প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল ওয়ান-ইলেভেনে
বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কাজ করে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলোর ‘অধ্যক্ষ সম্মিলন ও বৃত্তি বিতরণ-২০২৩’ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এই দিনে (২০০৭ সালের ১৬ জুলাই) জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রথমে আমাকে গ্রেফতার করেছিল। আমিন নামের একজন সামরিক কর্মকর্তা আমাকে প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন-যিনি তখনকার সবচেয়ে ক্ষমতাধর ছিলেন। তখন সেনাবাহিনীকে বলেছিলাম, আমি প্রধানমন্ত্রীর মর্যাদা চাই না, নির্বাচন চাই-যার মাধ্যমে দেশবাসী তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জেলে আমার সঙ্গে দেখা করতে আসা সেনা সদস্যকে বলেছিলাম, আমার বাবা দেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। আমিও প্রধানমন্ত্রী ছিলাম। আমার সম্পদ বা বাড়ি-গাড়ির কোনো লোভ নেই। আমি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চাই। আমি আমার ভাগ্য গড়তে নয়, দেশবাসীর ভাগ্য গড়তেই দেশে ফিরে এসেছি। এখন শুধু নির্বাচন করতে চাই। এ কারণে তারা ২০০৮ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য হয়েছিল।’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমাদের শিক্ষার মান অনেক উন্নত হয়েছে। আরও উন্নত করে আমরা বিশ্বমানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চাই।’ শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগে বিশ্বের সঙ্গে মানিয়ে নিতে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে যোগ্য করে তোলার জন্য আমরা সব ধরনের সম্ভাব্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। শিক্ষাকে বহুমাত্রিক করার উদ্যোগের অংশ হিসাবে প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয়, চারটি বিভাগীয় সদরে চারটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামিক আরবি বিশ্ববিদ্যালয়, ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়, এরোস্পেস ও এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয় এবং মেডিকেল কলেজের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের আগে দেশে ও বিদেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ কর্মী হিসাবে গড়ে তুলতে চাই। আমাদের শিক্ষার্থীরা যাতে এক ধাপ এগিয়ে থাকতে পারে সেজন্য ন্যানো-টেকনোলজি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং অন্যান্য বিষয়ে শিক্ষা লাভের সুযোগ তৈরি করতে আমরা ৩৯টি হাইটেক পার্ক, কম্পিউটার ইনকিউবেশন ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন করেছি।’
অধ্যক্ষ ও শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তরুণদের এমনভাবে শিক্ষা দিন যাতে তারা স্বাধীন বাংলাদেশের যোগ্য নাগরিক হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকের প্রজন্ম আগামীদিনের কর্ণধার হবে। তাই শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় আরও মনোযোগ দিতে হবে। দেশপ্রেমিক হতে হবে এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণে দায়িত্ব পালন করতে বলেন।’ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ১০ জন অসচ্ছল মেধাবী ও বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি প্রদান করেন। এবার মোট ১২৩৯৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে ১১২৮৫ অসচ্ছল মেধাবী এবং ১১০৯ জন বিশেষচাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থী প্রায় ৬ কোটি ১৯ লাখ ৭০ হাজার টাকার বৃত্তি পেয়েছেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আইসিটি মাস্টার প্ল্যানসহ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্পের ফলক উন্মোচন এবং তালিকায় স্বাক্ষর করেন।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। অধ্যক্ষদের পক্ষে কুমিল্লার সেলিম সোনার বাংলা কলেজের আবু সালেক মোহাম্মদ সৌরভ এবং রাজশাহী সরকারি মহিলা কলেজের জুবাইদা আয়েশা সিদ্দিকা বক্তব্য দেন। দুজন বৃত্তিগ্রহীতা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা, অবকাঠামো ও ডিজিটাল কানেকটিভিটিসহ সার্বিক উন্নয়নে সাড়ে ১৪ বছর আগের তুলনায় আজকের বাংলাদেশ বদলে গেছে। ১৪ বছর আগের দিকে তাকালে এবং এখন প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক উন্নয়ন দেখে বাংলাদেশের তুলনা করা যায়।’