Home দুর্ণীতি দৃষ্টি এবার দিল্লিতে
আগস্ট ২৮, ২০২৩

দৃষ্টি এবার দিল্লিতে

পাঁচ দিনের সফরে আগামী মাসে ভারত যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেখানে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এটাই হবে তাঁর শেষ ভারত সফর। এ জন্য দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে এমনিতেই আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এ ভারত সফর। তবে এ সফর ভিন্নমাত্রা এনে দিয়েছে একই সময়ে নয়াদিল্লিতে বিশ্বের হাইপ্রোফাইল সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের উপস্থিতি। থাকবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ বিশ্বের প্রভাবশালী রাষ্ট্রগুলোর প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীরা। তাঁদের সঙ্গেই জি-২০ সম্মেলনের বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্মেলনের দুই দিনের নানা আনুষ্ঠানিকতায় তাঁদের সঙ্গে দেখা হবে ও কথা হবে তাঁর। জো বাইডেনের সঙ্গে সরাসরি বৈঠকের কোনো সূচি না থাকলেও সাইডলাইনে একাধিক প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক হবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর।

সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ৮ সেপ্টেম্বর ভারত সফর শুরু করবেন। ১২ সেপ্টেম্বর তিনি সফর শেষ করবেন। সফরে মূলত প্রধানমন্ত্রী নয়াদিল্লিতে শিল্পোন্নত দেশগুলোর জোট জি-২০ এর শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেবেন। বাংলাদেশ এই ফোরামের সদস্য না হলেও অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রন জানানো হয়েছে। সফরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সূচি এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তবে সম্মেলনে আগে-পরে এই আনুষ্ঠানিক ও একান্ত বৈঠক হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো। এর পাশাপাশি সম্মেলনে অংশ নেওয়া কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে সাইডলাইন বৈঠকের সূচি নির্ধারণের কাজও চলছে। পররাষ্ট্র দফতর সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সম্মেলনে সাইডলাইন বৈঠকগুলো মূলত শেষ মুহূর্তে নির্ধারিত হয়। এখন আনুষ্ঠানিক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকগুলোর সূচি নির্ধারণের কাজ চলছে। এর বাইরে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা, ডিনার, গ্রুপ ফটোসেশন ও শীর্ষ নেতাদের নিজেদের মধ্যে মিথস্ক্রিয়ার জন্য আলাদা সময় থাকে, সেখানে শীর্ষ নেতারা নিজেদের মধ্যে কুশল বিনিময়সহ অন্যান্য সংক্ষিপ্ত প্রয়োজনীয় কথা সেরে নেন।

জানা যায়, জি-২০ এর সদস্যরা হলেন- যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, ভারত, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, সৌদি আরব, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, এবং একত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো।  জোটের সভাপতি ভারত এবারের শীর্ষ সম্মেলনে অতিথি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ, মিসর, মরিশাস, নেদারল্যান্ডস, নাইজেরিয়া, ওমান, সিঙ্গাপুর, স্পেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এ ছাড়া জাতিসংঘ, আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, ডব্লিউএইচও, ডব্লিউটিও, আইএলও, এফএসবি ও ওইসিডি এবং আঞ্চলিক সংস্থা হিসেবে এইউ, এইউডিএ-এনইপিএডি, আসিয়ান, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), সিডিআরআই-এর মতো সংস্থাকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হবে।

 

নয়াদিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, জি-২০ এর সদস্যরাষ্ট্রগুলোর মধ্যে শুধু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন ছাড়া বাকি সব রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানরা নিজেরাই সশরীরে অংশগ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এ সম্মেলন উপলক্ষে নয়াদিল্লি সফর ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান, জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদাসহ অন্য সদস্য বিশ্বনেতারা। নয়াদিল্লির সূত্রগুলো জানায়, ইতোমধ্যে সম্মেলনে অংশগ্রহণ উপলক্ষে ভারত সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক মিশনগুলো জোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের বাসস্থান থেকে শুরু করে সূচি তৈরির কাজ চলছে। তাঁদের থাকা এবং খাওয়া নিয়ে এখন জোর তৎপরতা চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের থাকার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে হোটেল আইটিসি মৌর্যে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং থাকবেন হোটেল তাজ-এ। এ ছাড়া হোটেল শাংরি লা-তে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের পাশাপাশি থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে জার্মানি থেকে আগত প্রতিনিধিদের। ফ্রান্সের রাষ্ট্রপতি ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ থাকবেন হোটেল ক্লারিজেসে। দিল্লির ইম্পেরিয়াল হোটেলে থাকবেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্টনি আলবানিজ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে হোটেল দ্য গ্র্যান্ডকে।

দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় থাকবে সবদিকই, আগ্রহ বেশি রাজনৈতিক ইস্যুতে : ঢাকার কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ জি-২০ এর সদস্য না হলেও নরেন্দ্র মোদি দুই দেশের সম্পর্কের মর্যাদা দিতে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকেই সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবদিক নিয়েই আলোচনা হবে। পাশাপাশি পর্যালোচনা হবে এত দিনের সব প্রকল্প ও নির্দেশনার। এ জন্য প্রস্তুতি চলছে দুই দেশেই। সূত্রমতে, এই সফরে চালু হবে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্লান্ট-২। এ ছাড়া ৬৫ কিলোমিটার খুলনা-মোংলা বন্দর রেলওয়ে এবং আখাউড়া (বাংলাদেশ) ও আগরতলা (ভারত) রেলওয়ে লিঙ্কেরও উদ্বোধন হবে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে প্রকল্পগুলোর উদ্বোধন করবেন। এ ছাড়া ভারতীয় গ্রিডের মাধ্যমে বাংলাদেশকে নেপাল থেকে বিদ্যুৎ আমদানির অনুমতিও দিয়েছে ভারত সরকার। বাংলাদেশ আশা করে ভারত একই ধরনের সহযোগিতা ভুটান থেকে বিদ্যুৎ আমদানির জন্যও করবে। এ ছাড়া এ সময় ভারতীয় রুপির পাশাপাশি বাংলাদেশি টাকাতেও দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য লেনদেন এবং রুপি কার্ড ও টাকা কার্ড নিয়ে আলোচনা হবে। তবে শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদির নিজেদের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়ে কী আলাপ হয় সে বিষয়েই আগ্রহ বেশি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *