নির্বাচনে গেলে দালাল হিসাবে চিহ্নিত হবে
সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি আদায়ে টানা দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচিতেও ব্যাপক শোডাউন করেছে বিএনপি। বুধবার ঢাকা মহানগরীসহ খুলনা ও চট্টগ্রাম মহানগরে এ কর্মসূচি পালন করে দলটি। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে আব্দুল্লাহপুর থেকে সকাল ১১টার দিকে পদযাত্রা শুরু হয়। রামপুরা ব্রিজে যুক্ত হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার শান্তিপূর্ণভাবে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয় ২৪ কিলোমিটারের এ পদযাত্রা। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় পদযাত্রার সমাপনী বক্তব্যে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে মির্জা আব্বাস বলেন, যারা নির্বাচনে যাবে তারা সরকারের দালাল হিসাবে চিহ্নিত হবে। তাদের বিচার হবে এই দেশের মাটিতে। ‘ইউরোপ-আমেরিকা তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে কিছু বলেনি’-আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমরা তো তাদের দাওয়াত করে আনিনি। শুধু বিএনপি নয়, সারা বিশ্বই সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। এ দেশে নির্বাচন হয় না, গুম-খুন হয়-এ কারণে তারা আসছে। কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, পুলিশের সবাই খারাপ নয়। তবে যারা এসব করছেন তারা সাবধান হোন।
এদিকে রাতে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, লক্ষ্মীপুরে কৃষকদল নেতা সজীব হোসেনকে হত্যার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ সব মহানগর ও জেলায় শোকর্যালি অনুষ্ঠিত হবে। বিকাল ৩টায় নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে মগবাজারে গিয়ে শেষ হবে শোকর্যালি। এছাড়া সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবি আদায়ে শুক্রবার বাদ জুমআ ঢাকাসহ সারাদেশে বিএনপির পক্ষ থেকে মসজিদে মসজিদে লিফলেট বিতরণ করা হবে। ১২ জুলাই নয়াপল্টনের সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগে ‘একদফা’ আন্দোলনের ঘোষণা দেয় বিএনপি। দাবি আদায়ে ঘোষণা করা হয় দুদিনের পদযাত্রা। পৃথকভাবে সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনে করে একদফা দাবিতে অভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করে সমমনা দল ও জোটগুলো।
সরকার পদত্যাগের প্রথম ঘোষিত দুদিনের পদযাত্রা বুধবার শেষ হলেও নতুন কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়নি। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে প্রাথমিক আলোচনা চলছে। তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। শুক্রবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে পরবর্তী কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। শনিবার নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে তারুণ্যের সমাবেশে ঘোষণা করা হতে নতুন কর্মসূচি।
দ্বিতীয় দিনের পদযাত্রায় অংশ নিতে সকাল থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আব্দুল্লাহপুর পলওয়েল মার্কেটের সামনে জড়ো হয়। সেখানে খোলা ট্রাকের ওপর অস্থায়ী মঞ্চে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা। ১১টার দিকে কর্মসূচির উদ্বোধন করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস সরকারের উদ্দেশে বলেন, ১৫ বছর আপনাদের অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেছে বিএনপি। আর সহ্য করব না। দেশের জনগণ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা জেল খাটতে শিখেছে, মৃত্যুবরণ করতে শিখেছে। মিছিল করতে শিখেছে, রৌদ্রের তাপ সহ্য করতে শিখেছে। আপনাদের অত্যাচার আর সহ্য করব না। এখন থেকে অত্যাচারের জবাব দেব। সব বাধা অতিক্রম করে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনবে বিএনপি।’
আওয়ামী লীগ শান্তি মিছিলের নামে অশান্তি তৈরি করছে এমন দাবি করে তিনি বলেন, মঙ্গলবার লক্ষ্মীপুরে আমাদের লোক মেরেছে। বিএনপির মিছিল-মিটিংয়ে কোনো রকম ঝামেলা হয় না। আমাদের পদযাত্রা শান্তিপূর্ণ। আওয়ামী লীগ ঝামেলা তৈরি করতে চান কেন?
মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপির পদযাত্রায় আওয়ামী লীগ পুলিশ হামলা করে বহু নেতাকর্মীকে আহত ও একজনকে হত্যা করেছে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ‘আপনারা বাঙলা কলেজ থেকে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করবেন, আমরা ছেড়ে দেব না। ছেড়ে দেওয়ার দিন শেষ, খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ। আর কাউকে ছাড় দেওয়া যাবে না। আমাদের অধিকারকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। এই বাংলাদেশ কারও করদরাজ্য নয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সংবিধানের বাইরে এক চুলও নড়বেন না। খুব ভালো কথা, আপনার কথায় আপনি স্থির থাকেন। আমরাও বলি সংবিধানের বাইরে এক পাও দেব না। কোন সংবিধান? খায়রুলের সংবিধান নাকি বাংলাদেশের সংবিধান। আমরা চাই অখণ্ড সংবিধান, যে সংবিধানে এক চুলও কাটাছেঁড়া করা হয়নি। উপরে রোদ নিচে উত্তপ্ত রাজপথ আর আওয়ামী লীগের অত্যাচার-এই তিন বাধা অতিক্রম করে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে বলে জানান তিনি।
ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় পদযাত্রাপূর্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, কেন্দ্রীয় নেতা জয়নাল আবদিন ফারুক, মুস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, রকিবুল ইসলাম বকুল, আমিরুল ইসলাম আলীম প্রমুখ।
সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে শুরু হয় পদযাত্রা। এ সময় নেতাকর্মীরা সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেয়। বিমানবন্দর-কুড়িল বিশ্বরোড-নতুন বাজার-বাড্ডা হয়ে রামপুরা ব্রিজে গিয়ে উত্তর বিএনপির পদযাত্রা শেষ হয়। এখান থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে পদযাত্রা শুরু হয়ে আবুল হোটেল-খিলগাঁও-বাসাবো-মুগদাপাড়া-সায়েদাবাদ ঘুরে যাত্রাবাড়ী (চৌরাস্তা) গিয়ে শেষ হয়। এর আগে সকাল থেকে মহানগর দক্ষিণের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে রামপুরা ব্রিজের এসে জড়ো হয়। মহানগর দক্ষিণ যুবদল, ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনগুলোও আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন।
রামপুরা ব্রিজের কাছে কথা হয় পদযাত্রায় অংশ নেওয়া হাতিরঝিল থানা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সভাপতি পদ প্রত্যাশী মুনতাকিম সারোয়ার রিকির সঙ্গে। একদফার আন্দোলন প্রসঙ্গে তিনি যুগান্তরকে বলেন, এ সরকারের পদত্যাগ ছাড়া আমাদের বিকল্প কোনো ভাবনা নেই। দেশের জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে আমরা রাজপথে নেমেছি। সেটা নিশ্চিত করেই ঘরে ফিরব। একদফা দাবি আদায়ে সব ভয়ভীতি উপেক্ষা করে যুবদল রাজপথের আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেবে বলে জানান তিনি।
যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে পদযাত্রা শেষ হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় মহানগর দক্ষিণের যুগ্ম আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, সদস্য ইশরাক হোসেন, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, মহিলা দলের সভানেত্রী আফরোজা আব্বাস, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।