Home নির্বাচন এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ : মির্জা ফখরুল
জুলাই ২৯, ২০২৩

এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ : মির্জা ফখরুল

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে সরকার পতনের ডাক দিয়েছেন দলটির নেতারা। সমাবেশে ‘এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ’ ঘোষণা করে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গ্রেফতার-হয়রানি করে আমাদের থামানো যাবে না, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন দমন করা যাবে না। সরকারের পতন না ঘটিয়ে বিএনপি কর্মীরা বাড়িতে ফিরে যাবে না। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে তিনি এই ঘোষণা দেন।

‘গণতন্ত্রের ঘাতক, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও সর্বনাশা অনাচারে লিপ্ত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি এবং বেগম খালেদা জিয়াসহ সকল রাজবন্দীর নিঃশর্ত মুক্তি ও সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণআন্দোলনে একদফার এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এদিন দুপুরে জুমার নামাযের পর কুরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় সমাবেশ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের সভাপতিত্বে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম সমাবেশের সঞ্চালনা করেন। মহাসমাবেশে যোগ দিতে ভোর থেকেই ছুটে আসেন নেতাকর্মীরা। ফলে মহাসমাবেশকে কেন্দ্র ঢাকার অলিগলিতে বিএনপির নেতাকর্মীর ঢল নামে। লোকে লোকারণ্য হয়ে যায় বিএনপির এ সমাবেশ। নয়াপল্টন ও আশপাশের এলাকা হয়ে ওঠে জনসমুদ্র। পল্টন এলাকার কোথায়ও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না।

নয়টি বড় ট্রাকের দুইপাশের ঢাকনা খুলে একটির সঙ্গে আরেকটি একত্রিত করে তৈরি করা হয় মহাসমাবেশের অস্থায়ী মঞ্চ। তাতে বিছানো হয় লাল কার্পেট। উত্তরমুখী এই মঞ্চে নেতাদের জন্য বসানো হয় শতাধিক চেয়ার। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য রাখা হয় দুটি আলাদা চেয়ার। পুলিশের বেঁধে দেওয়া সীমানায় ফকিরাপুল, পল্টন, কাকরাইলসহ আশপাশে টাঙানো হয় দেড় শতাধিক মাইক।

সারাদেশের নেতাকর্মীরা অংশ নেন মহাসমাবেশ। আগে থেকেই ঢাকার বাইরে থেকে আসা নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে শোডাউন ও মিছিল করেন সকাল থেকে। বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হন। হাতে হাতে ব্যানার, ফেস্টুন, প্লে কার্ড দেখা যায়। সমাবেশ কেন্দ্র করে নয়াপল্টন এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সতর্ক অবস্থানে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের এই মহাসমাবেশ পরিবর্তনের মাইলফলকের বাংলাদেশ গড়ার সমাবেশ। এ দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এই গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল কায়েম করেছিল এই আওয়ামী লীগ। জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে তার আদর্শ গণতন্ত্রকে বিলীন করতে চেয়েছিল, কিন্তু তারই উত্তরসূরী খালেদা জিয়া ৯০-এ স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে করেছিলেন।

এখন বক্তব্য দেয়ার সময় নেই, মাঠে আছি। এখন একটাই লক্ষ্য গণতন্ত্রের বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ বলেছিল, ১০ টাকা সের চাল খাওয়াবে, কিন্তু এখন চালের দাম ৮০ থেকে ৯০ টাকা। ঘরে ঘরে চাকরি দিবে কিন্তু এখন ২০ লাখ টাকা ঘুষ না দিলে চাকরি হয় না। আবার আওয়ামী লীগ না করলে চাকরি হয় না। আমাদের দেশের মানুষেরা কষ্ট করে ডলার রিজার্ভ বাড়ায় আর তারা তা বিদেশে পাচার করে। এরা অমানবিক সরকার।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, এই সরকার সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা নির্বাচন ব্যবস্থা শেষ করে দিয়েছে। এদের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। দফা এক, দাবি এক- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গ্রেফতার করে আমাদের থামানো যাবে না, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আন্দোলন দমন করা যাবে না।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, তারেক রহমানকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তারপরও তিনি দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন দেশকে রক্ষা করার জন্য। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ধ্বংস করে বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে প্রশাসনকে ব্যবহার করে জোরপূর্বক ক্ষমতায় রাখতে চায়। এ অবৈধ সরকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে আটক রেখেছে। তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে সাজা দিয়ে আটকে রেখেছে। আন্দোলনের মাধ্যমে আমরা তাকে মুক্ত করব।’

