Home সারাদেশ জয়পুরহাটে ১৯ হিমাগারে আলুর বিশাল মজুত, বাজারে সংকট
জুলাই ১০, ২০২৩

জয়পুরহাটে ১৯ হিমাগারে আলুর বিশাল মজুত, বাজারে সংকট

জয়পুরহাটের হিমাগারগুলোতে বিপুল পরিমাণ আলু মজুত থাকলেও বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা। বিভিন্ন কাঁচাদ্রব্যের দামের পর এবার আলুর দামে কারসাজিতে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। এক মাস আগেও জয়পুরহাটের বিভিন্ন বাজারে অ্যাস্টেরিক, কার্ডিনাল ও ডায়মন্ড জাতের প্রতি কেজি আলুর খুচরা মূল্য ছিল ৩০ টাকা। সেই আলু এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজিতে। আবার দেশি পাকড়ি (লাল গুটি) আলু ৪০ টাকার স্থলে এখন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজিতে।

বাজারের খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, আলুর বড় ব্যবসায়ীরা হিমাগার থেকে আলু বিক্রি না করায় বাজারে চাহিদামতো আলু মিলছে না। যার ফলে এক মাসের ব্যবধানে জয়পুরহাটের বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি আলুতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জয়পুরহাটে এবার রেকর্ড পরিমাণ আলু উৎপাদন হয়েছে। জেলায় এ বছর ৩৮ হাজার ৬২৫ হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ২৪ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। মৌসুম শেষে জেলার ১৯টি হিমাগারে ব্যবসায়ী ও কৃষকরা এবার আলু সংরক্ষণ করেছেন এক লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। চলতি জুলাই মাসের ১০ তারিখ পর্যন্ত যার মজুদের পরিমাণ এক লাখ ২৫ হাজার ৮৮০ মেট্রিক টন।

জেলায় আলুর চাহিদা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। খাদ্যে উদ্বৃত্ত এ জেলায় উৎপাদিত উদ্বৃত্ত আলু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় এমনকি বিদেশেও বিক্রি করা হয়। এলাকার অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষক আলু উৎপাদনের পর তা বিক্রি করেন। আর ব্যবসায়ীরা তা কিনে হিমাগারে মজুদ করেন। বর্তমানে কৃষকের ঘরে কোনো আলুর মজুদ নেই। তাই হিমাগার থেকে সীমিতভাবে সরবরাহ হওয়া আলু এখন বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় আলুর দাম বেড়েই চলেছে।

এবার হিমাগার ভাড়াসহ ৬০ কেজির প্রতি বস্তা অ্যাস্টেরিক, ডায়মন্ড ও কার্ডিনাল আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করতে খরচ হয়েছে এক হাজার থেকে ১২শ টাকা। বর্তমানে হিমাগারে সেই আলু বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৭৫০ টাকায়। আর দেশি পাকড়ি জাতের আলু সংরক্ষণে হিমাগার ভাড়াসহ খরচ হয়েছে দেড় হাজার টাকা; যা বর্তমানে জেলার হিমাগারগুলোতে প্রতি বস্তা আলু বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার ৩০০ টাকায়। অর্থাৎ সংরক্ষণের মাত্র চার মাসের ব্যবধানে প্রতি বস্তা আলুতে ব্যবসায়ীদের লাভ টিকছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।

কালাই উপজেলার মোলামগাড়ি বাজারের আলু ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান বলেন, হিমাগারে আলু মজুত করে বিগত তিন বছর লোকসান হয়েছে। তখন আমাদের কেউ খোঁজও নিতে আসেননি। এবার আলুর দাম একটু বেশি হতেই সবাই চিৎকার শুরু করেছেন। অথচ বাজারে অন্যান্য সবজির দাম কত বেশি। সে নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই।

মোলামগাড়ি নর্থপোল কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, জেলার অধিকাংশ হিমাগারেই কৃষকের চেয়ে ব্যবসায়ীরা আলু মজুত করেন বেশি। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। বিগত তিন বছর আলুতে লোকসান হয়েছে। এবার বাজার ভালো হওয়ায় ব্যবসায়ীরা অধিক মুনাফার প্রত্যাশা করছেন। তাই এই মুহূর্তে ব্যবসায়ীরা কেউ আলু বিক্রি করছেন না। প্রতিদিন সামান্য পরিমাণ আলু হিমাগার থেকে বিক্রি হচ্ছে।

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রতন কুমার রায় বলেন, জেলার ১৯টি হিমাগারে এক লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণের পর গত কয়েক মাসে প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন বিক্রি হয়েছে। এখনো আলুর বিশাল মজুত আছে। সেই হিসেবে আলুর দাম এভাবে বেশি হওয়ার কথা নয়। আমরা বাজার মনিটর করছি। ব্যবসায়ীরা যদি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাহেলা পারভিন বলেন, জেলায় এবার প্রায় সাড়ে ৯ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এ জেলায় আলুর মোট চাহিদা ৫৫ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে জেলার ১৯টি হিমাগারে আলু মজুতের পরিমাণ এক লাখ ২৫ হাজার ৮৮০ মেট্রিক টন। আলুর কোনো ঘাটতি নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *