ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে খুলছে আজ বিমানবন্দর টু ফার্মগেট ১০ মিনিটে
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলার থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত অংশের মূল লাইনের দৈর্ঘ্য ১১.৫ কিলোমিটার এবং র্যাম্পের দৈর্ঘ্য ১১ কিলোমিটার। র্যাম্পসহ মোট দৈর্ঘ্য ২২.৫ কিলোমিটার। কাওলার থেকে ফার্মগেট অংশে ওঠানামার জন্য মোট র্যাম্পের সংখ্যা ১৫। এয়ারপোর্ট অংশে দুটি, কুড়িল অংশে তিনটি, বনানী অংশে চারটি, মহাখালী অংশে তিনটি, বিজয় সরণি অংশে দুটি ও ফার্মগেটে একটি। এর মধ্যে ১৩টি র্যাম্প যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এক্সপ্রেসওয়ের মূল সড়কে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা আপাতত ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার এবং ওঠানামার র্যাম্পের জন্য সর্বোচ্চ ৪০ কিলোমিটার। থ্রি-হুইলার, বাইসাইকেল, মোটরসাইকেল ও পথচারী চলাচল নিষিদ্ধ। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর যে কোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও গাড়ি থেকে নেমে ছবি তোলা সম্পূর্ণ নিষেধ।
টোল ৮০ থেকে ৪০০ টাকা : এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ে যানবাহনগুলোকে ভাগ করা হয়েছে চার শ্রেণিতে। শ্রেণিভেদে সর্বনিম্ন ৮০ থেকে সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে টোলের পরিমাণ। শ্রেণি-১-এ কার, ট্যাক্সি, জিপ, স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেহিকল, মাইক্রোবাস (১৬ সিটের কম) এবং হালকা ট্রাক (৩ টনের কম) ৮০ টাকা। শ্রেণি-২-এ মাঝারি ট্রাক (ছয় চাকা পর্যন্ত) ৩২০ টাকা। শ্রেণি-৩-এ ট্রাক (ছয় চাকার বেশি) ৪০০ টাকা। শ্রেণি-৪-এ ১৬ বা তার বেশি আসনের সব ধরনের বাসের টোল ১৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ওঠানামার স্থান : নির্ধারিত টোল পরিশোধ করে উত্তরা থেকে দক্ষিণমুখী গাড়িগুলো এক্সপ্রেসওয়েতে উঠতে পারবে কাওলার, প্রগতি সরণি ও বিমানবন্দর সড়কের আর্মি গলফ ক্লাবের র্যাম্প দিয়ে। নামার ক্ষেত্রে দক্ষিণমুখী গাড়িগুলোকে বনানীর কামাল আতাতুর্ক এভিনিউ, মহাখালী বাস টার্মিনাল ও ফার্মগেটের ইন্দিরা রোডের পাশের র্যাম্প ব্যবহার করতে হবে। একইভাবে দক্ষিণ থেকে উত্তরা অভিমুখী গাড়িগুলোকে এক্সপ্রেসওয়েতে ওঠার ক্ষেত্রে বিজয় সরণি ওভারপাসের উত্তর ও দক্ষিণ লেন এবং বনানী রেলস্টেশনের সামনের র্যাম্প ব্যবহার করতে হবে। নামার সময় উত্তরা অভিমুখী গাড়িগুলো ব্যবহার করতে পারবে মহাখালী বাস টার্মিনালের সামনের র্যাম্প, বনানীর কামাল আতাতুর্ক অ্যাভিনিউয়ের সামনের বিমানবন্দর সড়কের র্যাম্প, কুড়িল বিশ্বরোড ও বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনালের সামনের র্যাম্প।
২০২৪ সালের জুনে শেষ হবে পূর্ণাঙ্গ কাজ : প্রকল্পের মোট ব্যয় ৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পের প্রথম চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ১২ বছরে প্রকল্পটি সংশোধন হয়েছে পাঁচবার। ভূমি অধিগ্রহণ, নকশাবদল, অর্থের সংস্থানসহ নানা জটিলতায় চারবার পিছিয়ে যায় নির্মাণকাজ সমাপ্তের সময়সীমা। সর্বশেষ মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের মূল উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য ১৯.৭৩ কিলোমিটার। র্যাম্পসহ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মোট দৈর্ঘ্য ৪৬.৭৩ কিলোমিটার। আগামী বছরের জুনেই পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হবে বলে আশা করছেন প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা। রাজধানী ঢাকার যানজট নিরসনে নির্মাণাধীন প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপভিত্তিক (পিপিপি) দেশের বৃহত্তম প্রকল্প। ঢাকা শহরের উত্তর-দক্ষিণ করিডরের সড়কপথের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করবে এ প্রকল্পটি। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে কাওলার থেকে কুড়িল-বনানী-মহাখালী-তেজগাঁও-মগবাজার-মালিবাগ-খিলগাঁও-কমলাপুর হয়ে উড়ালসড়কটি চলে যাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। পুরোপুরি চালু হলে উড়ালসড়কটি ব্যবহার করে দৈনিক অন্তত ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে নির্বিঘ্নে। এ ছাড়া প্রকল্পটি ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে যুক্ত হলে ঢাকা ইপিজেড ও উত্তরবঙ্গের সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের যোগাযোগ সহজতর হবে।