মির্জা ফখরুল বলেন, এ সমাবেশে প্রবেশের সময় কাকরাইলে  দেখলাম হাইমচর থেকে আসা বয়ষ্ক লোক দাঁড়িয়ে আছে দেশে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য। বাংলাদেশে গত দশ বছরে একশ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়ে গেছে। দেশের মায়েরা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কাপড় তৈরি করছে, কৃষক পরিশ্রম করে খাদ্য উৎপাদন করছে। বিদেশে শ্রমিক ভাইয়েরা হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠায় আর তারা চুরি করে টাকা বিদেশে পাচার করছে। এখন স্যাংশন আসার পর আমেরিকা পাচার হওয়া টাকা ফেরত এনে আবার ইনসেনটিভ নিচ্ছে। চুরি করা টাকা ফেরত এনে আবার দেশের টাকা লুটেপুটে নিচ্ছে। আগামীর বাংলাদেশকে ফেরৎ আনতে এ যুবকদের এগিয়ে আসতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ। বর্তমান বিচার ব্যবস্থা ন্যায়বিচার করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ বিচার ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করতে হবে। আমাদের অনেক নেতাদের মামলা দ্রুত রায় দেওয়ার জন্য এগিয়ে নিচ্ছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমাদের ৬শ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৪০ লাখ নেতাকর্মীরা বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। শত শত নেতাকর্মীকে খুন করা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের এখনো বছরের পর বছর কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। প্রশাসন ও পুলিশ ভাইদের বলতে চাই বেআইনি গ্রেপ্তার বন্ধ করুন। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন।

সভাপতির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি নেতাদের পরিশ্রমী চেহারাই প্রমাণিত, এ সরকারের সময় শেষ। এ মহাসমাবেশ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা এক হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে। কী লাভ হলো মহাসমুদ্র থেকে এক ফোঁটা পানি নিয়ে। আমাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করতে দেওয়া হলো না, বিচারকের রায় আছে এই অজুহাতে। অথচ কিছুদিন আগে আওয়ামী লীগ সমাবেশ করেছে তখন কোনো সমস্যা হয়নি। পল্টন আমরা শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছি; আমাদের বাধা দেওয়া হলো। কিন্তু আমরা একদিন পিছিয়ে আনলাম। এরপরও বাধা দেওয়া হলো। আজ সকাল দশটা অনুমতির কথা বলা হলো। কিন্তু আমরা অনড় পল্টনে সমাবেশ করবো। আমাদের কথা পরিষ্কার, বিএনপি নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় ১৯৯০ সালের মতো আন্দোলনের মাধ্যমে জেলের তালা ভেঙে আমাদের ভাইদের মুক্ত করবো। তিনি বলেন, এই সরকারের সময় নেই, সময় শেষ। তিনি বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা সারাদেশ থেকে এসেছে। তারা হোটেল উঠেছে। কিন্তু এই সরকারের পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে প্রায় হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে আটক করেছে। তাতে আমাদের থামাতে পেয়েছে? জনসমুদ্র থেকে এক হাজার মানুষ জেলে নিলে কি থামাতে পারবে? না। এবার জনগণ বেরিয়ে এসেছে, থামাতে পারবে না। থামাতে চাইলে একটাই কথা- পদত্যাগ করতে হবে। তিনি  বলেন, আমরা জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। আমরা আর অনুমতি চাইব না। দেশের যেকোনো জায়গায় গণতান্ত্রিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করব, কেউ বাধা দিতে পারবে না।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান বলেন, বিগত এক বছর যাবৎ এই সরকারের ওপর অনাস্থা দিয়েছি। আজ এই সরকারের ওপর আবার অনাস্থা প্রস্তাব করছি। তিনি বলেন, এই সমাবেশ প্রমাণ হয়েছে, বাংলাদেশে এই সরকার আর ক্ষমতায় থাকতে পারে না। এই সরকার আমাদের কথা বলতে দেয় না। আর বিগত এক বছর যাবৎ আমরা এই সরকারের ওপর অনাস্থা দিয়েছি। আজ এই সরকারের ওপর আবার অনাস্থা প্রস্তাব করছি। তিনি  বলেন, এখান এই সরকারকে একটি বার্তা জানাতে চাই, আপনারা শান্তিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে জনগণের ক্ষমতা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিন। আর আমরা দেশে গণতন্ত্র নতুন করে কায়েম করবো।

