জবি শিক্ষক সমিতির বিবৃতির রাজনীতি, বিপন্ন সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা
তৌকির আহমেদ, জবি প্রতিবেদক: বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসমূহে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিকে বসানো, ব্যক্তি আক্রমণসহ বিভিন্ন সময়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কর্তৃক “অযাচিত” বিবৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
তারা বলছেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রশাসনিক পদের মেয়াদ শেষ হবার আগেই বিবৃতি দিয়ে জানিয়ে দেন কাকে এসব পদে নিয়োগ দিতে হবে এবং কাকে নিয়োগ দেয়া যাবেনা। এইজন্য প্রতিবার ই বিবৃতির পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রীসহ নানা দপ্তরে তারা লিখিত চিঠি পাঠিয়ে যাচ্ছেন। তবে চিঠির অন্তরালে প্রধান উদ্দেশ্য ই থাকে এক প্রকার চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের এবং পছন্দের লোকদের সেসব পদে বসানো।
তবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী বান্ধব বিবৃতি চোখে না পড়লেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বাদ দিয়ে শিক্ষক সমিতি বিবৃতির রাজনীতি নিয়ে পড়ে থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
জবি শিক্ষক সমিতির সর্বশেষ কয়েকটি বিবৃতি ও চিঠি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ে কোষাধ্যক্ষ নিয়োগ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বরাবর শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আইনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক ড. একেএম লুৎফর রহমান
একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে ব্যক্তি আক্রমণ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. কামালউদ্দীন আহমেদের মেয়াদ শেষ হবার প্রায় ২ মাস পূর্বেই দ্বিতীয় মেয়াদে তাকে নিয়োগ না দেওয়ার দাবি জানান তারা। জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ পদের দৌড়ে আছেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুইজনই। চাপ প্রয়োগ করে এই পদ ভাগিয়ে নিতে নিজেদের স্বাক্ষরে নিজেদের নিয়োগের জন্য বারবার বিভিন্ন জায়গায় একই বিবৃতি দিচ্ছেন তারা। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, অর্থ ও হিসাব, আইসিটি দপ্তর ইত্যাদি পদেও নিয়োগ বিষয়ে কয়েকবার একই ধরনের বিবৃতি দেয়া হয়।
শিক্ষক সমিতির এসব অযাচিত বিবৃতি সাধারণ শিক্ষকদের যোগ্য পদে আসীনে অন্তরায় বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ও নীলদলের সাবেক সভাপতি সিনিয়র অধ্যাপক ড. জাকারিয়া মিয়া। তিনি বলেন, এসব বিবৃতির পেছনের উদ্দেশ্য ই থাকে এক প্রকার চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের লোকদের বিভিন্ন পদে বসানো। এসবের কারণে সাধারণ শিক্ষকেরা সামনেও আসতে পারেন না। যার ফলে যোগ্যরা বঞ্চিত হোন। ব্যক্তি আক্রমণ করে বিবৃতি দেয়া কখনো শোভনীয় হতে পারেনা।
তিনি আরও বলেন, ব্যক্তি স্বার্থে কোন সংগঠনের কাজ করার সুযোগ নেই। কোন সংগঠনের কাজ সামগ্রিক স্বার্থে হতে হয়।
তবে শুধু শিক্ষক নয়, শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়েও হস্তক্ষেপের অভিযোগ আছে শিক্ষক সমিতির বিরুদ্ধে। শিক্ষক সমিতির সভাপতি আইনুল ইসলামের বিরুদ্ধে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নির্বাচন পরিচালনায় ব্যর্থতার অভিযোগ আছে। নির্বাচনে নিজের লোককে বিজয়ী করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটি, সাংবাদিক সমিতির নির্বাচন দীর্ঘদিন বন্ধ রেখে পক্ষপাতিত্ব করার অসংখ্য অভিযোগের কারণে বারবার সমালোচিত হন এই শিক্ষক নেতা।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আইনুল ইসলাম বলেন, সরকারকে জানান দিতে এমন বিবৃতি দেই, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যেন নিয়োগ দেয়। আমাদের এখান থেকে নিয়োগ দিচ্ছে না বলে আমরা সরকারকে জানান দিচ্ছি। কোন ধরনের চাপ সৃষ্টি নয়। ৭০০ শিক্ষকের প্রতিনিধিত্ব করি আমরা এখান থেকেই যেন নিয়োগ আসে সে জন্য কাজ করি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামীকাল সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত বলব।