Home জেলা রাজনীতি রাজশাহীতে আওয়ামী লীগে দুটি ধারা, ‘নতুন–পুরোনো’ সংকটে বিএনপি
সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩

রাজশাহীতে আওয়ামী লীগে দুটি ধারা, ‘নতুন–পুরোনো’ সংকটে বিএনপি

রাজশাহী জেলায় সংসদীয় আসন ছয়টি। এর মধ্যে পাঁচটির সংসদ সদস্য (এমপি) আওয়ামী লীগের। এর মধ্যে তিনজন একদিকে, অপর দুজন আরেক দিকে। আওয়ামী লীগের সাম্প্রতিক কর্মসূচি এই দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পালিত হচ্ছে। জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ও দুটি।

দলীয় অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি আবদুল ওয়াদুদ দাওয়াত পান না। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগেও রয়েছে সাধারণ সম্পাদকের বিরোধিতা।

অপর দিকে অন্তর্দ্বন্দ্বে লিপ্ত বিএনপি অগোছালো। জেলা আহ্বায়ক প্রায় চার মাস ধরে কারাগারে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরের আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে মহানগরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিরোধ তুঙ্গে উঠেছিল। নিজেদের মধ্যে মারামারি, নতুন কমিটির সদস্যসচিবের বিরুদ্ধে কেন্দ্রে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ করা হয়েছিল। তার পর থেকে কেন্দ্রীয় কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগে লিটন বনাম তিন সংসদ সদস্য

রাজশাহী আওয়ামী লীগের একটি পক্ষের তিন এমপি হচ্ছেন রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের ওমর ফারুক চৌধুরী, রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের আয়েন উদ্দিন এবং রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) আসনের এমপি পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তাঁদের সঙ্গে জেলার সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ ও মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকেও দেখা যাচ্ছে।

অপর পক্ষের দুই এমপি হচ্ছেন রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এনামুল হক ও রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনের মনসুর রহমান। এই পক্ষ মূলত রাজশাহীর মেয়র ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের অনুসারী। তাঁদের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামানকে দেখা যায়। জেলার সভাপতি অনিল সরকার অসুস্থতার কথা বলে দলীয় কর্মসূচিতে কম থাকছেন। দুই পক্ষই মনে করে, অনিল সরকার তাঁদের সঙ্গেই আছেন।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে পুঠিয়ার বানেশ্বরে শান্তি সমাবেশে আবদুল ওয়াদুদ ছিলেন প্রধান বক্তা, প্রধান অতিথি ছিলেন খায়রুজ্জামান লিটন। আবদুল ওয়াদুদ সেখানে না গিয়ে পাল্টা সমাবেশ করেছিলেন। গত ১৮ আগস্ট পুঠিয়া আওয়ামী লীগের জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি ছিলেন খায়রুজ্জামান লিটন। বিশেষ অতিথি ছিলেন এমপি মনসুর রহমান। এ অনুষ্ঠানে আবদুল ওয়াদুদ দাওয়াত পাননি।

এই বিভক্তির বিষয়ে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন প্রথম আলোকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে দলের সংসদ সদস্য রয়েছেন, এমন কয়েকজন নেতা একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী নিয়ে দলে বিভক্তির চেষ্টা করছেন। তাঁদের নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।’ তিনি বলেন, ২৫ আগস্ট বাঘার আড়ানীতে তথ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে তাঁকে ডাকা হয়নি। তাঁকে হেয় করা হয়েছে।

২৫ আগস্ট বাঘা আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। অনুষ্ঠানে খায়রুজ্জামান লিটন, এমপি এনামুল হক ও মনসুর রহমান দাওয়াত পাননি। সেখানে আবদুল ওয়াদুদ কারও নাম উল্লেখ না করে দলের একাংশের নেতাদের আক্রমণ করে বক্তব্য দেন।