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, প্রতিদিন এই সরকারকে নামাই। কিন্তু বক্তব্যে কি এই সরকার নামবে? আজকে কিন্তু যুদ্ধের ময়দানে আছি। ৭১ সালে গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করেছি। এখনো গণতন্ত্রের জন্য যুদ্ধ করছি।  নেতাকর্মীদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, এই সরকারের পতন না করে আপনারা ঘরে ফিরে যাবেন না।  কোনো কর্মসূচি আসলে আপনারা থাকবেন, থাকবেন? এ সময় কর্মীরা বলেন, থাকবো। তাই সরকারের পতন না দেখে আপনারা ঘরে ফিরবেন না।বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমরা খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। কিন্তু আদালত তাকে জামিন দিলো না কেন। কারণ, এই উচ্চ আদালত, নি¤œ আদালত শেখ হাসিনাকে আবার ক্ষমতায় রাখতে চায়। সুতরাং যে আদালতে শেখ হাসিনার হাতের মুঠোয়, যে প্রশাসন তার হাতের মুঠো থেকে বেরুচ্ছে না সেই অবস্থায় ফয়সালা করতে হবে রাজপথে। যারা ঢাকায় আছেন, তারা ঢাকায় থাকেন। শেখ হাসিনার পদত্যাগের আগ পর্যন্ত ঘরে ফিরবেন না। এ সময় তিনি বলেন, শুধু বক্তব্য দিলে কি শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে নামবে? ভাষণে যদি দেশ স্বাধীন হতো, তাহলে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণে দেশ স্বাধীন হত। দেশ স্বাধীন হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন, এই সরকারকে নামাতে যুদ্ধের ময়দানে নামতে হবে। গণতন্ত্র উদ্ধারের জন্য যারা থাকবে তাদের অবশ্যই যোদ্ধার সার্টিফিকেট দিতে হবে। এ বিষয়টি আমি তুলে ধরবো। তিনি আরো বলেন, ‘কথা এক- শেখ হাসিনার পদত্যাগ। ফয়সালা করতে হবে রাজপথে। শেখ হাসিনাকে বিদায় করে ঘরে ফিরতে হবে। এই সরকারকে কেউ রাখতে পারবে না। দেশের মালিক ভারত, চীন বা রাশিয়া নয়, এ দেশের মালিক জনগণ।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ করে আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এই সরকারকে বিদায় না করা পর্যন্ত কেউ বাড়ি ফিরে যাবেন না। যাবেন? না। তাই যতক্ষণ না পর্যন্ত পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন ততক্ষণ কেউ যাবেন না। তিনি বলেন, সামাজিক কোনো অনুষ্ঠান থাকলে সেখানে আমরা যাবো না। দেশ ও গণতন্ত্র রক্ষার চেয়ে বড় কোনো অনুষ্ঠান নেই। তাই কোনো অনুষ্ঠানে যাবো না। ঝড় ও বৃষ্টি মানবো না। আর যে কর্মসূচি দেবো, তা শক্তভাবে পালন করতে হবে। তিনি বলেন, এখানে আজকে ইন্টারনেট নাই। এর পিছনে যারা কাজ করছেন, তারা হচ্ছেন ভোট চোরদের দালাল। সুতরাং সাবধান। সাবধান, এই ভোট চোরদের সঙ্গে যারা আছেন তারা কিন্তু চিহ্নিত হয়েছেন। তাই সাবধান হয়ে যেতে হবে।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, গত দুই-তিন দিনে প্রচুর বিএনপি’র নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যারা এই কাজটি করছেন তারা ভোট চুরির প্রকল্পের অংশ হিসেবে এই কাজটি করছেন। তারাও সবাই চিহ্নিত হচ্ছে। আজকের সভার পরে এই সরকারের থাকার আর কোনো সুযোগ নেই মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, এই সরকারের সঙ্গে কেউ নাই। আগেও নাই, ডানেও নাই এবং বামেও নাই। কার ওপর বিশ্বাস করে ভোট চুরির প্রকল্পের বাস্তবায়নের চিন্তা করছে। কিন্তু এটা এবার বাস্তবায়ন হবে না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যে শেষ হলে দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অডিও কলে মহাসমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। মাইকে তারেক রহমানের বক্তব্য শুনে নেতাকর্মীদের উজ্জিবিত হতে দেখা যায়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, শেখ হাসিনা দেশের জনগণের ভোটের অধিকার, গণতন্ত্রের হত্যাকারী। এ  স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরে যাবে না।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, মাত্র বিশ ঘন্টার নোটিশে আজ জনতার ঢল নেমেছে। চার দিকে মানুষের ¯্রােত। আওয়ামী লীগের সমাবেশে চেয়ার খালি। কারণ শেখ হাসিনা ভোট চোর। শুধু দেশেই না আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে শেখ হাসিনার জন্য। কারণ শেখ হাসিনার সরকার লাশের নামেও গায়েবী মামলা দিচ্ছে। তার নির্বাচনে ভোট দিতে মানুষ যায় না। যায় কুকুর গরু ছাগল। তার বিরুদ্ধে জনতার দাবানল জ্বলে ওঠেছে। অন্যায়-নির্যাতনের কারণে খালেদা জিয়ার পা ধরে মাফ চাওয়ার পরামর্শ দেন বরকত উল্লাহ বুলু।

বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেন, রক্ত দিয়ে লড়াই করে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এখন আরেকবার লড়াই করে দেশের গণতন্ত্র ফিরে আনতে হবে। এ সরকারের পতন ঘটিয়ে দেশকে রক্ষা করতে হবে।

ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, দেশের কোন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নেই, আওয়ামী লীগ ধ্বংস করেনি। দেশের সবকিছুই ধ্বংস করে দিয়েছে। স্বৈরাচারী হাসিনা এখন বিএনপি নেতাদের সাজা দেওয়ার জন্য বিচারবিভাগের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছে। কিন্তু বিএনপি সেই সুযোগ দিবে না।

হাবিব উন নবী খান সোহেল বলেন, যে মহাসমাবেশ হচ্ছে আপনি দেখে যান কী পরিমাণ অন্যায়, অত্যাচার করেছেন। লাখ লাখ মানুষ নিজেদের কাজকর্ম বাদ দিয়ে জড়ো হয়েছে। আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হয়ে গেছে। বিএনপি কর্মসূচি দিলে পিছনে পিছনে কর্মসূচি দিচ্ছে। ঘোড়ার পিছনে থাকলে লাথি খেতে হয়। বাংলাদেশের টাকা পাচার করে বাবার নামে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। মহাকাশে গেলেও তাদের দুর্নীতি পাওয়া যায়। হাবিবুন নবী খান সোহেল আরও বলেন, এবারও ভোট দেওয়ার আগে টালবাহানা শুরু করেছে। শেখ হাসিনা ইয়াইয়া খানের প্রেতাত্মা। ধরে ধরে ধরে না, জনগণ ধরলে ছাড়ে না। শেখ হাসিনার পতন হবেই।

ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, জনগণ তাদের অধিকার ফেরত চায়। সেই সাথে গুম হওয়া ভাইদের ফেরত চায়। সব খুন হওয়া পরিবার বিচার চায়। এ আন্দোলনের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা থেকে হটিয়ে বিচার করা হবে। ডা. এজেএম জাহিদ হাসান আরও বলেন, দাবি একটাই জনগণ তাদের ভোটের অধিকার ফেরত চায়। এই এক দফা আন্দোলনে জনগণ ভোটের অধিকার ফেরত পাবে। বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে।

শামসুজ্জামান দুদু বলেন, এ দেশের মানুষ অনেক ধৈর্য ধরেছে। এ সমাবেশ থেকে সরকারের পতন ঘটিয়ে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়া হবে। বৃষ্টি উপেক্ষা করেই বিএনপি নেতাকর্মীরা মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন ও অবস্থান করেন। এ সময় বক্তারা বলেন, বৃষ্টি আল্লাহর রহমত। গরমের কারণে সবাই কষ্ট পাচ্ছে। তাই আল্লাহর রহমত শুরু হয়েছে।  শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে এই বৃষ্টি কিছুই না।  বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শামা ওবায়েদ বলেন, সমাবেশে বৃষ্টির মাধ্যমে আল্লাহর রহমত শুরু হয়েছে। এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত নেতাকর্মীরা বৃষ্টির মধ্যে মাঠে অবস্থান করবেন।

যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দীন টুকু বলেন, ভোট চোর ক্ষমতায় থাকতে পারে না। জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। নতুন প্রজন্মের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না।  মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস বলেন, এ সরকার বিএনপির নেতাকর্মীদের গুম খুন করে ১৫ বছর ক্ষমতায় বসে আছে। এ স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরে যাবো না।

মহাসমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন,  বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, নিতাই রায় চৌধুরী, মোহাম্মদ শাহজাহান, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ভিপি জয়নাল, মিজানুর রহমান মিনু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিন, আব্দুস সালাম আজাদ, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মীর নাছির উদ্দিন প্রমুখ।

দুপুর ১টার দিকে বৃষ্টি নামলেও নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে অবস্থান করেন। এখানে জুমার নামাজ আদায় করেন আগত নেতাকর্মীরা। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের ঢল নামে। নয়াপল্টন হয়ে ওঠে জনসমুদ্র। মৎস্য ভবন, কাকরাইল, মালিবাগ, মতিঝিল, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, মগবাজার, দৈনিক বাংলা মোড় এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে নেতাকর্মীদের অবস্থান। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠে সমাবেশ। নয়াপল্টনের ভিআইপি সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *