কুমারখালীতে তরুণকে বিবস্ত্র করে মারধর, ভিডিও ছড়িয়েছে ফেসবুকে
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এক তরুণকে (২৫) পদ্মার চরে নিয়ে বিবস্ত্র করে মারধরের পর সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। মারধরের ভিডিও আজ মঙ্গলবার দুপুরে ছড়িয়ে পড়লে আলোচনা সৃষ্টি হয়। দ্রুত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পদক্ষেপ দাবি করছেন স্থানীয় লোকজন। এদিকে এ ঘটনায় জড়িত দুই কিশোর গা ঢাকা দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বুধবার রাতে উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নে মারধরের এ ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী তরুণ একজন দিনমজুর। অভিযুক্ত কিশোরেরা একই এলাকার বাসিন্দা। তারা ইটভাটার শ্রমিক।
ভুক্তভোগী তরুণ এ ব্যাপারে কুমারখালী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, মারধর ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগের তদন্ত চলছে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত কিশোরেরা পলাতক বলেন তিনি জানান।
ফেসবুক ও টিকটকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ঘুটঘুটে অন্ধকারে মুঠোফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে একজন ভিডিও ধারণ করছে। অপরজন টাকা ফেরত চেয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও ধাতব লাঠি দিয়ে মারধর করছে। মারধরের ভিডিও দিয়ে টিকটক বানানো হবে বলে ওই ভিডিওর কথোপকথনে শোনা যায়।
ওই তরুণকে অভিযুক্তরা সড়ক থেকে নৌকায় তুলে পদ্মা নদীর চরে নিয়ে বিবস্ত্র করে মারধর করে এবং টিকটক করার জন্য ভিডিও করতে থাকে।
মারধরের শিকার ওই তরুণ প্রথম আলোকে বলেন, তিনি বুধবার রাত নয়টার দিকে বাজারে চা পান করতে যাচ্ছিলেন। পথে এক কিশোর আরেক কিশোরকে তাঁর গায়ের ওপর ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। এরপর ওই দুজন তাদের পকেট থেকে ৫০০ টাকা চুরির অপবাদ দেয় তাঁকে। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে বাগ্বিতণ্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। কিছুক্ষণ পর তা মিটমাট হয়ে যায়। এরপর রাত ১০টার দিকে তিনি বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। সে সময় ওই দুই কিশোর তাঁকে জোরপূর্বক সিগারেট টানায়। একপর্যায়ে তাঁকে সড়ক থেকে নৌকায় তুলে পদ্মা নদীর চরে নিয়ে বিবস্ত্র করে মারধর করে এবং টিকটক করার জন্য ভিডিও করতে থাকে। এ সময় সেখানে তিনজন জেলে চলে এলে ওরা পালিয়ে যায়। পরে জেলেরা তাঁকে উদ্ধার করেন।
এ ঘটনায় জড়িত কিশোরদের বাড়িতে খোঁজ নিতে গেলে তাদের পাওয়া যায়নি। এ সময় এক কিশোরের অভিভাবকেরা বলেন, তাঁরা শুনেছেন, টাকা চুরি নিয়ে তাঁদের ছেলের সঙ্গে ওই তরুণের মারামারি হয়েছে। কিন্তু ছেলে আর বাড়ি ফিরে না আসায় আসল ঘটনা তাঁরা জানতে পারেননি।
আরেক কিশোরের বড় ভাই বলেন, তাঁর ভাই খুব অন্যায় করেছে। তিনি ঘটনাটি সুষ্ঠু তদন্তের প্রত্যাশা করেন।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল বাকী বাদশাহ বলেন, ‘মারধরের ভিডিও দেখেছি। সভ্য সমাজে মধ্যযুগীয় কায়দায় বর্বর নির্যাতন করা হয়েছে। আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’