Home বিশ্ব তুরস্ক-মার্কিন সম্পর্কে নতুন করে অনিশ্চয়তা
সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২৩

তুরস্ক-মার্কিন সম্পর্কে নতুন করে অনিশ্চয়তা

রাশিয়ার সঙ্গে লেনদেন এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়াকে সহযোগিতা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের পাঁচটি কোম্পানি ও এক ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন বৃহস্পতিবার এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ঘটনাটি এমন এক সময় ঘটল যখন আঙ্কারা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক কিছুটা নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তুরস্ক একটি ন্যাটো সদস্য দেশ। 

সুইডেনকে ন্যাটোর সদস্য করা হবে কি না—এ নিয়ে তুরস্ক এর আগে আপত্তি জানালেও এবার সে অবস্থান পালটানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। আগামী মাসে তুর্কি পার্লামেন্টে বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্তের কথা রয়েছে। ২০২২ সালে ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর রাশিয়া ও তার মিত্রদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে প্রতিবেশী তুরস্ক কৃষ্ণসাগরে সবগুলো সাপ্লাই রুটই খোলা রাখে। ওয়াশিংটনের অভিযোগ, এর ফলে মস্কো রাসায়নিক পণ্য, মাইক্রোচিপ ও যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি অনায়াসে ঐ পথে আনা-নেওয়া করতে পেরেছে। অর্থমন্ত্রী ওয়ালি আডিয়েমোসহ বাইডেন প্রশাসনের একাধিক সিনিয়র কর্মকর্তা যুদ্ধ শুরুর পর তুরস্ক সফর করে আঙ্কারার কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি বুঝিয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ দপ্তরের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘রাশিয়ার যুদ্ধের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যে কারো সঙ্গে লেনদেন যে করবে তার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে সেটি গত দেড় বছর ধরে তুরস্কের সরকার ও বেসরকারি খাতের লোকজনকে আমরা বুঝিয়েছি।’ওয়াশিংটনে রুশ দূতাবাস অথবা তুরস্কের সরকারের কাছ থেকে এই নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

তুরস্ক ছাড়া ফিনল্যান্ড ভিত্তিক দুটো প্রতিষ্ঠানকেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ফিনিশ লজিস্টিক কোম্পানি সিবেরিকা ঐ এবং লুমিনর এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাশিয়ায় নিয়মিত ইলেকট্রনিক্স পণ্য পাঠিয়েছে। কাউন্টারিং আমেরিকাস অ্যাডভারসারিস থ্রো স্যাংশন (সিএএটিএসএ) আইনের আওতায় নিষেধাজ্ঞাগুলো আরোপ করা হয়। কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিত্র দেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘটনা এটাই প্রথম। বিষয়টি দুদেশে ভবিষ্যত্ কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর গভীরভাবে রেখাপাত করতে পারে। তুরস্ক ইতোপূর্বে জানিয়েছিল, তারা নীতিগতভাবে নিষেধাজ্ঞা সমর্থন করে না, তবে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রুশ সেনাবাহিনীকে সহযোগিতাও তারা করবে না।

সুইডেন ও ফিনল্যান্ডকে ন্যাটো সদস্য করা হবে কি না—তা নিয়ে এর আগে ওয়াশিংটন ও আঙ্কারার সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি হয়। ফিনল্যান্ড চলতি বছর এপ্রিলেই ন্যাটোর সদস্য পদ পেয়েছে। এখন সুইডেন ন্যাটোর সদস্য হতে পারবে না আবার তুরস্কের বাধার মুখে পড়বে তা নিয়ে ওয়াশিংটন কিছুটা উদ্বিগ্ন আছে বলে জানা গেছে। যদিও পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ‘আশা করি, সুইডেনকে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তির ব্যাপারে তুরস্কের সহযোগিতা আমরা পাব।’ তিনি মনে করেন এই নিষেধাজ্ঞা দুদেশের সম্পর্কের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না।’ তিনি মূলত কূটনীতির ভাষায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। তবে পর্যবেক্ষকরা এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ থাকাকে একেবারে উড়িয়ে দিতে চান না। কারণ প্রথমত :ন্যাটো সদস্য হওয়ার পরও নিষেধাজ্ঞার খড়গ পড়ল তুরস্কের ওপর। দ্বিতীয়ত :সুইডেনের সদস্যপদের ওপর আপত্তি উঠিয়ে নেওয়ার পর দেওয়া হয়েছে এই নিষেধাজ্ঞা। বিষয়টি তুরস্কের জন্য বিব্রতকর।

উল্লেখ্য, তুরস্কের ওপর নিষেধাজ্ঞা এটিই প্রথম নয়। সাবেক ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনার জন্য দেশটির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসন তখন বলেছিল, এই ব্যবস্থা ন্যাটোর অন্য সদস্যদের হুমকির কারণ হয়ে উঠতে পারে। কেবল নিষেধাজ্ঞাই দিয়েছিল তাই নয়, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ওয়াশিংটন আঙ্কারার সঙ্গে তার আগে করা এফ-৩৫ স্টেলথ জেট চুক্তিও বাতিল করেছিল। এতে বোঝা যায়, এস-৪০০ যুক্তরাষ্ট্রকে কতটা ক্ষুব্ধ করেছিল। তত্কালীন সোভিয়েত ইউনিয়নকে রুখে দেওয়ার তাগিদ থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিল ন্যাটো। সোভিয়েত ইউনিয়ন যদিও এখন নাই কিন্তু বর্তমান বিশ্বে রাশিয়ার ভূমিকা সোভিয়েত ইউনিয়নের মতোই বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু করে রাশিয়া কার্যত সেই শীতল যুদ্ধ যুগ ফিরিয়ে এনেছে বলে মনে করা হয়। তাই ন্যাটোর প্রতিষ্ঠাকালীন মূলনীতিটি এখনো সমান প্রাসঙ্গিক বিবেচনা করা যায়।

যুক্তরাষ্ট্রের পর তুরস্কই ন্যাটোর সবচেয়ে বড় সৈন্য সরবরাহকারী দেশ। ১৯৫২ সালে তুরস্ক এই জোটে যোগ দেয়। বর্তমানে রাশিয়া যেভাবে প্রভাব বিস্তার করছে ও পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাব যেভাবে কমতে শুরু করেছে সেই প্রেক্ষাপটে ন্যাটোর সদস্য হিসেবে তুরস্কের অবস্থান খাটো করে দেখার অবকাশ নাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *