রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লাভরভ হঠাৎ কেন ঢাকা সফরে আসছেন
গত বছরের নভেম্বরে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভের ঢাকা সফরটি একেবারে শেষ মুহূর্তে বাতিল হয়ে গিয়েছিল। এবার হঠাৎ করে আবার তাঁর ঢাকা সফরের খবরটি প্রকাশের পর বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে আগামী মাসে দিল্লিতে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে যাওয়ার আগে তিনি জাকার্তা থেকে ঢাকায় আসছেন। মূলত ১২ ঘণ্টার বেশি সময়ের এই সফরে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পাশাপাশি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠক করবেন।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর পশ্চিমা চাপে মোটামুটি কোণঠাসা রাশিয়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিষয়টিতে জোর দিচ্ছে। পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বন্ধুত্ব ঝালাইয়ের পাশাপাশি নতুন বন্ধু খোঁজাটাও রাশিয়ার অগ্রাধিকার।
ফলে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন এবং মানবাধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চাপ সামাল দিতে পশ্চিমাদের প্রতিপক্ষ রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফর বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিক সমর্থনের বার্তা দেয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কূটনৈতিক সূত্রগুলো এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, গত নভেম্বরে সের্গেই লাভরভের ঢাকা সফর বাতিল হয়ে গেলেও তাঁর সফর আয়োজনের বিষয়ে ঢাকায় রাশিয়া দূতাবাস নিয়মিতভাবে রাজনৈতিক স্তরে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত রোববার ঢাকায় রুশ দূতাবাস এক কূটনৈতিক পত্রে সের্গেই লাভরভের ৭ ও ৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা সফরের প্রস্তাব দেয়। সেই অনুযায়ী এখন রাশিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের প্রস্তুতি চলছে।
জানা গেছে, সের্গেই লাভরভের বাংলাদেশ সফরটি দুই দেশের সম্পর্ক জোরদারের রাজনৈতিক একটি বার্তা থাকলেও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। বিশেষ করে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, প্রতিরক্ষা, গাজপ্রম, গম ও সার আমদানি, সইয়ের তালিকায় থাকা নানা চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক ইত্যাদি বিষয় আলোচনায় আসার কথা রয়েছে। দুই দেশ আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সের্গেই লাভরভের আলোচ্যসূচি চূড়ান্ত করবে। এ বিষয়গুলোর পাশাপাশি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা রাশিয়ার জাহাজকে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশে বাধা দেওয়ার বিষয়টি সের্গেই লাভরভ আলোচনায় তুলবেন বলে বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা মনে করছেন।
স্বাধীনতার পর থেকে সের্গেই লাভরভ হতে যাচ্ছেন বাংলাদেশ সফরকারী রাশিয়ার প্রথম কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এই সফরের রাজনৈতিক বার্তাটা কী হবে, এমন প্রশ্নের উত্তরে একটি কূটনৈতিক সূত্র বলছে, অনিবার্যভাবে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবার ঢাকায় এসে গতবার সফরটি বাতিল হওয়ায় যে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে, সেটি দূর করতে মনোযোগী মস্কো। বিশেষ করে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে একঘরে হয়ে পড়া রাশিয়া এখন বিশ্বের নানা প্রান্তে বন্ধুর সংখ্যা বাড়ানোর ওপর জোর দিচ্ছে। আর সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বিরোধিতা করে জোরালোভাবে ঢাকার পাশে থাকার বার্তা দিয়েছে মস্কো। ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সেই বার্তাই পুনর্ব্যক্ত করে যাবেন সের্গেই লাভরভ।