এ ব্যাপারে আবদুল ওয়াদুদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘নেতা হিসেবে তিনি (লিটন) আমাদের মাথার ওপরে আছেন। তবে রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হচ্ছেন আবদুর রহমান।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাকেও তো পুঠিয়ায় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে দাওয়াত করা হয়নি। এ নিয়ে কী বলার আছে।’

এদিকে ছয় মাসের বেশি সময় ধরে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারকে বাদ দিয়েই দলীয় কর্মকাণ্ড চালানো হচ্ছে। ডাবলুকে দল থেকে অপসারণের দাবিতে মহানগরের সভাপতিসহ ৪৪ নেতা স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গত ২৭ মার্চ কেন্দ্রে পাঠানো হয়। ডাবলু সরকারের পক্ষে ৩৪ নেতার স্বাক্ষর করা চিঠি পাঠানো হয়। এর মধ্যেই ২৫ আগস্ট বাঘায় তথ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানের মঞ্চে দেখা যায় ডাবলু সরকারকে। সেখানে খায়রুজ্জামানকে ডাকা হয়নি।

ডাবলু সরকার প্রথম আলোকে বলেন, নেত্রী তাঁকে কাজ করতে বলেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ তাঁকে বাদ দিয়ে দলের কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে।

মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল বলেন, তাঁরা ডাবলু সরকারের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ করেছেন। তিনি আরও বলেন, রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ করতে হলে এ এইচ এম কামারুজ্জামানের (খায়রুজ্জামান লিটনের বাবা) রাজনীতি করতে হবে।

জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ‘দলের বিভিন্ন পরিকাঠামোর মধ্যে কাজ করতে গিয়ে কিছু ভুল–বোঝাবুঝি হতেই পারে। কিন্তু হতাশার জায়গা হচ্ছে, লিটন ভাই প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার পরে বেছে বেছে সংসদে ও রাজনৈতিক পদে যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের বিরোধীদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মদদ দিচ্ছেন।

জাতীয়, জেলা পরিষদ, স্থানীয় সরকারসহ একাধিক নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছেন, এমন নেতাদের সঙ্গে নিয়ে চলছেন তিনি। আমাকেসহ আরও সংসদ সদস্যদের নিয়ে প্রকাশ্যে বিভ্রান্তিকর কথা বলছেন, যা একজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের কাজ নয়। একটি পত্রিকায় এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বিব্রত লাগছে। তবু বলতে হচ্ছে, তৃণমূলের কেউ যেন বিভ্রান্ত না হন। আমাদের প্রত্যাশা, জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সন্তান হিসেবে শ্রদ্ধা ও সম্মানের জায়গায় লিটন ভাই সবার হয়ে থাকবেন।’

দ্বন্দ্ব ভুলে এক হচ্ছে বিএনপি

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান (মিনু); সাবেক মেয়র ও কেন্দ্রীয় নেতা মোসাদ্দেক হোসেন (বুলবুল) এবং শফিকুল হকের একসময় দোর্দণ্ড প্রতাপ ছিল। তাঁদের মতামত উপেক্ষা করে আনকোরা নেতাদের হাতে নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে। উঠতি নেতাদেরও কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে।

দলের একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, গত ১৫ বছরে যাঁরা বিএনপির সামনের সারির মুখ, তাঁদের বাদ দিয়ে নিজেদের ঘনিষ্ঠ অরাজনৈতিক লোকদের কমিটিতে রাখা হয়েছে।

জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, এ ব্যাপারে কমিটির নেতাদেরই জিজ্ঞেস করেন। মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ আলী বলেন, ‘সব মীমাংসা হয়ে গেছে। তাই তো একসঙ্গে চলছি।’

জেলা বিএনপি আহ্বায়ক কমিটি দিয়ে চলছে পৌনে চার বছর। জেলার ২৩টি সাংগঠনিক ইউনিটের মধ্যে মাত্র পূর্ণাঙ্গ কমিটি রয়েছে ৭টির। জেলা কমিটির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ কারাগারে। এ কারণে জেলা বিএনপি বিপর্যস্ত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *