেশি হয় সেটি করতে হবে।
এছাড়া দেশের বাইরে অবস্থানরত মেধাবী তরুণ-তরুণীদের কাজে লাগানো, গবেষণা ও উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, গবেষণার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়। সুপারিশে আছে বিভিন্ন স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ বাদ দিয়ে একটি নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে সহায়তার প্রস্তাব দেওয়া হয়।