চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে রামদা হাতে থাকা তিনজন শনাক্ত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তি হয়েই ছাত্রলীগের উপপক্ষ চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ারের (সিএফসি) রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলেন সুলতান মাহবুব। লোকপ্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের উপপ্রচার সম্পাদকের পদও পান। গত বৃহস্পতিবার ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে রামদা হাতে তেড়ে যান তিনি। ছুটছিলেন এদিক-ওদিক।
শুধু তিনিই নন, ধারালো অস্ত্র হাতে সংঘর্ষে জড়ানো আরও দুজনের পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। তাঁরা হলেন যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সহসম্পাদক রুবেল মিয়া ওরফে মাহিন রুবেল এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগ কর্মী মোহাম্মদ সফল। দুজনই সিক্সটি নাইন উপপক্ষের রাজনীতিতে যুক্ত। বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজ, প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে তিনজনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তিনজনের হাতেই ছিল রামদা। সংঘর্ষের সময় দুই পক্ষের অন্তত ৫০ জনের হাতে ধারালো অস্ত্র দেখা গেছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরা এখন সময়ের দাবি। ছাত্রলীগের গৌরবময় ইতিহাসকে ভূলুণ্ঠিত করছেন কতিপয় ছাত্রনেতা।
খোরশেদ আলম, সহসভাপতি, নগর আওয়ামী লীগ
আগের বিরোধের জেরে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সংঘর্ষে জড়ান সিএফসি ও সিক্সটি নাইনের নেতা-কর্মীরা। সংঘর্ষে রামদা হাতে থাকা সুলতান মাহবুব থাকেন শাহ আমানত হলের একটি কক্ষে। এ হলটি নিয়ন্ত্রণ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ। রুবেল মিয়া ও মোহাম্মদ সফল থাকেন শাহজালাল হলে। এ হলের নিয়ন্ত্রণ সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেনের হাতে।
রামদা হাতে সংঘর্ষে অংশ নেওয়ার বিষয়টি প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন সুলতান মাহবুব। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সংঘর্ষের সময় রামদা হাতে দুই পক্ষ থেকে অনেকেই বের হয়েছিলেন। তিনি একা ছিলেন না। অন্যদিকে মোহাম্মদ সফলের দাবি, তিনি ঘটনাস্থলেই ছিলেন না। ছবি ও ভিডিও ভুয়া। আর রুবেল মিয়া বলেন, তিনি সংঘর্ষে ছিলেন। তবে তাঁর হাতে রামদা ছিল না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অস্ত্রধারীদের বিষয়ে প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন ও সহসভাপতি মির্জা খবির সাদাফ।
সর্বশেষ ৩১ মে ও ১ জুন চায়ের দোকানে বসা নিয়ে সংঘর্ষে জড়ায় সিক্সটি নাইন ও সিএফসি। এতে উভয় পক্ষের ১৬ জন আহত হয়েছিলেন। সংঘর্ষে অস্ত্রধারী তিন কর্মীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়েছিল। তবে এখন পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূরুল আজিম সিকদার প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করে সংঘর্ষে জড়িত শিক্ষার্থীদের চিহ্নিত করা হবে।
অবশ্য কখনো কখনো সমালোচনার মুখে ‘লোকদেখানো’ ব্যবস্থা নেয় কর্তৃপক্ষ। যেমন ২০২১ সালের অক্টোবরে সিক্সটি নাইন ও সিএফসির ১২ নেতা-কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছিল। পরে ‘মানবিক’ দিক বিবেচনা করে তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে গতকাল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে ফোন করেছেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও ১৪ দলের সমন্বয়ক খোরশেদ আলম। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরা এখন সময়ের দাবি। ছাত্রলীগের গৌরবময় ইতিহাসকে ভূলুণ্ঠিত করছেন কতিপয় ছাত্রনেতা।