বিএনপি-জাপা বৈঠক সিঙ্গাপুরে
ফখরুলসহ চার নেতা অবস্থান করছেন, আছেন চুন্নুসহ জাপার দুই নেতা
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাস বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। দলের পক্ষ থেকে চিকিৎসার কথা বলা হলেও এক দফার আন্দোলন যখন চূড়ান্ত পর্যায়ের দিকে তখন গুরুত্বপূর্ণ এসব নেতার বিদেশে অবস্থান নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা, গুঞ্জন চলছে। সর্ব শেষ গতরাতে জানা যায়, জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমামও সিঙ্গাপুরে গেছেন। বিএনপি ও জাপা নেতারা সেখানে বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।
দলীয় সূত্র বলছে, সেখানে সরকার পতনের ‘অলআউট’ কর্মসূচির ধরন ও দিনক্ষণ নিয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করবেন তাঁরা। খোলামেলা কথা বলে বার্তা দেবেন তারেক রহমান। বৈঠকে থাইল্যান্ডে অবস্থান করা স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুও ভার্চুয়ালি অংশ নেবেন। জানা যায়, সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ের আন্দোলনে নেতা-কর্মীদের রাজপথে রেখে চিকিৎসার জন্য গত ২৪ আগস্ট সিঙ্গাপুরে যান দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর দুই দিন পর যান মির্জা আব্বাস। আর দুই মাস ধরে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এখন বেশ সুস্থ। সিঙ্গাপুরে মির্জা ফখরুল, মির্জা অব্বাস ও ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মূলত দলীয় পরিকল্পনা নিয়ে নিজেরা বসবেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিকল্পনা করতে পারেন। সিঙ্গাপুরে বাংলাদেশ সরকারের নিয়ন্ত্রণ এবং সব ধরনের পর্যবেক্ষণের বাইরে থেকে বিএনপির এই তিন নেতা তারেক রহমানের কয়েকজন প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক এবং তাদের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা পৌঁছে দিতে পারেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে। এমনকি সিঙ্গাপুরে কয়েকটি দেশের কূটনৈতিক প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক করবেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ও মির্জা আব্বাসের ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পরিপাকতন্ত্রের জটিলতায় ভুগছেন মির্জা আব্বাস। তার হৃদরোগের ঝুঁঁকিও আছে। ইতিপূর্বে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন। তারই ফলোআপসহ সেখানে তাঁর স্ত্রী আফরোজা আব্বাসের কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হবে। মির্জা আব্বাসের আগে চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে যান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তাঁর সঙ্গে স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও সিঙ্গাপুরে যান। দুজনই নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। কয়েক বছর আগে মির্জা ফখরুলের ঘাড়ে ইন্টারনাল ক্যারোটিড আর্টারিতে ব্লক ধরা পড়ে। তার গলার ধমনিতে রক্ত চলাচলেও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছিল। তখন সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা হয়। এ ছাড়া সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খন্দকার মোশাররফ হোসেনও। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ২৭ জুন তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বর্তমানে লন্ডনে রয়েছেন। তিনিও চিকিৎসাজনিত কারণে বিদেশে অবস্থান করছেন বলে জানান দলের এক নেতা। গত ২৬ জুলাই দুর্নীতির মামলায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর ৯ বছরের সাজার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেন হাই কোর্ট। বিচারিক আদালতে রায় পৌঁছানোর ১৫ দিনের মধ্যে তাঁকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ৩০ মে দুর্নীতি মামলায় টুকুর ৯ বছরের কারাদন্ড বহাল রাখেন হাই কোর্ট। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, একদফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলন চলমান রয়েছে। এর অংশ হিসেবে শনিবার ঢাকার বাইরে সব মহানগরে কর্মসূচি হয়েছে। আমাদের নেতারা নানা কারণে দেশের বাইরে রয়েছেন। আন্দোলনে এর কোনো প্রভাব পড়বে না।
সিঙ্গাপুরে জাপা নেতারা : সিঙ্গাপুরে জাপা মহাসচিব চুন্নুও বৈঠক করবেন বিএনপি নেতাদের সঙ্গে। জাতীয় পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সিঙ্গাপুরে সফররত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মিটিং করবেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। কোনো ধরনের প্রচার ছাড়াই বৃহস্পতিবার থাইল্যান্ডে ট্রানজিট নিয়ে সিঙ্গাপুর গেছেন তিনি। তিনিও সস্ত্রীক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে থাইএয়ারওয়েজের ফ্লাইটে সিঙ্গাপুর গেছেন। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফখরুল ইমামও জাপা মহাসচিবের সঙ্গে আছেন। উভয় নেতাই বৃহস্পতিবার দেশ ছাড়েন।